দক্ষিণ ২৪ পরগনা: আজ অভিষেকের কেন্দ্র ডায়মন্ডহারবারে নাড্ডা। সেখানে আমতলা থেকে শিরাকোল-- অবরোধ তৃণমূলের, দফায় দফায় আটকাল কনভয়। শিরাকোল মোড় ছাড়তেই মুহূর্মুহূ ইটবৃষ্টি। ভাঙল পুলিশের গাড়ির কাচ। কাচ ভাঙল এবিপি আনন্দর গাড়িরও।


বঙ্গ সফরের দ্বিতীয় দিনে আজ তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কেন্দ্র ডায়মন্ড হারবারে সভা বিজেপি সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডার। ডায়মন্ড হারবার যাওয়ার পথে ধুন্ধুমার কাণ্ড বেঁধে যায়।


আমতলা থেকে শিরাকোল পর্যন্ত রাস্তায় দফায় দফায় বাধার মুখে পড়ে কনভয়।  উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে গোটা এলাকায়।  উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিতি।  পাথর ছোড়া হয় কৈলাস বিজয়বর্গীয়র গাড়িতে।


উড়ন্ত বোতলের ঘায়ে দিলীপ ঘোষের গাড়ির কাচ ভেঙে আহত এক নিরাপত্তাকর্মী। ইটের ঘায়ে এবিপি আনন্দর প্রতিনিধির গাড়ির কাচও ভাঙে। তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লোকসভা কেন্দ্র ডায়মন্ড হারবারে যাওয়ার পথে আজ সকালে শিরাকোলে তৃণমূলের অবরোধে আটকে পড়ে নাড্ডার কনভয়।


কনভয়ের বেশ কয়েকটি গাড়িতে হামলা হয় বলে অভিযোগ বিজেপির।  কয়েকটি গাড়ির কাচ ভাঙে।  সরিষার কাছে ভাঙচুর চলে যাত্রীবাসেও।  বিজেপি নেতা রাকেশ সিংয়ের অনুগামীদের মোটরবাইক বাহিনী অবরোধের মধ্যে পড়ে।  অভিযোগ, রাকেশ সিংয়ের দলবলের ওপর হামলা হয়।


শিরাকোল পথ অবরোধ করেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। পাশাপাশি, দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিষ্ণুপুরে তৃণমূল কংগ্রেসের মিছিল। নাড্ডার যাত্রাপথে মিছিল শুরু করল তৃণমূল কংগ্রেস। মিছিলের নেতৃত্বে তৃণমূল যুব সভাপতি সওকত মোল্লা। এছাড়া, কুলপির হটুগঞ্জে কৃষি আইনের প্রতিবাদে তৃণমূলের অবরোধ। সরিষা মোড়ের কাছে মিনিবাস ভাঙচুর করা হয়।


দিলীপ ঘোষ সকালেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন যে, ডায়মন্ড হারবারের পথে সম্ভবত রাস্তা অবরোধ, বিক্ষোভ প্রদর্শন করে নাড্ডার যাত্রাপথ আটকাতে চাইবে তৃণমূল।


এর আগে এদিন সকালে ডায়মন্ড হারবারে বিজেপি কর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। হামলায় আহত হয়েছেন বিজেপির ডায়মন্ড হারবার টাউন সভাপতি সুরজিত্‍ হালদার সহ ২ জন।


ডায়মন্ড হারবারে আজ 'আর নয় অন্যায়'-এর প্রচারাভিযান রয়েছে নাড্ডার। সেই উপলক্ষে কয়েকজন বিজেপি কর্মী আজ সকালে নতুন পোল এলাকায় দলীয় পতাকা লাগাতে গিয়েছিলেন।


অভিযোগ, সেই সময় তাঁদের ওপর হামলা করে তৃণমূল কর্মীরা। ঘটনায় আহতদের ডায়মন্ড হারবার সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। যদিও তৃণমূলের তরফে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।


