পূর্ণেন্দু সিংহ, বাঁকুড়া : সেই চেনা ঘর, সেই সংসার। নিজেদের হাতে তিলে তিলে গড়ে তোলা জায়গায় টানা দেড় বছর পর ঘরে ফেরা। বয়সের ভারে নুইয়ে পড়েছে শরীর, কিন্তু মুখে এদিন স্বস্তির হাসি। অভিযোগ, ছেলে-বৌমার অত্যাচারে ছাড়তে হয়েছিল নিজের বাড়ি। দেড় বছর পর হাইকোর্টের নির্দেশে বাড়ি ফিরলেন প্রবীণ দম্পতি।


অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী বুরহান আলি ও তাঁর স্ত্রী মমতাজ বেগমের অভিযোগ, কয়েকবছর আগে ছেলে আসমান আলি বিয়ে হয়। তারপর থেকেই সম্পত্তি লিখে দেওয়ার দাবিতে তাঁদের জীবন দুর্বিসহ করে তোলেন ছেলে ও বৌমা। অভিযোগ, তাদের ব্যবহারের জলের লাইন কেটে দেওয়া হয়। বাধা দেওয়া হয় শৌচাগার ব্যবহারে। এমনকি খুনের হুমকি পর্যন্ত দেওয়া হয়। নিজের বাড়ি ছেড়ে পুরুলিয়ায় মেয়ের বাড়িতে থাকতে শুরু করেন দম্পতি। কিন্তু মনে মনে পণ করেছিলেন বাড়ি ফিরতেই হবে।


সেই থেকে লড়াই শুরু। অভিযোগ দায়ের করেন বাঁকুড়া সদর থানায়। দারস্থ হন কলকাতা হাইকোর্টের। গত ১৭ জুন পুত্র ও পুত্রবধূকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। হাইকোর্টের নির্দেশ মতো সোমবার পুলিশের হাত ধরেই বাড়িতে ঢুকলেন দম্পতি। ঘরে ফিরে গৃহকর্তা বুরহান আলি বলেছেন, 'বলত সব কিছু সই করে দাও নাহলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাও! ছেলে বৌমা অত্যাচার করত। কোর্টের রায়ে খুশি।' আর গৃহকর্তী মুমতাজ বেগমের কথায়, 'বাড়ি ফিরে ভালো লাগছে। ছেলে বৌমা অত্যাচার করত। ভাগ্যিস মেয়ে ছিল ওর বাড়িতে ছিলাম।'


বাঁকুড়া সদরের সার্কেল ইন্সপেক্টর অমিত হাতি বলেছেন, 'হাইকোর্টের নির্দেশে বাড়ি ফেরানো হল, পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল বাড়িতে।' এদিকে বৃদ্ধ বাবা-মা বাড়িতে ফেরায় খুশি বুরহান-মুমতাজ কন্যা শম্পা বেগম। তিনি বলেছেন, 'বাবা মা কে নিজের বাড়িতে ফিরিয়ে দিতে পেরে খুশি, ভালো লাগছে।' পাশাপাশি হাইকোর্টের এই সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে বলেও মনে করেন তিনি। এদিকে, অভিযুক্ত ছেলে-বৌমার সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।