কলকাতা: রক্তমাখা গণতন্ত্রের উৎসব। প্রাণহানি থেকে অঙ্গহানি। চতুর্থ দফায় বাদ পড়ল না কিছুই। কোথাও গেল প্রাণ! কোথাও গেল কান! তবে এরই মধ্যে লড়াইয়ের দুই মুখ দেখল গোটা বাংলা। ভোট সন্ত্রাসের আবহে কোথাও যেন মিলেমিশে গেলেন চাকদার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক বিকাশচন্দ্র মৈত্র এবং কাশীপুরের ক্যান্সার আক্রান্ত যুবক প্রবীর হালদার।


সপরিবারে আক্রান্ত হয়েও, ফের বুথে গেলেন নদিয়ার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক বিকাশবাবু।

অন্যদিকে, শাসকের চোখরাঙানিতে পিছু না হটে নিজের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করলেন কলকাতার ক্যান্সার আক্রান্ত এ যুবক প্রবীরও।

 

কর্মজীবন কেটেছে মানুষ গড়ার কাজে। অবসর জীবনে দেশ গড়ার কাজে সামিল হতে যাচ্ছিলেন। সঙ্গে ছিলেন শিক্ষিকা স্ত্রী ও মেয়ে। অপরাধ এটুকুই!

অভিযোগ, চাকদা কলেজে বুথে যাওয়ার পথেই আক্রান্ত হতে হয় এই পরিবারকে।

বেধড়ক মারের পরেও দমেনি দুষ্কৃতীরা। শুনতে হয়েছে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারার হুমকি!

 

পাড়ার চেনা মুখগুলো ভোটেরদিন হঠাৎই অচেনা হয়ে উঠল। অন্যদিন যাঁরা হাসিমুখে খোঁজখবর নিতেন, সেই তাঁদের মুখ থেকেই ছুটে আসা অশ্রাব্য গালিগালাজ সহ্য করতে হল এই শিক্ষিকাকেও। শিক্ষক স্বামীর মতোই তিনি এবং তাঁর মেয়েও দেখলেন এই বীভৎস ছবি। অভিযুক্ত সেই তৃণমূল।

শাসক স্বাভাবিকভাবেই এই অভিযোগ অস্বীকার করলেও, চাকদার ঘটনা যে কোনও বিচ্ছিন্ন বিষয় নয়, তা প্রমাণিত হল এ শহরের এই ছবিতে।

 

শরীরে মারণ ক্যানসার। কদিন আগেই ক’দিন আগেই অস্ত্রোপচার হয়েছে। কিন্তু অশক্ত শরীরেই ছুটে গিয়েছিলেন বুথে। ভোট দিতে। কিন্তু, সেখানেও তো সিস্টেমে দানা বেধে মারণ রোগ। অভিযোগ, হুমকির মুখে প্রথমটা বীরপাড়া কেএমসি স্কুলের বুথ থেকে ফিরতে আসতে হয় এই যুবককে।

 

কিন্তু, ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যাওয়া এই যুবক অধিকারের এই লড়াইয়ে হার মানেননি। হুমকির মুখে বাড়ি চলে আসেননি। ফের গিয়েছেন। মাটি কামড়ে দাঁড়িয়ে থেকেছেন। শেষপর্যন্ত ভোট দিয়েছেন। হার মানতে হয়েছে দুষ্কৃতীদের। কাশীপুরের এই যুবকের অদম্য মনোবলের কথা জানতে না পারলেও, নিজেরাই সাহস জোগাড় করে ফের বুথমুখী হয়েছেন চাকদার এই পরিবার। নড়েচড়ে বসতে হয়েছে নির্বাচন কমিশনকেও। তাঁদের বাড়িতে পৌঁছেছেন সেক্টর অফিসার। শেষপর্যন্ত ভোট দিয়েছেন শিক্ষক-দম্পতি। ক্ষতবিক্ষত হয়েও শিক্ষা দিলেন গোটা সমাজকে।