কলকাতা: সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়োগ মামলায় কলকাতা হাইকোর্টে ফরে মুখ পুড়ল রাজ্য সরকারের। বাতিল বাঁকুড়ার দুই থানার নিয়োগ।
শুক্রবার নিয়োগের প্যানেল খারিজ করে বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়োগে দুর্নীতির যেসব অভিযোগ জমা পড়েছে, তা হিমশৈলের চূড়ামাত্র। নিয়োগ প্রক্রিয়া অত্যন্ত অস্বচ্ছ, ধোঁয়াশা। ২০১৩ সালের ইন্টারভিউ অনুযায়ী বাঁকুড়ার সারেঙ্গা এবং বারিকুল থানায় যে ৩২০ জন সিভিক ভলান্টিয়ার নেওয়া হয়, তাঁদের বকেয়া মিটিয়ে দিয়ে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিতে হবে। রাজ্যের অন্যান্য জেলায় যাঁরা কাজ করছেন, সেই সিভিক ভলান্টিয়ারদের নিয়োগ বহাল ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। আদালতের এই নির্দেশে হতাশ সিভিক ভলান্টিয়াররা।
পাশাপাশি, আদালত জানিয়েছে, সিভিক ভলান্টিয়ার দরকার থাকলে স্বচ্ছভাবে নিয়োগ করতে হবে। অর্থ দফতরের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি, পরিবহণ সচিব ও বিধাননগরের পুলিশ কমিশনারকে নিয়ে কমিটি গঠন করে দেওয়া হল। তাঁরাই নির্দেশিকা তৈরি করবেন। ৩ মাসের মধ্যে মুখ্যসচিবকে রিপোর্ট দেবে ওই কমিটি। পরীক্ষার প্রশ্ন হবে ৮০ শতাংশ ছোট ও ২০ শতাংশ বিষয়ভিত্তিক।
বিচারপতির নির্দেশ, মামলাকারীরা নতুন করে আবেদন করলে, তাঁদের যোগ্যতা অনুযায়ী বিচার করতে হবে। পাশাপাশি, আদালত জানিয়েছে, দুই থানায় ইন্টারভিউয়ের দিনের যে সব নথি জমা নেওয়া হয়েছে, তা আদালতের সংগ্রহে থাকবে। যাতে ভবিষ্যতে কোথাও এই ধরণের নিয়োগ না হয়, তার জন্য এই মামলা উদাহরণ হয়ে থাকল।
সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়োগ নিয়ে মামলার প্রেক্ষিতে ‘বড় কেলেঙ্কারি’ মন্তব্য করে, গত ২৮ এপ্রিল নিয়োগে অন্তর্বর্তীকালীন স্থগিতাদেশ দেন বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়। হলফনামা জমা দিয়ে দু’দফায় আদালতের তীব্র ভর্ৎসনার মুখে পড়ে রাজ্য সরকার। ২০১৩ সালে ৮ এপ্রিল, বাঁকুড়ার বারিকুল থানায় ৮৭৫ জনের ইন্টারভিউ নেওয়া হয়েছে শুনে, গত ১৬ মে বিচারপতি বলেন, একদিনে ৮৭৫ জনের ইন্টারভিউ? ইন্টারভিউ কে নিয়েছিলেন? তাঁর কটা মাথা? হাইকোর্টের বিচারপতি হওয়ার জন্য সেই নাম আমি সুপারিশ করব। তাহলে বকেয়া মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি হয়ে যাবে।
পাশাপাশি, সারেঙ্গা থানায় একদিনে ১৩৫১ জনের ইন্টারভিউ হয়েছে শুনে গত ১৮ মে রাজ্য সরকারকে তীব্র ভর্তসনা করে হাইকোর্ট। বিচারপতি বলেন, রাজ্যে প্রশাসনিক অরাজকতা চলছে। কাগজপত্র দেখে মনে হচ্ছে, নিয়োগ প্রক্রিয়া ত্রুটিপূর্ণ। যাঁরা ইন্টারভিউ নেন, তাঁরা কি সুপারম্যান? ১৩৫১ জনের জন্য যদি এক মিনিটও সময় দেওয়া হয় তাহলে ২২ ঘণ্টা ৩১ মিনিট লাগে। ইন্টারভিউ কি রাত ৩টে থেকে শুরু হয়েছিল? যাঁরা নেন, তঁরা স্নান-খাওয়া করেননি? শৌচালয়ে যাননি?
শুক্রবার ছিল এই মামলার রায় দান। বাতিল হল সিভিক ভলান্টিরায় নিয়োগ।