মেদিনীপুর: মেদিনীপুর শহরে বিজেপির কৃষক কল্যাণ সমাবেশে যোগ দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কৃষকদের উৎপাদিত শস্যের সহায়ক মূল্য বাড়ানোর কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের পর বিজেপি প্রধানমন্ত্রীকে দেশজুড়ে সংবর্ধনা দেওয়ার উদ্যোগ নেয়। এই উদ্যোগেরই অংশ হিসেবে আজ মেদিনীপুর কলেজ ময়দানে নরেন্দ্র মোদীকে সংবর্ধনা দেয় রাজ্য বিজেপি। কৃষকরা তাঁকে স্মারকলিপি দেবেন, শিলিগুড়িতে আনারস গবেষণা কেন্দ্র তৈরির আবেদনও জানানো হবে। মোদী সরকারকে ‘কৃষক বিরোধী’ আখ্যা দিয়ে বিরোধীদের দেশজুড়ে প্রচারকে ভোঁতা করতেই বিজেপির এই উদ্যোগ। এরই মধ্যে এই সভায় প্যান্ডেল ভেঙে পড়ে ৯১ জন আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাঁদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাঁদের দেখতে মেদিনীপুর হাসপাতালে যান মোদী। তিনি আহতদের সঙ্গে কথা বলেন।


হেলিকপ্টারে মেদিনীপুরে পৌঁছনোর পর সড়কপথে সভাস্থলে পৌঁছন মোদী। তাঁকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এরপর বাংলায় ভাষণ শুরু করেন মোদী। তিনি বলেন, ‘এই বিশাল জনসমাবেশ দেখে আমি খুশি। এখানে আসার পথে জনজোয়ার দেখি বিস্মিত হয়েছি। বৃষ্টির মধ্যেও রাস্তায় অসংখ্য মানুষ দাঁড়িয়েছিলেন। আমাকে স্বাগত জানাতে করজোড়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি লাগানো হয়েছে। এর জন্য আমি তাঁর কাছে কৃতজ্ঞ। আমাকে স্বাগত জানাতে পোস্টার-ব্যানার লাগাতে হয়েছে, হাতজোড় করে অভ্যর্থনা জানাতে হয়েছে। এর জন্য তৃণমূল কংগ্রেস ও মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ। শিক্ষা-সমাজ সংস্কার সব জায়গাতেই মেদিনীপুরের অবদান। নতুন ভারতের স্বপ্নপূরণ করতে এগিয়ে এসেছে দেশবাসী। আমার সরকার জনগণের সরকার। ক্ষমতায় এসে চটের দাম বাড়িয়েছে বিজেপি। এর ফলে বাংলা উপকৃত হয়েছে। বিজেপি কৃষকদের জন্য সহায়ক মূল্য বাড়িয়েছে। বিজেপির আগে কেউ কৃষকদের কথা এত ভাবেনি। বিজেপি কৃষকদের কথা ভাবে বলেই সহায়ক মূল্য বাড়িয়েছে। আমরা ক্ষমতায় এসে বাঁশকে ঘাস আখ্যা দিয়েছি। আগের সরকার গাছ বলে বাঁশ কাটা নিষিদ্ধ করে দিয়েছিল। এখন বাঁশ কেটে বিক্রি করা যাবে। গ্রামের উন্নয়ন না হলে শহর এগোতে পারবে না। ২০২২-এর মধ্যে কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করার পরিকল্পনা আছে। বিজেপি কৃষকদের জন্য এত কাজ করেছে যে তৃণমূলও স্বাগত জানিয়েছে।’

তৃণমূল কংগ্রেসকে আক্রমণ করে মোদী বলেছেন, ‘বাংলায় আলুর ফলন ভাল হয়। তারপর কী হয় জানি। বন্যায় আলু নষ্ট হচ্ছে। পর্যাপ্ত হিমঘর নেই। বাংলার যুবকরা চাকরি পাচ্ছে না। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের হাল দেখতে পাচ্ছি। বিরোধীদের হত্যা করার জন্য সিন্ডিকেট। কে কোথা থেকে বালি, সিমেন্ট কিনবে সেটা ঠিক করে সিন্ডিকেট। সবরকমের বেআইনি কাজে যুক্ত সিন্ডিকেট। মা-মাটি-মানুষের সরকারের আসল ছবি সিন্ডিকেট। স্কুল-হাসপাতাল যাই হোক না কেন, সিন্ডিকেট ছাড়া হয় না। বাম শাসনের চেয়েও বাংলায় এখন খারাপ অবস্থা। ছোট বা বড় ব্যবসায়ী সবাই সিন্ডিকেটের অধীনে। ভোটব্যাঙ্কের জন্য সিন্ডিকেট ব্যবহার করা হচ্ছে। এখানে সিন্ডিকেটের ইচ্ছাতেই সব হয়। বামপন্থীদের সরিয়ে এই বিপদই কি আপনারা চেয়েছিলেন? রাজনৈতিক সিন্ডিকেট ভোটব্যাঙ্কের জন্য বাংলাকে অপমান করছে। পঞ্চায়েত ভোটে বেলাগাম সন্ত্রাস হয়েছে। এখানে দলিত বাবা-মার সন্তানদের হত্যা করা হয়েছে। বাংলায় গণতন্ত্রকে ধ্বংস করা হয়েছে। বামেদের সরাতে সময় লেগেছে। এবার কয়েক মাসের মধ্যেই জুলুম থেকে মুক্তি। সাহস থাকলে সিন্ডিকেটও নড়ে যায়।’