কলকাতা: নতুন লাইন পাতা থেকে ডবল লাইন। গেজ পরিবর্তন থেকে সিগনাল সংস্কার। গত আর্থিক বছরের তুলনায় বাংলার জন্য এবারের বাজেট বরাদ্দ প্রায় দ্বিগুণ। বাড়ল জোকা-বিবাদীবাগ ছাড়া কলকাতার বাকি মেট্রো প্রকল্পগুলিতে বরাদ্দ।
৯২ বছরের প্রথা ভেঙেছে এবার। সাধারণ বাজেটের সঙ্গে মিশে গিয়েছে রেল বাজেট। কিন্তু বাজেট প্রস্তাব হতাশ করেনি বাংলাকে। গতবারের তুলনায় এবারের বাজেট বরাদ্দ প্রায় দ্বিগুণ।
২০১৬-১৭ আর্থিক বছরে যেখানে বাংলার রেল প্রকল্পগুলির জন্য বরাদ্দ ছিল ৩ হাজার ৮২০ কোটি টাকা। এবার সেখানে বরাদ্দ ৬ হাজার ৩৩৬ কোটি টাকা। গত পাঁচ বছরে যা সর্বোচ্চ। গতবারের থেকে বরাদ্দ ২ হাজার ৫১৬ কোটি টাকা বেশি। নতুন লাইন পাতার জন্য রাজ্য পেয়েছে ৩০৬ কোটি টাকা। গেজ পরিবর্তনের জন্য বাংলার বরাদ্দ ১৫ কোটি এবং ডাবলিং-এর জন্য ৯১ কোটি। সিগনাল ব্যবস্থা ও রেল ইয়ার্ডের উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ ৪৮ কোটি টাকা।


এক নজরে কোন রেল প্রকল্পের জন্য কত টাকা বরাদ্দ করেছে কেন্দ্র?




  • তারকেশ্বর-বিষ্ণুপুর নতুন রেল প্রকল্পের জন্য এবার বরাদ্দ হয়েছে আড়াই গুণ। গতবার যেখানে বরাদ্দ ছিল ২২ কোটি টাকা, এবার বরাদ্দ ৫৫ কোটি।

  • আজিমগঞ্জ-মুর্শিদাবাদ প্রকল্পেও বরাদ্দ বেড়েছে আড়াই গুণ। গত আর্থিক বছরে বরাদ্দ ছিল ৬ কোটি, এবার বরাদ্দ ১৫ কোটি টাকা।

  • লাইনের গেজ পরিবর্তনের জন্য বাংলার ঝুলেতে এবার ১৫ কোটি টাকা। তার মধ্যে রয়েছে বর্ধমান-কাটোয়া, কাটোয়া-মন্তেশ্বর, মন্তেশ্বর-মেমারি, নেগুন-মঙ্গলকোট লাইন।

  • ডবল লাইন পাতার জন্য ৯১ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে বাংলার জন্য। এর মধ্যে রয়েছে নউ আলিপুর-আক্রা, বজবজ-পূজালি, পূজালি-উলুবেড়িয়া, হাবড়া-বনগাঁ, সোনারপুর-ক্যানিং ও মছলন্দপুর-স্বরূপনগর লাইন।

  • কালীনারায়ণপুর-কৃষ্ণনগর, কৃষ্ণনগর-শান্তিপুর-নবদ্বীপঘাট, নদিয়া-রাণাঘাট তৃতীয় লাইন, রানাঘাট-লালগোলা লাইনের জন্য বরাদ্দ হয়েছে ৫ কোটি টাকা।

  • চাঁদপাড়া-বনগাঁ, চাঁদপাড়া-পোড়ামহেশতলা, চাঁদবাজার-বাগদা লাইনের জন্য বরাদ্দ ১ কোটি।

  • কাটোয়া-পাটুলি ৫ কোটি, নলহাটি-সাগরদিঘি ১কোটি।

  • পলাশি-জিয়াগঞ্জ লাইনের জন্য বরাদ্দ ২ কোটি এবং বৈঁচি-শক্তিগড় লাইনের জন্য ১০ কোটি।

