কলকাতা: কয়লা পাচারকাণ্ডে ব্যবসায়ী অনুপ মাঝি ওরফে লালার খোঁজ এখনও পায়নি সিবিআই। এই প্রেক্ষাপটে শুক্রবার পশ্চিম বর্ধমানের আসানসোল ও রানিগঞ্জের একাধিক অবৈধ কয়লা খনিতে দিনভর তল্লাশি চালালেন সিবিআই অফিসাররা। তবে, কয়লা পাচার নিয়ে সিবিআই ব্যাপক অভিযানে নামলেও, এখনও যে রমরমিয়েই অবৈধ কারবার চলছে, তা ফের স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।  সিবিআই এর অভিযান চলাকালীন, একাধিক অবৈধ খনিতে দেখা গেল সিঁড়ি নামানো। খোলামুখ অবৈধ খনির আশেপাশে মিলল কয়লাগুঁড়োর স্তূপ। এমনকী অবৈধ খনিতে যেসব শ্রমিকরা কাজ করেন, তাঁদের নানা সরঞ্জামও উদ্ধার কছেন সিবিআই অফিসাররা।


কিন্তু কীভাবে এই অবৈধ খনিগুলির হদিশ পেল কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা? সিবিআই সূত্রে খবর, কয়েকদিন আগে অবৈধ কয়লা পাচারের সময় দুই ট্রাক চালককে গ্রেফতার করে ঝাড়খণ্ড পুলিশ। তারপর ধৃতদের নিজেদের হেফাজতে নেয় সিবিআই। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার দাবি, ধৃত ওই দু’জনকে জেরা করে মেলা তথ্যের ভিত্তিতেই আসানসোল ও রানিগঞ্জের অবৈধ কয়লাখনিগুলির হদিশ পান গোয়েন্দারা। এরপর এদিন সকাল থেকেই শুরু হয় অভিযান। ধৃত দু’জনকে নিয়ে রানিগঞ্জের বাঁশড়ায় যায় সিবিআই। শুধু অবৈধ কয়লাখনির সন্ধানই নয়, সিবিআইয়ের দাবি, ধৃতদের জেরা করে বেআইনি কয়লা খনি থেকে কয়লা তোলা ও পরে তা পাচার সিন্ডিকেটের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলেছে।

সেইসব তথ্য বিশ্লেষণ করে গোয়েন্দাদের দাবি, শুধু অনুপ মাঝি ওরফে লালাই নয়, কয়লা পাচারের সঙ্গে একাধিক অসাধু ব্যবসায়ীর যোগ রয়েছে। পাচারচক্রের সঙ্গে জড়িত রয়েছে পুলিশের একাংশও। যদিও এদিনের তল্লাশিতে একাধিক খোলামুখ অবৈধ কয়লা খনির সন্ধান পেলেও, কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি। এর আগে মঙ্গলবার কয়লা পাচারচক্রের চাঁই ধরতে ম্যারাথন তল্লাশি চালায় সিবিআই। তল্লাশি চলে অনুপ মাঝি ওরফে লালার একাধিক বাড়ি ও অফিসে। বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে সিবিআইয়ের ৩০০ জন অফিসার তল্লাশি চালান ইসিএলের চারজন জেনারেল ম্যানেজারের বাড়িতেও। নগদ ৫০ লক্ষ টাকার পাশাপাশি কোটি কোটি টাকার সম্পত্তির নথি বাজেয়াপ্ত করা হয়।

এরইসঙ্গে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের আরও দাবি, ইসিএল আধিকারিকদের জেরা করে জানা গেছে, ৬ বড় কয়লা ব্যবসায়ীকে নিয়ে সিন্ডিকেট তৈরি করে বেআইনিভাবে কয়লা পাচারের কারবার চালাতেন লালা। গত শনিববার লালার শেক্সপিয়র সরণির অফিস-সহ ৪ রাজ্যের ৪৫ জায়গায় ম্যারাথন অভিযান চালায় সিবিআই। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে দাবি, লালার অফিস থেকে একটি খাতা পাওয়া গিয়েছে। তাতে কয়েকজন ব্যবসায়ী ও কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং সরকারি আধিকারিকদের নাম রয়েছে। সিবিআই সূত্রে দাবি, ওই ব্যক্তিদের সঙ্গে লালার কী যোগ ছিল, কোনও আর্থিক লেনদেন ছিল কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সে জন্য একটি দলও তৈরি করা হয়েছে।