আবির ইসলাম, পাড়ুই: ছোটবেলায় খুব ইচ্ছা করত বাসে চড়তে৷ কিন্তু হয়ে উঠত না৷ কারণ টিকিট কাটার টাকাই যে অধিকাংশ সময়ে থাকত না। আবার, সাইকেলের সওয়ারিও খুব কমই হতো৷ কারণ, বাড়িতে সাইকেল বলতেও সাকূল্যে সেই একটাই ৷
ফলে,পায়ে হেঁটেই মিটেছে বেশিরভাগ প্রয়োজন৷ ছোট থেকেই ছিল মূর্তি বানানোর দিকে ঝোঁক৷ পরে সেটাই পেশা হয়ে দাঁড়ায়৷ অল্পস্বল্প বিক্রিও হতে থাকল ৷ তবে তাতে কাটেনি আর্থিক সঙ্কট৷
মূর্তি বানাতে বানাতেই শিল্পীর মাথায় এল একটু অন্য ধরনের ভাবনা৷ এবার আর শুধু মূর্তি নয়, গড়ে তোলা হলো ছোট্ট-খাট্টো একখান বাড়ি-ই৷ দেখে মনে হবে একটা বাস দাঁড়িয়ে রয়েছে। আসলে সেটি একটি বাড়ি ৷ বাড়িতে লোকজন এলে বসতে দেওয়ার জায়গা ছিল না ৷
তাই মৃৎশিল্পী বাসের আদলে বানালেন বসার ঘর। শিল্পীর বসত বাড়ির উঠোনে সেই বসার ঘর দেখতে অনেকটা আলাদা ছোট্টখাট্টো একটা বাড়ির মতোই দেখতে লাগে৷
এই বাড়ির ভিতর ও বাইরে দুই-ই একেবারে বাসের আদলে তৈরি৷ স্থানীয়দের কাছে বেশ দর্শনীয় জিনিস হয়ে উঠেছে এই বাস-বাড়ি৷ মানুষ আসেন দেখতে, তার সঙ্গে ছবিও তোলেন মন ভরে৷
বীরভূমের পাড়ুই থানার ধনাই গ্রামের বাসিন্দা মৃৎশিল্পী উদয় দাস। ছোটবেলা থেকেই মাটি, সিমেন্ট প্রভৃতি দিয়ে দেবদেবী-সহ বিভিন্ন মূর্তি তৈরি করে আসছেন৷
গ্রামে তাঁর শিল্পকর্মের রীতিমতো চর্চাও রয়েছে। এবার যাত্রীবাহী বাসের আদলে ছোট্ট একটি বাড়িই বানিয়ে ফেলছেন উদয় ৷ বলা বাহুল্য, তাঁর এই বাস-বাড়ি নজর কেড়েছে সকলের৷
ধনাই গ্রামে ঢোকার মুখেই দেখা যাচ্ছে বোলপুর-সিউড়ি রুটের একটি বাস দাঁড়িয়ে রয়েছে। সেটা আসলে উদয়ের বানানো এই বাস-বাড়ি৷ প্রায় দু'বছর ধরে তৈরি করেছেন তিনি৷ তাঁর এই বাস-বাড়ি দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন স্থানীয়রা। বাস-বাড়ির সঙ্গে সেলফি তোলার ধুম তো আছেই৷
মৃৎশিল্পী উদয় দাসের প্রতিক্রিয়া, আমি ছোট থেকেই কাদামাটি, সিমেন্ট ঠাকুরের মূর্তি তৈরি করা শুরু করি। সেই থেকে মনের এক প্রবল ইচ্ছে কিছু একটা তৈরি করতে। তিনি জানান, আর্থিক অবস্থা ভালো ছিল না পরিবারের। কোনও রকমে ঠাকুরের মূর্তি তৈরি করেই সংসার চলত।
বললেন, সেভাবে বাসে উঠতে পারতাম না কারণ পরিবারের অবস্থা খুব খারাপ। তাই বাসের আদলে একটা বাড়ি তৈরি করলাম বাড়ির ভিতরে রয়েছে খাট, বসার জায়গা।