বরানগর: বরানগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভ্যাকসিনের জন্য আজও লম্বা লাইন। ৩ দিন পরেও লাইনে ভ্যাকসিনের অপেক্ষায় সাধারণ মানুষ। তাদের অভিযোগ ভিতর থেকে অনেকে ভ্যাকসিন পেয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু তিনদিন ধরে লাইনে দাঁড়িয়েও পাওয়া যাচ্ছে না ভ্যাকসিন। তাঁদের দাবি, হয় ভ্যাকসিন দেওয়া হোক, নাহলে দিতে হবে কুপন। এই ঘটনা ঘিরে উত্তেজনা ছড়িয়েছে হাসপাতাল চত্বরে। পরিস্থিতি সামাল দিতে রয়েছে পুলিশ বাহিনী। হাসপাতালের সুপার অভিযোগ নিয়ে এখনই মুখ খুলতে রাজি হননি।
ভ্যাকসিনের আকাল। ক্লিনিকে, হাসপাতালে দীর্ঘ লাইন। ভ্যাকসিন না মেলায় ক্ষোভ-বিক্ষোভের ছবি ফের ধরা পড়ল বরানগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে। গতকালই গ্রাহকের অভিযোগ ছিল, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে পালা করে টানা তিনদিন লাইনে দাঁড়িয়ে থাকলেও মেলেনি ভ্যাকসিন। এ নিয়ে হাসপাতাল সুপারের প্রতিক্রিয়া মেলেনি। এই ইস্যুতে তরজায় জড়িয়েছে তৃণমূল ও বিজেপি।
গতকাল রিনা সাঁতরা নামে এক ভ্যাকসিন গ্রাহক অভিযোগ করেন,শুক্রবার থেকে লাইন দিচ্ছি। এখনও ভ্যাকসিন পেলাম না।
রাজ্যে ভ্যাকসিন সঙ্কটের চিত্রটা ফের একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে বরানগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালের এই ঘটনা। অভিযোগ, এখানে ভ্যাকসিন পেতে টানা তিন দিন বা তার বেশি সময় লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন গ্রাহকদের একাংশ। গ্রাহকদের অভিযোগ, এই হাসপাতাল থেকে কোনওদিন ৭০ জন, কোনওদিন ১০০ জনকে ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে। ফলে দীর্ঘ লাইনের যাঁরা পিছনের দিকে রয়েছেন, তাঁরা সুযোগই পাচ্ছেন না। গতকাল এক ভ্যাকসিন গ্রাহক অভিযোগ করেন যে, লাইনে এগিয়ে গেলে দেখছি, নতুন লোক ঢুকে যাচ্ছে। আবার পিছিয়ে পড়ছি।
তাই এই পরিস্থিতি এড়াতে, রবিবার ভ্যাকসিন দেওয়ার কথা না থাকলেও, লাইন ছাড়তে নারাজ ছিলেন গ্রাহকদের একাংশ। কিন্তু কেন এই পরিস্থিতি? এ বিষয়ে জানতে গতকাল হাসপাতালের সুপারকে ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
যদিও ভ্যাকসিনের জোগানের অপ্রতুলতাকেই দায়ী করেছেন হাসপাতালের রোগীকল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান ও স্থানীয় বিধায়ক তাপস রায়। গতকাল তিনি বলেন, ভ্যাকসিনের ব্যাপারে মনিটরিং করছি। ভ্যাকসিনের জোগান না থাকলে কী করব? সুপারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি।
শনিবারই রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় ভ্যাকসিন না মেলায় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। উত্তর দিনাজপুরে হাতাহাতি এমনকি ইটবৃষ্টিও দেখা যায়। এই পরিস্থিতিতে ভ্যাকসিনের অপ্রতুলতা নিয়ে তরজায় জড়িয়েছে তৃণমূল ও বিজেপি।
বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, সরকার বলছে না তাদের হাতে কত ভ্যাকসিন আছে। জুলাইয়ে ৯০ লক্ষ ৭০ হাজার ভ্যাকসিন এসেছে। ডিস্ট্রিবিউশনের কী ব্যবস্থা করেছে? মনে হয় অনেক ভ্যাকসিন নষ্ট হচ্ছে....মানুষের জানার অধিকার আছে, কত ভ্যাকসিন আসছে, কত দেওয়া হচ্ছে আর কত নষ্ট হচ্ছে।
অন্যদিকে, তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় বলেছেন, কেন্দ্র প্রয়োজন মতো ভ্যাকসিন সরবরাহ করছে না।
ভ্যাকসিনের চাহিদা ও জোগান প্রসঙ্গে রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তার দাবি, বর্তমান পরিকাঠামোয় প্রতি মাসে দেড় কোটি ডোজ ভ্যাকসিন দিতে সক্ষম রাজ্য। কিন্তু একমাত্র বাধা হল সময় মতো পর্যাপ্ত ভ্যাকসিন না পাওয়া। এখনও পর্যন্ত কেন্দ্রের তরফে ২ কোটি ৩৬ লক্ষ ভ্যাকসিনের ডোজ মিলেছে। রাজ্য কিনেছে প্রায় ১৮ লক্ষ ডোজ। চলতি মাসে ৭৫ লক্ষ ডোজ পাওয়ার কথা থাকলেও, মিলেছে ৫৪ লক্ষ।রাজ্যে কোভ্যাক্সিনের ডোজ মজুত রয়েছে মাত্র এক লক্ষ। এখনও পর্যন্ত ১৮ থেকে ৪৪ বছর বয়সীদের মধ্যে ভ্যাকসিন পেয়েছেন ৮৭ লক্ষ।৪৫ থেকে ৬০ বছর বয়সীরা পেয়েছেন ১ কোটি ৬ লক্ষ।এবং ষাটের ঊর্ধ্বে ভ্যাকসিন পেয়েছেন সাড়ে ৮৩ লক্ষ রাজ্যবাসী।