দার্জিলিং: কোথায় লুকিয়ে বিমল গুরুঙ্গ? হন্যে হয়ে খুঁজছে পুলিশ। এরই মাঝে গোপন ডেরা থেকে ফের অডিও বার্তা প্রকাশ করলেন মোর্চা সভাপতি। গুরুঙ্গের দাবি, তিনি প্রকাশ্যে আসবেন। ৩০ অক্টোবরই তাঁর জনসমক্ষে আসার কথা ছিল। কিন্তু সেটা আটকাতেই পশ্চিমবঙ্গ সরকার ষড়যন্ত্র করল।
গুরুঙ্গের এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন পর্যটনমন্ত্রী । তাঁর অডিও বার্তাকেও গুরুত্বই দিচ্ছেন না গৌতম দেব। বলেছেন, কে কোথায় কখন আসবে না আসবে, সেটা পুলিশ প্রশাসন দেখবে। বিমল গুরুঙ্গের মতো দেশদ্রোহী, সন্ত্রাসবাদীর কথার উত্তর দেওয়ার কোনও দরকার নেই। মানুষের জীবন ও সম্পত্তি ধ্বংস করেছে। তাঁর বাহিনীর হাতে একজন এসআই খুন হলেন। এরকম বহু মানুষ খুন-জখম হয়েছেন। দেশের ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। এ ধরনের সন্ত্রাসবাদীর কোনও কথায় উত্তর দেওয়া হবে না।
বিমল গুরুঙ্গের বিরুদ্ধে আগেই ইউএপিএ-তে মামলা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগও রয়েছে। ঝুলছে লুক আউট নোটিসও। তাঁকে ধরতে সিংলার জঙ্গলে অভিযানে গিয়ে পুলিশ অফিসারের মৃত্যুর ঘটনায় মোর্চা সভাপতির বিরুদ্ধে খুনের মামলাও রুজু করেছে পুলিশ।
অডিও বার্তায় পাল্টা বিমল গুরুঙ্গের দাবি, যা যা হয়েছে, যে যেখানে মারা গিয়েছে, সব কিছুই রাজ্য সরকার পরিকল্পনা করে করেছে। বিমল গুরুঙ্গকে ফাঁসানোর জন্য, মোর্চাকে বদনাম করার জন্য। আমি এবং জিএলপির সঙ্গে যুক্ত আমার অনুগামীরা ক্যাম্প করে রয়েছি - এই খবর ছড়িয়ে অভিযান চালাল রাজ্যের পুলিশ। এ সবই আমাকে মেরে গোর্খাল্যান্ডের দাবিকে শেষ করে দেওয়ার জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ষড়যন্ত্র।
মোর্চা সভাপতির ষড়যন্ত্রের তত্ত্বকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন পর্যটনমন্ত্রী। বলেছেন, আইনের চোখে গুরুং ইউএপিএ ধারায় অভিযুক্ত, সন্ত্রাসবাদী, দেশদ্রোহী। এ ধরনের পলাতক এক অভিযুক্তের কথায় কোনও গুরুত্ব দিচ্ছি না। দেশের আইনে গুরুঙ্গের বিচার হবে। যে জঙ্গলে, যে রাজ্যেই তিনি আশ্রয়ে থাকুন না কেন এবং এখান থেকে ১৪০০ কিলোমিটার দূরে দিল্লিতে যাদেরই প্রশ্রয়ে থাকুন না কেন, ল অফ দ্য ল্যান্ড তাঁকে বুক করবেই এবং দেশের আইনে সন্ত্রাসবাদী, দেশদ্রোহীর বিচার হবে।
পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, গুরুঙ্গ ভালই বুঝতে পারছেন, তাঁর এখন দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে। একদা পাহাড়ের রাজাকে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। দলের মধ্যেও সেই কর্তৃত্ব আর নেই। এই প্রেক্ষাপটে, অডিও বার্তায়, বার বার রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব খাড়া করলেন মোর্চা সভাপতি।
তাঁর এ-ও দাবি, যে সব কেএলও জঙ্গি আত্মসমর্পণ করেছে, তাদের অস্ত্র মজুত করে আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা চলছে। মোর্চাকে বদনাম করার চেষ্টা হচ্ছে। সিআরপিএফের নাম করে পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও প্রশাসন, সাধারণ মানুষের বাড়িতে আগুন লাগিয়েছে। ধন-সম্পত্তি লুঠ করেছে। এ সবই রাজ্য সরকারের ষড়যন্ত্র। আমাকে ও মোর্চাকে কালিমালিপ্ত করতে ষড়যন্ত্র করছে।
গুরুঙ্গের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে পাল্টা জবাব দিয়েছেন গৌতম দেব। বলেন, পুলিশ প্রশাসন জানে কোথা থেকে অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে, এই অস্ত্রগুলো গুরুঙের কাছে কোথা থেকে এসেছে, এবং কী ভাবে এই অস্ত্রগুলো ব্যবহৃত হয়েছে। মানুষকে খুন করার জন্য, সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের জন্য এবং একটা টেরর রাজ তৈরির জন্য বিমল গুরুঙ্গ এ ধরনের কাজ করেছে।
এদিকে, নবান্ন সূত্রে খবর, পাঁচশো কোটির পর পাহাড়ের জন্য আরও ১৩৪ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে রাজ্য সরকার। পাশাপাশি সূত্রের খবর, পাহাড়ে বনধের সময় যে সকল রাজ্য সরকারি কর্মচারী কাজে যোগ দেননি, তাঁদের বেতন ও ছুটি কাটা যাবে।