উত্তর ২৪ পরগনা: মোদী সরকারের গবাদি-নির্দেশিকার বিরুদ্ধে ফের একবার সুর চড়ালেন মুখ্যমন্ত্রী। মোদী সরকারের গবাদি নির্দেশিকা মানবেন না, গোটাটাই রাজ্যের বিষয়। উত্তর ২৪ পরগনার প্রশাসনিক বৈঠক থেকে জানিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী বলেন, গরু নিয়ে কেন্দ্রের আইন মানছি না। গোটাটাই রাজ্যের বিষয়। রাজ্য যতক্ষণ না বলছে এসব মানার কোনও দরকার নেই। পাশাপাশি ব্যারাকপুরে প্রশাসনিক বৈঠক থেকে স্বঘোষিত গোরক্ষকদের মোকাবিলাতেও দিলেন কড়া বার্তা। বলেন, রমজানের সময় শান্তি বজায় রাখুন। রাস্তায় কেউ কিছু করলে পুলিশকে স্ট্রং অ্যাকশন নিতে হবে।
সম্প্রতি, মোদী সরকার বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়েছে, কৃষির প্রয়োজন ছাড়া কোনও গবাদি পশুই জবাইয়ের উদ্দেশ্যে কেনাবেচা করা যাবে না। গবাদি পশুর তালিকায় রয়েছে গরু, বাছুর, বলদ, ষাঁড়, মোষ এবং উট। এতেই রাতের ঘুম উড়েছে গরু-ব্যবসায়ীদের। তাঁদের প্রশ্ন, যে গরু দুধ দেয় না, কৃষিকাজে লাগে না, তাকে যদি বিক্রিই না করা যায়, তা হলে কি করবেন?
গরু কেনাবেচায় রাজ্যের অন্যতম বড় হাট বসে মুর্শিদাবাদে। মোদী সরকারের গবাদি-বিজ্ঞপ্তির পর বেলডাঙার এই হাটের গরু ব্যবসায়ীদের মনে এখন আশঙ্কার মেঘ। এক গরু ব্যবসায়ীর অভিযোগ, গরু অসুস্থ হয়ে দুধ দেওয়া বন্ধ করলে মাংসের জন্য বিক্রি করা ছাড়া তো উপায় নেই। সরকার কি ক্ষতিপূরণ দেবে? আরেক ব্যবসায়ীর দাবি, অবিলম্বে সরকার এই সিদ্ধান্ত বাতিল করুক। না হলে বিকল্প রুটিরুজির ব্যবস্থা করুক। হাজার হাজার পরিবারের পেটে লাথি সরকার এটা ঠিক কাজ করছে না।
মুর্শিদাবাদের বেলডাঙার মতোই উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জেও প্রতি মঙ্গলবার হাট বসে। মোদী সরকারের গবাদি-নির্দেশিকায় এখানকার পশু ব্যবসায়ীরও এখন ঘোর চিন্তায়। এক ব্যবসায়ীর প্রশ্ন, বয়স্ক গরু নিয়ে কী করব? সেগুলিকে ছেড়ে দেব না কি মেরে ফেলব?
ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা, মোদী সরকারের গবাদি নির্দেশিকার জেরে দেশের প্রায় ১ লক্ষ কোটি টাকার মাংসের ব্যবসা বড়সড় ধাক্কা খাবে। মোদী সরকারের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ইতিমধ্যেই দেশের বিভিন্ন জায়গায় ‘বিফ-ফেস্ট’ও হয়েছে। সংঘাতের পথে হাঁটছে পশ্চিমবঙ্গ ও কেরল সরকার।
এই চাপের মুখে পড়েই শেষমেশ গবাদি পশুর তালিকা থেকে মোষকে বাইরে রাখার প্রস্তাব খতিয়ে দেখছে কেন্দ্র। কারণ, এ দেশে মাংস ব্যবসার সিংহভাগই হল মোষের।
সরকারি হিসেব অনুযায়ী, এই মোষের মাংস বা বাফ রফতানিতে ভারত বিশ্বে প্রথম। মোদী সরকারের গবাদি-নির্দেশিকায় এই বিপুল পরিমাণ ব্যবসা মার খাবে না তো? আশঙ্কায় ব্যবসায়ীরা।