এই হামলার প্রসঙ্গে রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ডায়মন্ড হারবারকে ওরা (তৃণমূল) শেষ কেল্লা বলে মনে করছে। এমন ভাব করছে যেন, বিজেপি ঢুকলে সরকার পড়ে যাবে। তাই সর্বশক্তি দিয়ে দুষ্কৃতী ও সমাজবিরোধীদের একত্রিত করছে। পুলিশ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সব দেখছে। এরাজ্যে এর চেয়ে বেশি কিছু আশা করা যায় না।


দলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি মুকুল রায় বলেন, সারা বাংলায় জঙ্গলের রাজত্ব চলছে। সরকার একটা নামেই আছে। একদলীয় সরকার। এর আগে, গতকালও নাড্ডাকে ঘিরে বিক্ষোভ প্রদর্শন চলে। গতকাল হেস্টিংসে দলের নতুন কার্যালয়ের উদ্বোধন করতে এসেছিলেন নাড্ডা।


বছর ঘুরলেই বঙ্গ বিধানসভা হাইভোল্টেজ নির্বাচন। একুশের নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে রাজ্যে দুদিনের সফরে গতকালই কলকাতায় আসেন বিজেপি সর্বভারতীয় সভাপতি।


সেখানে উপস্থিত হতেই প্রবল বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয় নাড্ডাকে। বিক্ষোভকারীরা নাড্ডার সামনে কালো পতাকা হাতে নিয়ে কেন্দ্রের কৃষি-নীতির বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকে।


বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতির গাড়ি এসে দাঁড়ায় হেস্টিংসের আগরওয়াল হাউসে, বিজেপির পার্টি অফিসের সামনে। নাড্ডা গাড়ি থেকে নামতে না নামতেই, সেখানে চলে আসে জনা পঞ্চাশেক বিক্ষোভকারী! হাতে কালো পতাকা। মুখে গো ব্যাক স্লোগান।


সূত্রের খবর, মুরলীধর সেন লেন নয়, ’২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্য বিজেপির কন্ট্রোল রুম হতে চলছে হেস্টিংসের পার্টি অফিস। এখানেই বসেই ভোট প্রক্রিয়া পরিচালনা করবেন বঙ্গ বিজেপির কাণ্ডারিরা!


সেই সময় ঘটনাস্থলে গুটি কয়েক পুলিশ কর্মী উপস্থিত ছিলেন। মুহূর্তের মধ্যে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। বিক্ষোভকারীদের দিকে তেড়ে যান বিজেপি কর্মীরা।


কারও হাতে বাঁশ। কারও হাতে চ্যালাকাঠ। যুযুধান দু’পক্ষকে সামলাতে পুলিশের তখন হিমশিম অবস্থা। এই সময় বন্দর এলাকার বিজেপি নেতা রাকেশ সিংও আরও কিছু কর্মী-সমর্থককে নিয়ে সেখানে হাজির হন। পরিস্থিতি আরও তেতে ওঠে।


তুমুল বচসা শুরু হয় দু’পক্ষের মধ্যে। হাতাহাতি শুরু হওয়ার উপক্রম। কোনওমতে সংঘর্ষ এড়াতে সক্ষম হন পুলিশ কর্মীরা। কিন্তু এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে পারস্পরিক দোষারোপের পালা।


বিজেপির অভিযোগ, নাড্ডাকে ঘিরে পরিকল্পিত বিক্ষোভের পিছনে মদত আছে তৃণমূলের। পাল্টা দাবি, কেন্দ্রীয় কৃষি আইনের বিরুদ্ধে বিরোধিতার সুর নাড্ডার কানে তোলার জন্যই বিক্ষোভ প্রদর্শন।


এই প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার জে পি নাড্ডার নিরাপত্তায় গাফিলতির অভিযোগ তুলে কেন্দ্রকে চিঠি লিখল রাজ্য বিজেপি। অমিত শাহকে লেখা চিঠিতে রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডার নিরাপত্তায় ছিল গাফিলতি। লাঠি-বাঁশ নিয়ে ২০০ জন দুষ্কৃতী এসেছিল হেস্টিংসের কার্যালয়ে। পুলিশ দুষ্কৃতীদের আটকায়নি।’