কলকাতা: বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে এদেশে ঢোকা জালনোট চেনাতে এবার অফিসার ও জওয়ানদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে উদ্যোগী বিএসএফ। এর জন্য রিজার্ভ ব্যাঙ্কের দ্বারস্থ বাহিনীর কর্তারা।


গত একমাসে বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় তল্লাশি চালিয়ে বিপুল পরিমাণ জাল ২০০০ টাকার নোট বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। আর এর জেরে সীমান্তরক্ষী বাহিনী থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা— সকলের রাতের ঘুম কার্যত উড়ে গিয়েছে।


দীর্ঘদিন ধরেই ভারতে জালনোট পাচার চক্র বেশ সক্রিয়। বিশেষ করে, বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া মালদা ও মুর্শিদাবাদ দিয়ে এদেশে প্রবেশ করত জালনোট। কিন্তু, কেন্দ্রের নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের পরে, তা জোর ধাক্কা খায়।


তবে, সাম্প্রতিককালে, ফের সক্রিয় হয়েছে সেই চক্র। তার প্রমাণ, হালে বেশ কিছু পরিমাণের জাল ২০০০ টাকার নোট বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে এই অঞ্চল থেকে। ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে মালদা থেকে বহু জাল ২০০০ টাকার নোট ধরা পড়ে। আবার, ফেব্রুয়ারিতে জাল ২০০০ টাকার নোট সহ মুর্শিদাবাদ থেকে ধরা পড়ে এক ব্যক্তি।



মুর্শিদাবাদে ৪০টি জাল ২০০০ টাকার নোট সহ ধরা পড়ে এক ব্যক্তি

মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার জানান, দেশের অন্যত্র যে জালনোট  ধরা হয়েছে, সেগুলি মুলত আসল নোটের কালার ফটোকপি (চলতি ভাষায় জেরক্স)। কিন্তু, মালদা ও মুর্শিদাবাদে বাজেয়াপ্ত জালনোটগুলিকে বিশেষ ধরনের ডাই দিয়ে প্রিন্ট করা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।


বিএসএফ-এর এক শীর্ষ আধিকারিক জানান, যে পরিমাণ জালনোট সাম্প্রতিককালে উদ্ধার হয়েছে তা গুরুতর বিষয়। তাঁর মতে, নতুন নোটের সুরক্ষা বৈশিষ্ঠ্যগুলি অত্যন্ত সন্তর্পণে নকল করা হয়েছে। তাঁর দাবি, ২০০০ নোটে যতগুলি সুরক্ষা বৈশিষ্ঠ্য রয়েছে, তার প্রায় অর্ধেক রয়েছে জালনোটে।


ফলে, আসল ও নকল নোট চিহ্নিত করতে প্রায় হিমসিম খাচ্ছে বাহিনী। ওই আধিকারিক জানান, বাহিনী চাইছে, আসল ও নকল নোটের মধ্য পার্থক্য বুঝতে যাতে অফিসার ও জওয়ানদের কোনও অসুবিধে না হয়। তা প্রযুক্তি দিয়ে হোক বা নোট হাতে নিয়ে পরীক্ষা করে।



এমতাবস্থায়, আরও সঠিকভাবে জালনোট চিহ্নিত করতে বাহিনীর জওয়ান ও অফিসারদের প্রশিক্ষণ দিতে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছে বিএসএফ। ওই আধিকারিক যোগ করেন, নতুন ২০০০ নোটে ১৭টি সুরক্ষা বৈশিষ্ঠ্য রয়েছে। সেগুলি কী কী, তা জওয়ান ও অফিসারদের জানা প্রয়োজন। তাঁর আশা, খুব শীঘ্রই এই প্রশিক্ষণ শুরু হবে।


কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের মতে, জালনোট কারবারের মাধ্যমেই এদেশে বিভিন্ন সন্ত্রাসমুলক কার্যকলাপে আর্থিক জোগান দিত পাক-মদতপুষ্ট জঙ্গি সংগঠনগুলি। আর এদেশে জালনোট প্রবেশ করত মূলত ভারত-বাংলা সীমান্ত দিয়েই। বিএসএফ-এর মতে, ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৬ নভেম্বর পর্যন্ত তারা প্রায় ৪ কোটি মূল্যের জালনোট বাজেয়াপ্ত করেছে। গ্রেফতার করা হয় ৪২ জন পাচারকারীকে।