  • এছাড়া, গঙ্গাসাগর থেকে ডানকুনি রেলপথের সমীক্ষার জন্যও এবারের বাজেটে বরাদ্দ করেছে কেন্দ্র।

  • বরাদ্দ হয়েছে মুর্শিদাবাদের জলঙ্গি নদীর ওপর সেতু নির্মাণের জন্যও। জানিয়েছেন পূর্বরেলের জেনারেল ম্যানেজার ঘনশ্যাম সিংহ।


শুধু সাধারণ রেলই নয়, বরাদ্দ বেড়েছে মেট্রো প্রকল্পের ক্ষেত্রেও। বুধবার বাজেট প্রস্তাবে দেশের মেট্রো প্রকল্পগুলো সময়মতো শেষ করার ওপর জোর দেওয়ার কথা বলেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। সেইমত কলকাতার পাঁচটি মেট্রো প্রকল্পে গতবারের থেকে বরাদ্দ বাড়ল প্রায় ১০৯ কোটি টাকা।


এক নজরে দেখে নেওয়া যাক কলকাতা মেট্রো রেলের বরাদ্দ--




  • ২০১৭-১৮-র আর্থিক বছরে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ হয়েছে এয়ারপোর্ট-নিউ গড়িয়া মেট্রো প্রকল্পে। গতবারে যেখানে এই প্রকল্পে ২৩০ কোটি ১০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ ছিল, এবারে তা বেড়ে হয়েছে ২৫০ কোটি। তবে বরাদ্দ বাড়লেও, প্রস্তাবিত এই মেট্রো রুটে পড়েছে একটি স্কুল। এছাড়াও মহিষবাথান, গড়িয়া সহ একাধিক জায়গায় জমি জটে থমকে রয়েছে কাজ।

  • নোয়াপাড়া-বারাসত ভায়া বিমানবন্দর মেট্রো প্রকল্পেও বেড়েছে বরাদ্দ। ২০১৬-১৭ সালে বরাদ্দ ছিল ১২৫ কোটি টাকা। ৯৫ কোটি বেড়ে এবারের বরাদ্দ ২২৫ কোটি টাকা। কিন্তু থমকে রয়েছে এই প্রকল্পের কাজও। জমি সমস্যার সমাধান না হওয়ায় এই প্রকল্পের ভবিষ্যত অন্ধকারে।

  • নোয়াপাড়া থেকে দক্ষিণেশ্বর হয়ে ব্যারাকপুর পর্যন্ত মেট্রো প্রকল্পে বরাদ্দ বেড়েছে একশো গুণ। গত বছর এই প্রকল্পে মাত্র এক কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিলেন সুরেশ প্রভু। এবছর বরাদ্দ বেড়ে হয়েছে ১০০ কোটি। তবে বিটি রোডের নীচে ভূগর্ভস্থ জলের পাইপ সরানো নিয়ে এখনও কোনও সমাধানসূত্র না মেলায় বিশ বাঁও জলে প্রকল্পের কাজ।


অন্যদিকে, জোকা-বিবাদীবাগ মেট্রো প্রকল্পে বরাদ্দ কমিয়েছে মন্ত্রক। আগের বার যেখানে প্রায় ১৬৫ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছিল, সেখানে এবছর বরাদ্দ মাত্র ৫০ কোটি টাকা। তারাতলা টাঁকশালের কাছে জমি সমস্যায় পুরোপুরি থমকে রয়েছে প্রকল্পের কাজ। প্রস্তাবিত মোমিনপুর স্টেশনেও রয়েছে জমি অধিগ্রহণের সমস্যা।
ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পের সম্প্রসারণে সামান্য বরাদ্দ করেছে রেল। সল্টলেকের দিকে নতুন দুটি স্টেশন সম্প্রসারণের জন্য ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এই পাঁচটি প্রকল্পই রেলমন্ত্রী থাকাকালীন ঘোষণা করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপরে একাধিক রেলমন্ত্রী এসেছেন, গেছেন। কিন্তু প্রকল্প নিয়ে সমস্যা রয়েই গেছে। রাদ্দ বাড়লেও, প্রকল্পের বাস্তবায়ন কীভাবে হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।