সুনীত হালদার, জগাছা: দিল্লিতে পাকড়াও হাওড়ার জগাছার ভুয়ো সিবিআই অফিসার। রাজধানীর একটি পাঁচতারা হোটেল থেকে অভিযুক্ত শুভদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করে পুলিশ। 


সরকারি চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নাম করে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে শুভদীপের বিরুদ্ধে। গতকাল এখবর সম্প্রচারিত হতেই তৎপর হয় পুলিশ। 


রাতেই দিল্লি পৌঁছয় জগাছা থানার পুলিশ ও হাওড়া সিটি পুলিশের গোয়েন্দাদের একটি বিশেষ দল। এরপর ভুয়ো সিবিআই অফিসারের মোবাইল ফোনের টাওয়ার লোকেশন ট্র্যাক করে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। জানা গেছে, আজই ধৃতকে দিল্লির আদালতে তুলে তাঁকে ট্রানজিট রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করবে পুলিশ।


সিবিআই অফিসার পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান থেকে শুরু করে, চাকরির ইন্টারভিউ নেওয়া --  রিলের অক্ষয় কুমার, অনুপম খেররা যেভাবে কীর্তিকলাপ করেছিলেন, তাকে হেলায় হারাতে পারেন হাওড়ার জগাছার বাসিন্দা ২৬ বছরের  ।


তাঁর বিরুদ্ধে সিবিআই অফিসার, সেনাকর্মী, রেলের ভিজিল্যান্স অফিসার পরিচয় দিয়ে কেন্দ্রীয় সংস্থায় চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। পাশাপাশি, নীলবাতি লাগানো গাড়িতে যাতায়াতই শুধু নয়, সিবিআই অফিসার পরিচয় দিয়ে বিয়ে করার মতো মারাত্মক অভিযোগ উঠেছে শুভদীপের বিরুদ্ধে।


আর বিবাহবিচ্ছেদের মামলা চলার মধ্যেই স্বামীর এই কীর্তিকলাপের পর্দাফাঁস করেছেন তাঁর স্ত্রী।  তিনি বলেছেন, ও (শুভদীপ) বলেছিল, সিবিআই-এর অ্যাসিস্ট্যান্ড ডিরেক্টর, বাবা আইবিতে আছে। কিন্তু ওসব কিছু নয়। বিয়ের পর জানতে চাইলে বলে, উইপিএসসি-২০১৭ দিয়েছে। নিজে ও বাবাকেও নীলবাতি লাগানো গাড়িতে নিয়ে যেত। নিজেই ল্যাপটপে পে স্লিপ তৈরি করত, সেটা দেখে নিয়েছিলাম।


এরপরই স্বামীর প্রতি সন্দেহ বাড়তে থাকে স্ত্রীর। বলেন, সিজিও কমপ্লেক্সে দেখা করি। বলে এই নামে ও পদে কেউ নেই। জানুয়ারিতে গিয়েছিলাম। স্বীকার করতে বলেছিলাম। বলেছিল, আমি কী সেটা সবাই জানে।


কখনও দিল্লির নর্থ ব্লকের দফতরের সামনে, কখনও সেনাবাহিনীর সঙ্গে, আবার কখনও আবার হাতে রাইফেল তো কখনও গুজরাত পুলিশের লোগো দেওয়া জামা পরে--  অভিযুক্ত শুভদীপের এরকম নানা ছবি সামনে এসেছে। কিন্তু তাঁর স্ত্রীর অভিযোগ, এসবই ভুয়ো। 


এখানেই শেষ নয়। আরপিএফ-এর অফিসারের এরকম ভুয়ো স্ট্যাম্পও শুভদীপ তৈরি করেছিলেন বলে অভিযোগ তাঁর স্ত্রীর। তিনি বলেন, প্রথম বলেছিল গুজরাত পুলিশের ক্যাডার। রাজধানীতে যাতায়াত, বলেছিল পাস যায়। টিসিদের আইকার্ড দেখাত, বলত পাসে যাতায়াত করছি। বলত রেলের ভিজিল্যান্স অফিসার, বিনা টিকিটে যাতায়াত করি।


এখন কার্যত প্রতারণার অভিযোগ স্বীকার করে নিয়েছেন শুভদীপ। তিনি বলেন, বিহারের বাসিন্দা লালনের পাল্লায় পড়েছিলাম। কাজ ছিল ইন্টারভিউ নেওয়া। ইন্টারভিউ নিতাম অনলাইনে। লালন অনলাইনে টাকা দিত। আমি অনুতপ্ত। আমি ক্ষমা চাইছি। মেয়েটাকে (স্ত্রী) খুশি করার জন্য ভুয়ো সিবিআই অফিসারের পরিচয় দিয়েছিলাম। আমি জাল সিবিআই-এর পরিচয়পত্র তৈরি করেছিলাম। নীলবাতি লাগিয়েছিলাম, নোনাপুকুর ট্রামডিপো থেকে। এক পরিচিত ছিল। তার থেকে গাড়ি ভাড়া করতাম, দিনে ৩ হাজার ভাড়া নিত। পরিচিত একজন করে দিত ব্যবস্থা।


অভিযুক্তের স্ত্রীর অভিযোগ, শুভদীপের এমন প্রতারাণার কথা পুরোটাই জানতেন তাঁর বাবা-মা। যদিও তা অস্বীকার করেছেন দু’জনেই।  অভিযুক্তের মা শুভ্রা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, সিবিআই-তে কাজ করত বলে জানিয়েছিল শুভদীপ। আমি কোনও দিন এসব করতে বলিনি। 


অন্যদিকে, শুভদীপের বাবা রাজকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ৬ বছর আগে অবসর নিই। ৬০-৭০ লক্ষ টাকা দিয়েছিলাম। আমাদের ওপর অত্যাচার করত বাড়িতে। সিবিআই-তে চাকরির অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার ও আইকার্ড দেখাত। তাই সন্দেহ হতো না।