কলকাতা: একটা দল ৩৪ বছর রাজ্য শাসনের পর বছর ছয়েক হল বিরোধী আসনে বসেছে! আরেকটা দল ১৯৯৯-এর আগে পর্যন্ত এ রাজ্যে প্রধান বিরোধী দল ছিল! আর আরেকটা দল এই মুহূর্তে কেন্দ্রে ক্ষমতায়! কিন্তু, এই তিন দলকেই উপনির্বাচনে খড়কুটোর মতো উড়িয়ে দিল তৃণমূল!
তিনটি কেন্দ্রের তিনটিতেই জামানত বাজেয়াপ্ত হল কংগ্রেসের।তিনটি কেন্দ্রের দু’টিতে জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে বামেদের।তিনটির মধ্যে দু’টিতে জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে বিজেপির।
তবে, অনেকেই বলছেন, উপ নির্বাচনের এই ফল বিশ্লেষণ করতে বসলে বাম ও কংগ্রেসের যেমন মনে হতে পারে, তারা সত্যিই সাইনবোর্ডে পরিণত হয়েছে, তেমনই জামানত বাজেয়াপ্ত হলেও, বিজেপির ঝুলিতে প্রাপ্তি, ভোটের পরিমাণ বহুগুণে বাড়িয়ে নেওয়া!
২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচনের নিরিখে কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপি পেয়েছিল প্রায় ১২ শতাংশ ভোট।৬ মাসের ব্যবধানে উপ নির্বাচনে তা একধাক্কায় বেড়ে হল প্রায় ২৮ শতাংশ।একইভাবে তমলুক লোকসভা কেন্দ্রে ২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচনের নিরিখে বিজেপি পেয়েছিল প্রায় ৬ শতাংশ ভোট।আর এবার ভোট বেড়ে হল প্রায় ১৫ শতাংশ।
কোচবিহার পুরসভা এবং ছিটমহল এলাকায় তৃণমূলকে রীতিমতো টেক্কা দিয়েছে বিজেপি। যা নিঃসন্দেহে উল্লেখযোগ্য। কিন্তু, শহর ছেড়ে গ্রামে ঢুকতেই আবার দেখা গিয়েছে ভোটবাক্সে তৃণমূলের আধিপত্য।
মন্তেশ্বর বিধানসভা কেন্দ্রে ৬ মাস আগে বিজেপি পেয়েছিল প্রায় ৮ শতাংশ ভোট। এবার পেয়েছে প্রায় সাড়ে আট শতাংশ।
অর্থাৎ দু’জায়গায় জামানত বাজেয়াপ্ত হলেও, তিন জায়গাতেই নিজেদের ভোট আগের চেয়ে বাড়াতে সক্ষম হয়েছে বিজেপি! কোচবিহার এবং তমলুকে ভোট বৃদ্ধি তো চোখে পড়ার মতো!
বিজেপির যখন ভোট বাড়ছে, তখন বাম ও কংগ্রেসের অবস্থা শোচনীয়। দু’দশকেরও বেশি সময় ধরে যে মন্তেশ্বর বিধানসভা বামেদের হাতে ছিল সেখানে এবার তারা পেয়েছে প্রায় ১০ শতাংশ ভোট।৬ মাস আগে এই মন্তেশ্বরেই কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেধে বাম প্রার্থী পেয়েছিল প্রায় ৪৪ শতাংশ ভোট।
২০১৬-র বিধানসভা ভোটের নিরিখে তমলুক লোকসভা কেন্দ্রে বাম-কংগ্রেসের ভোট ছিল প্রায় ৪২ শতাংশ।এবার তমলুকে আলাদাভাবে লড়ে বামেরা পেয়েছে প্রায় ২২ শতাংশ ভোট এবং কংগ্রেস মাত্র দেড় শতাংশ।
একইভাবে কোচবিহারেও বাম-কংগ্রেসের অবস্থা তথৈবচ। ৬ মাস আগে বিধানসভা ভোটের নিরিখে কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্রে বাম ও কংগ্রেস মিলিতভাবে লড়ে পেয়েছিল প্রায় ৩৭ শতাংশ ভোট।সেখানে এবার ফরওয়ার্ড ব্লক পেয়েছে মাত্র ৬ শতাংশ ভোট। কংগ্রেস মাত্র পেয়েছে মাত্র ২ শতাংশ।
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক অবশ্য বিজেপির বাড়বাড়ন্তের মধ্যে তৃণমূল-বিজেপি আঁতাঁত দেখছেন। ট্যুইট করে সূর্যকান্ত মিশ্রের বক্তব্য, বামেদের ধ্বংস করতে বিজেপিকে জায়গা করে দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। ফ্যাসিস্ট আক্রমণের বিরুদ্ধে বৃহত্তর বাম ও গণতান্ত্রিক শক্তির একজোট হওয়ার সময় এসেছে।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের ব্যাখ্যা, জোট বেধে লড়ে বিধানসভা নির্বাচনে তাও কিছুটা খড়কুটো আঁকড়ে ধরে বাঁচতে পারলেও, জোট ভাঙতেই বাম-কংগ্রেসের অবস্থা আরও শোচনীয় হয়েছে। যে তৃণমূল বিরোধীরা আগে বাম কিংবা কংগ্রেসকে ভোট দিত, সম্ভবত তাদের দৈন্যদশা দেখে, এখন সেই ভোটাররা বিজেপির দিকে ঝুঁকছে। যে কারণে, বাম-কংগ্রেসের ভোট যত কমছে, বিজেপির তত বাড়ছে। যার লাভ আরও বেশি করে ঘরে তুলছে তৃণমূল।
রাজ্যে উপনির্বাচন: প্রায় নিশ্চিহ্ন বাম-কংগ্রেস, লাফিয়ে বাড়ল বিজেপির ভোটের হার
ABP Ananda, web desk
Updated at:
22 Nov 2016 08:16 PM (IST)
NEXT
PREV
রাজ্য (states) লেটেস্ট খবর এবং আপডেট জানার জন্য দেখুন এবিপি লাইভ। ব্রেকিং নিউজ এবং ডেইলি শিরোনাম দেখতে চোখ রাখুন এবিপি আনন্দ লাইভ টিভিতে ।
- - - - - - - - - Advertisement - - - - - - - - -