পূর্ণেন্দু সিংহ, বাঁকুড়া: গ্রামের চারপাশে অজানা জন্তুর থাবার ছাপ। আতঙ্কে কাঁপছে বাঁকুড়ার ফুলকুশমা গ্রাম। বন দফতরের ধারণা জন্তুটি হায়না জাতীয় প্রাণী। জন্তুটিকে ধরতে খাঁচা বসাল বন দফতর।


বর্ষায় ভিজে গিয়েছে মাটি। আর তাতেই অজানা জন্তুর অসংখ্য থাবার ছাপ স্পষ্ট। গ্রামবাসীদের দাবি, রাতের অন্ধকারে ক্ষিপ্র গতিতে জন্তুটিকে এদিক ওদিক ছোটাছুটি করতেও দেখা গিয়েছে। কারোর আবার দাবি, এক নয়, একসঙ্গে দু, তিনটি একই ধরনের জন্তু দল বেঁধে রয়েছে। কিন্তু অন্ধকারের জেরে স্পষ্ট দেখা যায়নি বলে জানাচ্ছেন গ্রামবাসীরা। বন দফতরের প্রাথমিক ধারণা জন্তুটি আসলে হায়না বা সমগোত্রীয় কোনও প্রাণী । জন্তুটিকে বন্দি করতে বন দফতরের তরফে পাতা হয়েছে খাঁচা। কিন্তু সে খাঁচায় এখনও ধরা দেয়নি অজানা জন্তু। ফলে আতঙ্ক বাড়ছে বাঁকুড়ার ইন্দপুর ব্লকের ফুলকুশমা গ্রামে ।


বাঁকুড়ার ইন্দপুর ব্লকের ফুলকুশমা গ্রাম মোটামুটি ভাবে জঙ্গল দিয়ে ঘেরা। গ্রাম থেকে দু’শো মিটার এগোলেই অর্জুন গাছের জঙ্গল। প্রায় সপ্তাহ দুয়েক আগে জঙ্গল লাগোয়া একটি ফাঁকা মাঠেই ভেজা মাটিতে প্রথম থাবার দাগ দেখে সন্দেহ হয় স্থানীয় যুবকদের। গ্রামবাসীরা প্রথমে পায়ের ছাপগুলিকে তেমন গুরুত্ব না দিলেও কয়েক দিন যেতে না যেতেই স্থানীয় এক গ্রামবাসী রাতের অন্ধকারে এক অজানা জন্তুকে ছুটে যেতে দেখেন বলে দাবি। আর সেখবর ছড়িয়ে পড়তেই এলাকায় শুরু হয় আতঙ্ক। গ্রামবাসীদের দাবি সপ্তাহ খানেক আগে হিংস্র সেই জন্তুর আক্রমণে স্থানীয় এক ব্যাক্তি আহতও হয়েছেন। ইতিমধ্যেই একাধিক ব্যক্তির নজরে এসেছে ওই জন্তু। গ্রামেরই কেউ কেউ আবার বলছেন একটি জন্তু নয় ,একই সঙ্গে দুই বা তিনটি একই ধরনের জন্তুকে দেখা গেছে জঙ্গল লাগোয়া এলাকায় । যার মধ্যে একটি শাবকও রয়েছে।


গ্রামবাসীদের দাবি রাতের বেলায় জন্তুটি লোকালয়ের কাছকাছি এলেও দিনের বেলায় তার আর কোনো খোঁজ মিলছে না। রাতের অন্ধকারে জন্তুটিকে শনাক্তও করতে পারছেন না কেউ। স্বাভাবিক ভাবেই অজানা সেই জন্তুর আতঙ্কে আপাতত ঘুম ছুটছে বাঁকুড়ার ইন্দপুর ব্লকের ফুলকুশমা গ্রামের মানুষের। সন্ধে নামলেই আর কেউ বাড়ির বাইরে পা রাখছেন না। আতঙ্কে রাতে বন্ধ রাখতে হচ্ছে বাড়ির জানালা,  দরজাও।


এদিকে এই ঘটনার খবর পাওয়ার পরই বন দফতরের তরফে জন্তুটিকে খাঁচাবন্দি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে । গ্রামের এক প্রান্তে মুরগিকে টোপ হিসাবে ব্যবহার করে বসানো হয়েছে খাঁচা। জন্তুটিকে নিয়ে গ্রামবাসীদের আতঙ্ক দূর করতে করা হয়েছে মাইক প্রচার। জন্তুটির পায়ের ছাপ সংগ্রহ করে তা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। গ্রাম পাহারা দিতে গ্রামবাসীদের নিয়েই তৈরি করা হয়েছে একটি দল। জন্তুর সংখ্যার ব্যাপারে নিশ্চিত নয় বন দফতর। তবে জন্তুটির যাতে কোনওরকম ক্ষতি না হয় সেব্যাপারেও কড়া নজর রয়েছে গ্রামবাসী ও বন দফতরের ।