তুহিন অধিকারী, বিষ্ণুপুর: করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের জের। গড়ালো না বিষ্ণুপুরের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী বড় রথের চাকা। আড়ম্বর ছাড়াই মাঙ্গলিক ক্রিয়ার মাধ্যমে ছোট রথকে টানা হল ব্যারিকেড করে।



ইতিহাস বলে, বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের প্রাচীন রথ উৎসব প্রায় ৩৫০ বছরের বেশি প্রাচীন। ১৬৬৫ খ্রীষ্টাব্দে বিষ্ণুপুরের মল্লরাজা বীরহাম্বীর বিষ্ণুপুর শহরের মাধবগঞ্জে রানি শিরোমণি দেবীর ইচ্ছা অনুযায়ী পাথরের পাঁচ চূড়া মন্দির নির্মাণ করেন।


মন্দিরের বিগ্রহ রাধা মদন গোপাল জিউয়ের। এই মন্দিরের অনুকরণে তৈরি করা হয় পিতলের রথ। মল্লরাজাদের সময় থেকেই এই রথে উৎসবের সুচনা হয়।


বর্তমানে এই উৎসব পরিচালনা করেন মাধবগঞ্জ ১১ পাড়া রথ উৎসব কমিটি। মন্দিরের প্রধান বিগ্রহ রাধা মদন গোপালের বিগ্রহকে বাদ্যযন্ত্র ও কীর্তনের মধ্য দিয়ে নিয়ে আসা হয় রথে।


রথের মধ্যে চলে পূজার্চনা ও আরতি। এরপর শুরু হয় রথের রশিতে টান দেওয়ার পর্ব। দূরদূরান্ত থেকে বহু মানুষ এসে উপস্থিত হন রথের দড়িতে টান দেওয়ার ও পুণ্য অর্জনের জন্য।


তবে করোনা দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে সেই উৎসবের আমেজেও ছেদ পড়ল। মন্দির থেকে বিগ্রহ কীর্তন সহকারে নিয়ে আসা হয় রথে। সেখানে পুজো অর্চনা ও আরতি থেকে শুরু করে নানান মাঙ্গলিক ক্রিয়া পালনের মধ্য দিয়ে পালন করা হল ঐতিহ্যের রথ উৎসব। বড় রথ টানা হলো না। কিন্তু ব্যারিকেড করে ছোট রথ ঘোরালেন পূজারীরা।


এই রথের বিশেষত্ব এটাই যে, এখানকার রথে জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা সওয়ার হন না। রথে সওয়ার হন রাধা মদন মোহন জিউ।  ব্যারিকেড দিয়ে মাঙ্গলিক ক্রিয়ার মাধ্যমে রথ উৎসব পালন করা হলেও ভক্তদের আবেগ ও উন্মাদনাকে আটকে রাখতে পারল না রথ উৎসব কমিটি।


সাতসকালেই ঐতিহ্যের রথ দেখতে উপচে পড়ে মানুষের ঢল। গত বছর একই রকমভাবে করোনা পরিস্থিতির কারণে রথের রশিতে টান দিতে পারেননি পুণ্যার্থীরা।


এবারেও সেই একই করোনা পরিস্থিতির কারণে রথের রশিতে টান দিয়ে পুণ্য অর্জন করার সু্যোগ না পাওয়ায় মনের মধ্যে একটা আক্ষেপ রয়ে গেল বলে জানাচ্ছেন পুণ্যার্থীরা। রথের রশিতে টান দিতে না পারলেও রাধা মদন গোপাল জিউকে দর্শন করতে পেরেছেন মানুষ।