কলকাতা: সম্পত্তি ভাঙচুর রুখতে সরকারের নতুন বিল। আর সেই বিল ঘিরেই তুলকালাম বিধানসভা। সাসপেন্ড বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান। বিধানসভার নিরাপত্তকর্মীদের সঙ্গে বিরোধী বিধায়কদের তুমুল ধস্তাধস্তি। অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে মান্নান।
গণ্ডগোলের সূত্রপাত্র, ভাঙচুর রুখতে আনা বিল।
সরকারি ও বেসরকারি সম্পত্তিতে আগুন, লুঠ বা ভাঙচুরের ঘটনা রুখতে ও দোষীদের কড়া শাস্তি দিতে বুধবার নয়া বিল পেশ করে রাজ্য সরকার। প্রথম থেকেই যার সমালোচনা করছে বিরোধীরা।
এ দিনও তারা, ২০০৬ সালে, বিরোধী থাকাকালীন তৃণমূল বিধায়করা বিধানসভায় যে ভাঙচুর চালিয়েছিলেন, সেই ঘটনার ছবি সম্বলিত পোস্টার পড়ে অধিবেশনে যোগ দেন।...
এতে আপত্তি জানান স্পিকার। বলেন, পোস্টারগুলি খুলে ফেলতে। এরকম পোস্টার বিধানসভায় বেমানান।
অভিযোগ, এর উল্টো পথে হেঁটে, সেই সময় ওই পোস্টার গায়ে চাপান আব্দুল মান্নান। এতে ক্ষুব্ধ হন স্পিকার। তাঁর সঙ্গে বিরোধী দলনেতার বাক-বিতণ্ডা শুরু হয়ে যায়। এরপরই, আব্দুল মান্নানকে ২ দিনের জন্য সাসপেন্ডের নির্দেশ দেন স্পিকার। বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, প্রচলিত রীতি অনুযায়ী, স্পিকার কাউকে সাসপেন্ড করলে তিনি নিজেই কক্ষ ছেড়ে চলে যান। কিন্তু, এ দিন বিরোধী দলনেতা তা করেননি। তিনি পাল্টা বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। বাকি বিধায়করাও সুর চড়ান। স্পিকার তখন মার্শাল ও বিধানসভার অন্যান্য নিরাপত্তা কর্মীদের নির্দেশ দেন, আব্দুল মান্নানকে কক্ষ থেকে বের করে দিতে।
সেই মতো তাঁরা এগোতেই বিরোধী বিধায়কদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে যায়, যা প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে চলে।
বিধানসভার নিরাপত্তা কর্মী ও বিরোধী বিধায়কদের মধ্যে তুমুল ধস্তাধস্তির মধ্যেই বিল নিয়ে আলোচনা শুরু করে দেন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। কিন্তু, বিরোধীরা তখন রণংদেহী। ধস্তাধস্তির জেরে অসুস্থ বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নানকে স্ট্রেচারে করে বাইরে নিয়ে যান তাঁরা।
আব্দুল মান্নানকে অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে।
এ দিনের অধিবেশন বয়কট করে বিরোধীরা। বাইরে বেরিয়ে তারা বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে।
এদিনের ঘটনায় একযোগে সরকারের সমালোচনায় সরব বাম ও কংগ্রেস।
বিধানসভা কক্ষে যখন তুলকালাম, সেই সময় বিধানসভাতেই নিজের ঘরে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরে বিধানসভা কক্ষে গিয়ে তিনি বিরোধীদের তীব্র সমালোচনা করেন। তাঁর বার্তা, ‘সরকার দুর্বল নয়। জনগণের ভাগ্য নির্ধারণ করার অধিকার কংগ্রেস, সিপিএম, বিজেপি কারও নেই। এনাফ ইজ এনাফ। বিরোধীদের কোনও দায় নেই, দায়িত্বও নেই। শুধু জ্বালিয়ে দাও, পুড়িয়ে দাও। এটাই ওদের নীতি। এ সব চলবে না। এই সরকার মানুষের পাশে থেকে কাজ করবে। কেউ আটকাতে পারবে না। কোনও রকম ভাঙচুর সরকার বরদাস্ত করবে না। আন্দোলন বা অন্য কোনও কারণে জনগণের সম্পত্তি ভাঙচুর হলে যাতে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে দোষীদের শাস্তি দেওয়া যায়, তার জন্য ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট তৈরির আর্জি জানানো হবে হাইকোর্টের কাছে’।
পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এদিনের ঘটনায় সরকারের বিরুদ্ধে আনা বিরোধীদের অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, স্পিকার একটা নির্দেশ দিয়েছিলেন। মান্নান মানেননি। তখন তাঁকে বের করতে যান নিরাপত্তাকর্মীরা। এর মধ্যে সরকারকে কেন টানা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।
বিধানসভা থেকে বের করে আনার পর একটি বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয় আব্দুল মান্নানকে। বাম-কংগ্রেস নেতাদের পাশাপাশি হাসপাতালে যান তৃণমূলের শশী পাঁজা, সুদর্শন ঘোষদস্তিদার, মানস ভুঁইয়ারা।
এ দিনের ঘটনার প্রতিবাদে বাম ও কংগ্রেস, বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বৃহস্পতি ও শুক্রবার, তারা বিধানসভা বয়কট করবে। এর মধ্যে শুক্রবার, বিধানসভায় বাজেট পেশ।
তুলকালাম বিধানসভায়, ধস্তাধস্তি, অসুস্থ মান্নান, ভর্তি হাসপাতালে
ABP Ananda, web desk
Updated at:
08 Feb 2017 02:52 PM (IST)
NEXT
PREV
রাজ্য (states) লেটেস্ট খবর এবং আপডেট জানার জন্য দেখুন এবিপি লাইভ। ব্রেকিং নিউজ এবং ডেইলি শিরোনাম দেখতে চোখ রাখুন এবিপি আনন্দ লাইভ টিভিতে ।
- - - - - - - - - Advertisement - - - - - - - - -