কৃষ্ণেন্দু অধিকারী, সুমন ঘড়াই ও ঋত্বিক মণ্ডল, কলকাতা: আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বদলি নিয়ে চাপানউতোর অব্যাহত। তার মধ্যেই কী করবেন আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়, তা নিয়ে তুঙ্গে উঠেছে জল্পনা। 


নবান্ন সূত্রে খবর, রাজ্য না ছাড়ায় আজ সম্ভবত দিল্লি যাচ্ছেন না তিনি। থাকবেন নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে ক্ষয়ক্ষতি-পর্যালোচনা বৈঠকে। দুপুর তিনটেয় সেই বৈঠক হবে। দফতরের সব কর্মী ও অফিসারদের আসতে বলেছেন আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। এর আগে, রবিবার, বিকেলে সস্ত্রীক নবান্নে যান আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়।


বাংলার মুখ্যসচিবকে তিন মাসের এক্সটেনশন দিয়েও দিল্লিতে বদলি করা হয়েছে। বলা হয়েছে আজ, সোমবার সকাল ১০টার মধ্যে তাঁকে নর্থ ব্লকে কর্মীবর্গ ও প্রশিক্ষণ দফতরে রিপোর্ট করতে। 


আর এই নিয়েই শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক। যা নিয়ে আলোড়ন পড়ে গেছে গোটা দেশে। এই পরিস্থিতিতে কী করবেন আলাপন, তা নিয়ে শুরু হয়েছে তুমুল জল্পনা। 


প্রাক্তন আমলা তথা রাজ্যের অবসরপ্রাপ্ত মুখ্যসচিব অর্ধেন্দু সেন বলেন, রাজ্য সরকার পয়েন্ট আউট করতে পারে কেন্দ্রীয় সরকারকে যে মর্মে যে,  এই নির্দেশ প্রত্যহার করা হোক। এই দুর্যোগের সময় এটা ঠিক হয়নি। তাতে কাজ না হলে রাজ্য সরকার কোর্টে যেতে পারে। বলতে পারে আমরা রিলিজ করতে পারছি না।


বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় সেন্ট্রাল অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইবুনাল ও হাইকোর্টে যেতে পারেন। এক্সটেনশন গ্রহণ না করে অবসরও নিতে পারেন।  


অবসরপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সচিব অনিতা অগ্নিহোত্রী বলেন, এটা ব্যতিক্রমী ও অনফর্চুনেট বিষয়, অবসরের পর ডেকে পাঠানোর মতো বিষয় আগে হয়নি। রাজ্যের অনুমতি না নিয়ে তাঁকে ডেকে পাঠাচ্ছেন, এমনটাও আগে হয়নি। ইতিহাসে এমনটা হয়নি। সেন্ট্রাল অ্যাডমেনিস্ট্রেটিভ ট্রাইবুনাল ও হাইকোর্টে যেতে পারেন আলাপন। এক্সটেনশন গ্রহণ না করে অবসর নিতে পারেন।


প্রসারভারতীর প্রাক্তন সিইও জহর সরকার বলেন, প্রথম বিষয় হল, উনি কেন্দ্রের থেকে ক্ল্যারিফিকেশন চাইতে পারেন, তাঁকে তো অর্ডার নয় চিঠি পাঠানো হয়েছে। সেই চিঠিতে তিনি জানতে চাইতে পারেন, অপশন সিস্টেম কি উঠে গেল? দু নম্বর, রাজ্য সরকারের অনুমতি নিতে হত, সেটাও কী উঠে গেল? দু’দিন আগে এক্সটেন্ড করার অর্ডার দিয়েছিলেন, সেটার কী হল? কোন পোস্টের জন্য রিপোর্ট করতে বলা হল, তা জানতে চাইতে পারেন। পুরো অর্ডারটাই বেআইনি।


একই মত অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসারদের একাশেরও। প্রাক্তন আইজি পঙ্কজ দত্ত বলেন, হতে পারে কাল তিনি চাকরি থেকে অব্যাহতি দেবেন, তাহলে তো ব্যাপারটা মিটেই গেল। আর না হলে একটা নিপাট ভদ্রলোক টানাপোড়েনে পড়বেন। উনি কাল না গেলে চাকরি পরবর্তী অবস্থায় সমস্যায় পড়তে পতে পারে। এথিক্স, লিগাল, প্রটোকল মেনে চলতে হয়, এই ঘটনায় মোদি সরকার এথিক্স, প্রটোকল মানেনি। মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ও একটা ভুল করেছেন, রিভিউ মিটে তিনি সিএস ও দুই ডিএমকে সেখানে রেখে বলে আসতে পারতেন প্রধানমন্ত্রীকে ব্রিফ করার জন্য।


এদিকে, রাজ্যের কোনও অফিসারকে কেন্দ্রে নিয়ে যেতে হলে রাজ্য সরকারের রিলিড অর্ডার লাগে। নবান্ন সূত্রে খবর, এখনও আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে সেই রিলিজ অর্ডার দেয়নি রাজ্য সরকার। এই বিষয়ে, আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে হোয়াটসঅ্যাপ করা হলে তিনি কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি।