কলকাতা: দুঃসময়ে চেনা যায় আসল বন্ধুকে। করোনার এই সঙ্কটকালে অনেকেই বাড়িয়ে দিচ্ছেন বন্ধুত্বের হাত। আবার অনেকেই, সেই বন্ধুত্বকে মুখোশ পরে ছড়িয়ে দিচ্ছে প্রতারণার জাল। বিপদের দিনের বন্ধুর বেশে লুকিয়ে প্রতারক। 


মহামারীর প্রকোপে যখন ছারখার গোটা দেশ। একদিনে ভারতের বুকে রেকর্ড মৃত্যু। সর্বনাশা মৃত্যুমিছিল আড়াই লক্ষ পার। চারদিকে অক্সিজেনের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছে বহু মানুষ। 


তখন সোশ্যাল মিডিয়াতেও ছড়িয়ে পড়েছে শয়ে শয়ে ফোন নম্বর। কোথায় মিলবে অক্সিজেন সিলিন্ডার? কে বাড়িতে পৌঁছে দেবেন অক্সিজেনের ক্যান?


এরকম নানা লিঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপে। আর, সাহায্যের এই মোড়কের আড়ালেই লুকিয়ে রয়েছে প্রতারণার ফাঁদ। সোশাল মিডিয়ায় এ ধরনের হাতছানিতে সাড়া দিলেই ধেয়ে আসছে বিপদ।


বিপদের সময় অক্সিজেন সিলিন্ডার বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে অগ্রিম টাকা নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু, টাকা নিলেও, দেওয়া হচ্ছে না সিলিন্ডার। এই প্রতারণা চক্রের ফাঁদে পড়ছেন বহু মানুষই। 


যেমন কসবার বাসিন্দা সুদীপ্ত বন্দ্যোপাধ্যায়। সস্ত্রীক করোনা আক্রান্ত হন। স্ত্রীর অক্সিজেন স্যাচুরেশন কমে যায়। সোশ্যাল মিডিয়ায় পাওয়া ভেরিফায়েড লিড বলে দেওয়া নম্বর থেকে এক ব্যক্তিকে ফোন করেন। ধাপে ধাপে ২৪ হাজার টাকা নিলেও, সিলিন্ডার পাননি বলে অভিযোগ।


একইরকম ভাবে প্রতারিত হয়েছেন ফুলবাগানের বাসিন্দা শান্তনু বিশ্বাস। তাঁরও দাবি, সোশাল মিডিয়ায় নম্বর পেয়ে যোগাযোগ করে, ১২ হাজার টাকা দিয়েছিলেন, কিন্তু, কোনও অক্সিজেন পাননি। তিনি বলেন, ভেরিফায়েড লিঙ্ক থেকে নম্বর পাই। প্রথমে বলে হাফ টাকা দিতে হবে, তারপর বলে পুরো টাকা দিতে হবে। এরপর আরও এক জায়গায় ফোন করি। সেখান থেকেও যে অ্যাকাউন্ট নম্বরটি পাঠায় সেটি আগেরটিই।


কাঁকুড়গাছির কয়েকজন যুকক একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা তৈরি করে এই ধরনের লিঙ্ক সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেছিল। পরে জানা যায়, সেই লিঙ্কের সূত্রেই কয়েকজন প্রতারিত হয়েছেন। এরপর এই যুবকরা নিজেদের উদ্যোগে কলকাতা পুলিশের সাইবার ক্রাইম সেলে অভিযোগ করছেন।


এপ্রসঙ্গে সাইবার বিশেষজ্ঞ ও আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায় বলেন, ভেরিফায়েড লিঙ্কগুলো কে ভেরিফাই করছে, জামতাড়া গ্যাঙের থেকেও বড় স্ক্যাম হয়ে যাবে।


শুধু কলকাতায় নয়। অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহের নামে প্রতারণার অভিযোগে সোমবার উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ থেকে ২ জনকে গ্রেফতার করেছে দিল্লি পুলিশের সাইবার ক্রাইম সেল। বনগাঁয় বসে তাঁরা দিল্লিতে প্রতারণা করেছেন বলে অভিযোগ।