সৌভিক মজুমদার, মনোজ্ঞা লহিয়াল, কলকাতা: ভোট পরবর্তী হিংসা সংক্রান্ত সব অভিযোগের প্রেক্ষিতে মামলা রুজু করতে হবে। আজ এমনই নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। যাদবপুরের ঘটনায় কেন আদালত অবমাননা নয়? ডিসি এসএসডি-কে পাঠানো হল শো-কজ নোটিস। একইসঙ্গে মেয়াদ বৃদ্ধি করা হল জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের বিশেষ তদন্ত কমিটির। 


আজ ভোট পরবর্তী হিংসা মামলায় রাজ্য সরকারকে একগুচ্ছ নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চ। হাইকোর্টের নির্দেশে বলা হয়েছে, ‘ভোট পরবর্তী অশান্তি নিয়ে পুলিশ বা জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কাছে যে যে অভিযোগ এসেছে, প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে মামলা রুজু করতে হবে। হিংসার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে এখনও পর্যন্ত কতজন গ্রেফতার হয়েছেন, কতজন জামিন পেয়েছেন, সেই তথ্য দিতে হবে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের বিশেষ কমিটিকে। যাঁরা যাঁরা আক্রান্ত হয়েছেন, প্রত্যেকের গোপন জবানবন্দি রেকর্ড করতে হবে। রাজ্য পুলিশ, স্পেশাল ব্র্যাঞ্চের কাছে এ সংক্রান্ত যা যা তথ্য আছে, সমস্ত মুখ্য সচিবের দায়িত্বে সংরক্ষণ করতে হবে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের তদন্ত কমিটি এ নিয়ে যখনই কোনও তথ্য চাইবে, সঙ্গে সঙ্গে তা দিতে হবে রাজ্যকে।’


রাজ্যে ভোট পরবর্তী অশান্তির অভিযোগে তুলে বারবার শাসক দলের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে বিজেপি। এর মধ্যে একাধিক ঘটনায়, তদন্ত করেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের বিশেষ কমিটি। তার মধ্যে একটি ঘটনা হল, কাঁকুড়গাছিতে বিজেপি কর্মীকে পিটিয়ে খুন। গত ৩ মে, বিধানসভা ভোটের ফল বেরনোর পরদিনই কাঁকুড়গাছিতে এক বিজেপি কর্মীকে পিটিয়ে খুন করার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। মৃত বিজেপি কর্মীর পরিবারের লোকজন দাবি করেন, ভোটের আগে তাঁকে খুনের হুমকি দেয় তৃণমূল। দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্তের দাবিও তোলে পরিবার।


অন্যদিকে, গত মঙ্গলবার যাদবপুরে ঘর ছাড়া বিজেপি কর্মীদের ঘরে ফেরাতে গেলে, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের প্রতিনিধিরা আক্রান্ত হন বলে অভিযোগ। এই দুই ঘটনায় হাইকোর্টের কাছে রিপোর্ট দেয় জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের তদন্ত কমিটি।


হাইকোর্টে আজ সেই মামলার শুনানি হল। কাঁকুড়গাছিকাণ্ডে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছে, নিহত বিজেপি কর্মী অভিজিত্‍ সরকারের দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্ত করতে হবে। ময়নাতদন্ত করতে হবে, কমান্ড হাসপাতালে। যাদবপুরের ঘটনায় কেন আদালত অবমাননার রুল জারি করা হবে না, তা জানতে চেয়ে কলকাতা পুলিশের ডিসি এএসডি রশিদ মুনির খানকে শো-কজ নোটিস ইস্যু করেছে আদালত।


এছাড়াও এদিন হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছে, ভোট পরবর্তী হিংসায় যাঁরা আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁদের প্রত্যেকের চিকিত্‍সার ব্যবস্থা করতে হবে রাজ্য সরকারকে। প্রত্যেকের রেশন দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। কারও রেশন কার্ড হারিয়ে গেলেও, সে যাতে রেশন পায়, এই বিষয়টি সুনিশ্চিত করতে হবে। ১৩ জুলাই পরবর্তী শুনানি। সেই সময় পর্যন্ত জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের বিশেষ কমিটির মেয়াদ বাড়িয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। আদালতের তরফে জানানো হয়েছে, বিভিন্ন কেন্দ্রীয় সংস্থা প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে এই কমিটিকে সাহায্য করবে।