হাওড়া, কলকাতা ও নয়াদিল্লি: রাজস্থান, গুজরাতের পর এবার দিল্লি। হিরের কাজ করতে যাওয়া হাওড়ার যুবকের রহস্যমৃত্যু। আত্মহত্যার তত্ত্ব খারিজ পরিবারের।
ডোমজুড়ের ঠাকুরদাস মাজি, দিল্লির করোলবাগে একটি কারখানায় গয়নায় হিরে বসানোর কাজ করতেন। পরিবারের দাবি, শুক্রবারও বাড়িতে ফোন করেন বছর তিরিশের এই যুবক। কিন্তু শনিবার তাঁরা জানতে পারেন, দিল্লির ভাড়াবাড়ি থেকে ঠাকুরদাসের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। পরিজনদের দাবি, যুবককে খুন করা হয়েছে।
মৃতের মা সুনীতা মাজি বলেন, শুক্রবার ফোনে বলল ১০ হাজার টাকা পাঠাব। ঘর হচ্ছিল। শনিবার ভাড়াবাড়ি থেকে ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার। রুমমেট ভাইকে জানায়। ভাই মুম্বই থেকে দিল্লি যায় রবিবার। এটা খুন। মৃতের ভাই দেবদাস মাজি বলেন, পা মাটিতে ঠেকে ছিল, কী করে আত্মহত্যা? এটা খুন।
পাকা ঘর তৈরি করে, সেখানে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখেছিলেন ডোমজুড়ের ঠাকুরদাস। তাঁর বিয়ের জন্য চলছিল দেখাশোনা। কিন্তু, হঠাৎ‍ই সব শেষ।
মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য আগেই, ভিন রাজ্যে কর্মরত প্রবাসীদের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন। বলেছেন, যারা ভয় পাচ্ছেন ফিরে আসুন। সরকার ৫০ হাজার করে দেবে।
এদিনই পরপর ভিনরাজ্যে বাঙালির রহস্যমৃত্যুর ইস্যু নিয়ে বিজেপিকে নিশানা করে সংসদ চত্বরে ধরনা দেয় তৃণমূল। কংগ্রেসের পর, সংসদ চত্বরে গাঁধী মূর্তির পাদদেশে বুধবার ধরনায় বসেন তৃণমূল সাংসদরা। ভিনরাজ্যে কর্মরত বাঙালিদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার দাবি ওঠে সেখানে।
লোকসভার দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, গুজরাত, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশে প্রচুর মানুষ কাজ করতে যাচ্ছে। সেখানকার পুলিশ নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। অথচ আমাদের রাজ্যে ভিনরাজ্যের লোকজন শান্তিতে আছে। মোদী সরকারকে মুখ খুলতে হবে।
কর্মসূত্রে ভিনরাজ্যে থাকা বাঙালিদের নিরাপত্তার বিষয়টি বুধবার সংসদের দুই কক্ষেই তোলে তৃণমূল। আলোচনা চেয়ে রাজ্যসভায় নোটিসও দেওয়া হয়। সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়ের দাবি, নোটিস দেওয়া সত্ত্বেও তাঁকে বলতে দেওয়া হয়নি।
রাজ্যের ক্রেতাসুরক্ষা মন্ত্রী সাধন পাণ্ডের অভিযোগ, বিজেপি ন্যাশনাল ইনটিগ্রিটিকে নষ্ট করছে। এখন ন্যাশানাল ইনটিগ্রেশনের প্রোগ্রাম হচ্ছে না। সাম্প্রদায়িক বিভেদকামী শক্তি মাথাছাড়া দিচ্ছে। থানায় জানিয়ে যান, কোথায় যাচ্ছেন।
যদিও, যাবতীয় অভিযোগ খারিজ করেছে বিজেপি। দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, আমরা তো বলছি বামফ্রন্টের অভাবে শুরু হয়েছিল। মমতার আমলেও কর্মহীন। কাজ পাচ্ছে না বাইরে যাচ্ছে। অবশ্যই বিরোধিতা করতে হবে। কিন্তু কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করুন। ফিরিয়ে আনুন।
গুজরাতে কাজ করতে যাওয়া আলিপুরদুয়ারের যুবক মধু সরকারকেও খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে পরিবার। ঘটনার প্রতিবাদে কলকাতার হাজরা মোড়ে বিক্ষোভ দেখায় কংগ্রেস। ভবানীপুর থানায় স্মারকলিপি দেন বিক্ষোভকারীরা।
প্রসঙ্গত, বছর বাইশের মধু ছিলেন পরিবারের একমাত্র রোজগেরে। সামনেই ছিল বোনের বিয়ে। টাকা জমিয়েছিলেন দাদা। এরমধ্যেই গুজরাত থেকে এল দুঃসংবাদ। এক্ষেত্রেও উঠেছে খুনের অভিযোগ।
মৃতের বোন সুস্মিতা সরকার বলেন, বাইরে কাজে গিয়ে যদি এই অবস্থা হয়, তাহলে কোনও দাদা আর যাবে না বাইরে। কারও দাদা যাক চাই না। যারা খুন করেছে তাদের শাস্তি দেখতে চাই। মৃতের আত্মীয় অঞ্জলী বর্মনের প্রশ্ন, প্রধানমন্ত্রীর জায়গায় যদি এই অবস্থা হয়, তাহলে অন্যান্য জায়গায় কী হবে।
মধুর এক বোন ও এক ভাই। রোজগেরে ছেলেকে হারিয়ে, বাকি দুই সন্তানকে নিয়ে কী করবেন ভেবে পাচ্ছেন না মৃত যুবকের মা। তাঁর সঙ্গে দেখা করে পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন স্থানীয় বিধায়ক তৃণমূলের সৌরভ চক্রবর্তী।
সরকার আশ্বাস দিচ্ছে। কিন্তু, পুরোপুরি চিন্তামুক্ত হতে পারছে না ভিন রাজ্যে কর্মরত বঙ্গ সন্তানদের পরিবার। তাদের চিন্তা আরও বাড়াল গুজরাত এবং দিল্লির ঘটনা।