কলকাতা: বিধানসভা ভোটের ফল ঘোষণার পর রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় অশান্তি। বিজেপির অভিযোগ, তাদের অন্তত ৬ জন কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে।


তৃণমূলের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগে বুধবার দেশজুড়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করার ডাক দিয়েছে বিজেপি। এই পরিস্থিতিতে আজ, মঙ্গলবার, দুদিনের সফরে রাজ্যে আসছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা। আক্রান্ত বিজেপি কর্মীদের সঙ্গে দেখা করবেন তিনি। 


গেরুয়া শিবির সূত্রে খবর, এদিন দুপুর দেড়টা নাগাদ কলকাতা বিমানবন্দরে নামবেন নাড্ডা। সেখান থেকে সরাসরি যাবেন নিহত দলীয় কর্মীদের বাড়িতে। সেখানে পরিবারের সঙ্গে দেখা করবেন তিনি।


প্রথমে দুপুর তিনটে নাগাদ নাড্ডা যাবেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার সোনারপুরে নিহত দলীয় কর্মীর বাড়িতে। সেখানে পরিবারের সঙ্গে দেখা করবেন। এরপর সাড়ে চারটে নাগাদ তিনি যাবেন বেলেঘাটা। সেখানেও নিহত দলীয় কর্মীর পরিবারের সঙ্গে দেখা করবেন বিজেপি সর্বভারতীয় সভাপতি। 


ইতিমধ্যেই, ভোট-পরবর্তী হিংসা নিয়ে সোমবারই পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছ থেকে বিস্তারিত রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। শান্তি বজায় রাখার আবেদন জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শান্তির আবেদন করেন রাজ্যপালও। 


 দলীয় কর্মীদের নিহত হওয়ার ঘটনায় ট্যুইট করে হুমকি দেন বিজেপির সাংসদ পরভেশ সাহিব সিংহ। বলেন, নির্বাচনে জিতেই তৃণমূলের গুন্ডারা আমাদের কর্মীদের খুন করছে। বিজেপি কর্মীদের গাড়ি ভাঙচুর করা হচ্ছে, ঘরে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে।  খেয়াল রাখবেন, তৃণমূলের সাংসদ, মুখ্যমন্ত্রী, বিধায়কদের কিন্তু দিল্লি আসতে হবে। আমি আপনাদের সতর্ক করছি। নির্বাচনে হার-জিত হতে পারে কিন্তু খুন নয়। 


রবিবার ঘোষিত হয়েছে বিধানসভা নির্বাচনের ফল। বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে রাজ্যে টানা তৃতীয়বার ক্ষমতা ধরে রাখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস। 


কিন্তু, বিধানসভা ভোটের ফল ঘোষণার পর কয়েকটি জায়গা থেকে অশান্তির খবর সামনে আসতে শুরু করে। নদিয়ার গাংনাপুর, কোচবিহারের সিতাই ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার সোনারপুরে  দলীয় কর্মীর মৃত্যুর ঘটনায় তৃণমূলের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছে বিজেপি।


দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, আমাদের ৬ জন কর্মীকে খুন করা হয়েছে। জেলায় জেলায় আমাদের কর্মীদের বাড়ি ভাঙচুর হচ্ছে। 


এদিকে, পূর্ব বর্ধমানের রায়না ও হুগলির খানাকুলে বিজেপির বিরুদ্ধে তৃণমূলের দুই নেতা-কর্মীকে খুনের অভিযোগ উঠেছে। পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরে তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষে মৃত্যু হয়েছে দুই তৃণমূল কর্মী ও এক বিজেপি সমর্থকের। 


তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, পূর্ব বর্ধমানে আমাদের কর্মীদের খুন করা হয়েছে। বিজেপি অত্যাচার এখনও চালিয়ে যাচ্ছে। শীতলকুচিতেও ওরা অত্যাচার চালাচ্ছে। কোচবিহারের এসপির ইন্ধনে যা হয়েছে আপনারা জানেন।


যদিও, ভোচ-পরবর্তী হিংসা বন্ধ করতে উদ্যোগী হন মমতা। সকলকে শান্তি বজায় রাখতে আহ্বান করেন। বলেন, ভোটে হার জিত আছে। কিন্তু শান্ত থাকুন। শান্তি বজায় রাখুন। কোনও অভিযোগ থাকলে পুলিশকে জানান। পুলিশকেও বলব নিজেদের দায়িত্ব পালন করুন। 


হিংসা বন্ধে পদক্ষেপের আর্জি জানিয়ে সোমবার রাজ্যপালের দ্বারস্থ হয় বিজেপির একটি প্রতিনিধি দল। সন্ধেয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও রাজভবনে যান। তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতের পর রাজ্যপাল ট্যুইট করে জানান, একঘণ্টার বেশি সময় ধরে বৈঠকে আমি যে বিষয়টির ওপর জোর দিয়েছি, তা হল ভোট-পরবর্তী হিংসা থামাতে রাজ্য সরকার কী পদক্ষেপ নিচ্ছে। 


রাজ্য পুলিশের ডিজি এবং কলকাতা পুলিশের কমিশনারকেও রাজভবনে ডেকে পাঠান জগদীপ ধনকড়। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে যে অশান্তির ঘটনা ঘটেছে এবং তা নিয়ন্ত্রণে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, জানতে চেয়ে রাজ্য সরকারের কাছে রিপোর্ট চেয়েছেন বলেও ট্যুইটারে জানান তিনি।