কৌশিক গাঁতাইত, পশ্চিম বর্ধমান: দীর্ঘ অপেক্ষাতেও অমিল ভ্যাকসিন। তাই পশ্চিম বর্ধমানের আসানসোল-কুলটির বহু বাসিন্দা ঝাড়খণ্ডের জামতাড়ায় গিয়ে ভ্যাকসিন নিয়ে এসেছেন। তাঁদের দাবি, ভিনরাজ্যে ভ্যাকসিন নিয়ে গিয়ে কোনও সমস্যাতেই পড়তে হয়নি। যথারীতি এই ইস্যু নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনীতি।
জামতাড়া! ঝাড়খণ্ডের জামতাড়া গ্যাংয়ের পাল্লায় পড়ে অ্যাকাউন্ট খালি হয়ে গেছে কতজনের। সেই জামতাড়াই এখন পশ্চিম বর্ধমানের বহু বাসিন্দার আশা-ভরসা! না...হেঁয়ালি নয়।
নিজের রাজ্যে ভ্যাকসিন পাচ্ছেন না বলে আসানসোল, কুলটির অনেকেই চলে যাচ্ছেন ঝাড়খণ্ডের জামতাড়া বা মিহিজামে।একাধিক গ্রাহকের দাবি, ঝাড়খণ্ডে গিয়ে ফাঁকায় ফাঁকায়, ঝুট-ঝামেলা ছাড়াই দিব্যি ভ্যাকসিন নিয়ে এসেছেন।বুলু বন্দ্যোপাধ্যায়, সুব্রত রায়ের মতো কুলটির বাসিন্দা ভ্যাকসিন গ্রাহকরা বলেছেন, এখানে লাইনে দাঁড়াচ্ছিলাম প্রতিদিন। ভ্যাকসিন পেলাম না। জামতাড়াতে পাওয়া যাচ্ছে শুনলাম, ওখানে গেলাম, আধার কার্ড দেখে দিয়ে দিল ভ্যাকসিন।
তবে আমাদের রাজ্যে ছবিটা একেবারেই আলাদা। পর্যাপ্ত ভ্যাকসিন অমিল। টিকাকেন্দ্রগুলিতে দেখা যাচ্ছে দীর্ঘ লাইন।হই-হট্টগোল।টিকা নিতে গিয়ে রক্ত পর্যন্ত ঝরেছে গ্রাহকের। এদিনও কাঁকসার গোপালপুর উপ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভ্যাকসিন দেওয়াকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়ায়। পুলিশের সঙ্গে বচসা, ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। স্থানীয়দের অভিযোগ, ভ্যাকসিন গ্রহীতাদের তালিকা নিয়ে স্বজনপোষণ করছে পঞ্চায়েত সমিতি। তাতে বঞ্চিত হচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এনিয়ে প্রতিবাদ জানানোয় উত্তেজনা ছড়ায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে উপ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যায় কাঁকসা থানার পুলিশ। এই অবস্থায় পশ্চিম বর্ধমান ও পুরুলিয়ার অনেকেই ঝাড়খণ্ডে গিয়ে নির্ঝঞ্ঝাটে ভ্যাকসিন নিয়ে এসেছেন।
কিন্তু, নিজের জায়গা ছেড়ে পড়শি রাজ্যে ভ্যাকসিন নিতে যাওয়ার আগ্রহ কেন? পশ্চিম বর্ধমানের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অশ্বিনীকুমার মাজি বলেছেন, ঝাড়খণ্ড আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকা, সেখানকার বহু মানুষ ভ্যাকসিন নিচ্ছেন না, তাই টিকা সহজে পাওয়া যাচ্ছে।
যথারীতি এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে রাজনীতি।কুলটির বিজেপি নেতা অমিত কুমার গড়াইয়ের অভিযোগ, টিএমসি ভ্যাকসিন নিয়ে দুর্নীতি করছে, তাই লোকজন বাধ্য হয়ে পাশের রাজ্যে চলে যাচ্ছে ভ্যাকসিন নিতে।
পাল্টা কুলটি যুব তৃণমূলের ব্লক সভাপতি শুভাশিস মুখোপাধ্যায় প্রশ্ন তুলেছেন, কেন্দ্র পশ্চিমবঙ্গকে সাপ্লাই দিচ্ছে ঠিকমতো? গুজরাতে যে পরিমাণ দিচ্ছে, সেটা এখানে কেন নয়?
চোখ রাঙাচ্ছে করোনার থার্ড ওয়েভের আশঙ্কা। তারই মধ্যে ভ্যাকসিন নিয়ে চলছে টানাপোড়েন।