কলকাতা: কুণাল ঘোষের বাড়িতে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের যাওয়া নিয়ে চর্চা এখনও অব্যাহত। তাহলে কি তৃণমূলে ফিরতে চলেছেন বিজেপি নেতা? এই অবস্থায় শাসক দলের অন্দরেই বাড়ছে বিরোধিতার সুর। যদিও এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে চাইছে না বিজেপি নেতৃত্ব। এরইমধ্যে আজ  তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মায়ের মৃত্যু সংবাদ পেয়ে তাঁর বাড়িতে যান বিজেপি নেতা রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, সুব্রত মুখোপাধ্যায় ও সুব্রত বক্সিদের মতো তৃণমূল নেতারা থাকাকালীন রাজীব শিল্পমন্ত্রীর বাড়িতে গেলেন। 
এদিন প্রয়াত হয়েছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মা শিবানী চট্টোপাধ্যায়। বয়স হয়েছিল ৯১ বছর।  শ্রদ্ধা জানাতে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে যান বিজেপি নেতা রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। এর আগে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে যান অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়, তৃণমূলের বর্ষীয়ান নেতা সুব্রত বক্সীরা। তাঁদের উপস্থিতিতেই রাজীব পার্থর বাড়িতে যান। 
উল্লেখ্য, ভোটের আগে চার্টার্ড ফ্লাইটে  করে দিল্লিতে গিয়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন রাজীব। কিন্তু ডোমজুড়ে থেকে বিজেপির টিকিটে লড়াই করে হেরে যান। এরপর থেকে চুপচাপ ছিলেন রাজীব। সম্প্রতি তাঁর একটি ফেসবুক পোস্ট জল্পনা উস্কে দেয়। রাজীব ফেসবুকে লেখেন, সমালোচনা তো অনেক হল...মানুষের বিপুল জনসমর্থন নিয়ে আসা নির্বাচিত সরকারের সমালোচনা ও মুখ্যমন্ত্রীর বিরোধিতা করতে গিয়ে কথায় কথায় দিল্লি আর ৩৫৬ ধারার জুজু দেখালে বাংলার মানুষ ভালভাবে নেবে না। 
এরপর রাজীব আরও লিখেছেন, আমাদের সকলের উচিত রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে কোভিড ও ইয়াস এই দুই দুর্যোগে বিপর্যস্ত বাংলার মানুষের পাশে থাকা। এবিপি আনন্দকে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কুৎসা এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে আক্রমণ বাংলা ভালভাবে নেয়নি। উগ্র হিন্দুত্ববাদী প্রচারও মানুষ ভালভাবে গ্রহণ করেননি। প্রথম থেকে এর বিরোধিতা করলেও কেউ শোনেনি। 
সবমিলিয়ে শনিবার কুণাল ঘোষের বাড়িতে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের আচমকা উপস্থিতি, রাজ্য-রাজনীতিতে যে নতুন জল্পনা তৈরি করেছে, তা অব্যাহত রইল রবিবারও।

  


প্রশ্ন উঠছে,  তাহলে কি মুকুল রায়ের পর তৃণমূলে ঘরওয়াপসি হচ্ছে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়েরও? এই জল্পনা যতই ঘুরপাক খাচ্ছে, ততই রাজ্যের শাসক দলের অন্দরে বাড়ছে বিরোধিতার সুর।
কখনও নাম না করে, আবার কখনও নাম করেই প্রাক্তন বনমন্ত্রীর বিরুদ্ধে পরপর পোস্টার পড়ছে তাঁরই নির্বাচনী এলাকা ডোমজুড়ে।
শনিবাসরীয় সন্ধেয় তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের বাড়িতে হঠাৎই হাজির হন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়।উল্লেখযোগ্য ভাবে তাঁর গাড়িতে দেখা যায় মা-মাটি-মানুষ লেখা উত্তরীয়, তৃণমূলের ব্যাজ।দুই নেতার মধ্যে প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে চলে বৈঠক।
আর এর পরেই রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে দলে ফেরানো নিয়ে বিরোধিতা শুরু হয়েছে তৃণমূল শিবিরে। শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, রাজীব ব্যানার্জি কুনাল ঘোষের কাছে গেলো বলে কি গঙ্গাজলে শুদ্ধ হয়ে গেলো নাকি? 
ভোটের ঠিক আগেই চার্টার্ড ফ্লাইটে দিল্লি উড়ে গিয়ে বিজেপিতে নাম লিখিয়েছিলেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই প্রসঙ্গ টেনে এদিন তাঁকে খোঁচা দিয়েছে গেরুয়া শিবিরও।
তৃণমূলে প্রত্যাবর্তনের আশায় বিজেপির যেসব নেতারা দিন গুনছেন, তাঁদের উদ্দেশে কটাক্ষ ছুড়ে দিয়েছেন দলের তারকা বিধায়কদের একাংশ। কাঞ্চন মল্লিক বলেছেন, তৃণমূল দলটা হল অক্সিজেন পার্লার। আর অক্সিজেন সিলিন্ডার হলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্য দলে গেলে এই অক্সিজেন মিলবে না। তাই তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়া নেতারা খাবি খাওয়া মাছেদের মতো ফিরে আসছেন। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
যদিও এই দলবদলকে গুরুত্ব দিতে নারাজ বিজেপি। রাজ্য বিজেপি সহ সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার বলেছেন, রাজীবকে নিয়ে মাথা ব্যাথা নেই।
জল্পনার মধ্যেই এদিন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মায়ের মৃত্যু সংবাদ পেয়ে তাঁর বাড়িতে যান বিজেপি নেতা রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়।