কলকাতা: ২ সেপ্টেম্বরের ধর্মঘট রুখতে এবার আরও কড়া রাজ্য সরকার। নজিরবিহীনভাবে ধর্মঘটের আগে ও পরে দফতরে হাজিরা বাধ্যতামূলক বলে নির্দেশিকা জারি অর্থ দফতরের। অন্যদিকে, বনধ-গুণ্ডামি রুখতে বিরোধীদের উদ্দেশ্যেও দিয়ে রাখলেন কড়া হুঁশিয়ারি।
সিটু, আইএনটিইউসি-সহ ১১টি ট্রেড ইউনিয়ন সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে ২ সেপ্টেম্বর অর্থাৎ শুক্রবার। তারপর শনি-রবি ছুটি। সরকারের নির্দেশিকা অনুযায়ী, সরকারি কর্মচারীদের ১ সেপ্টেম্বর অর্থাৎ‍ বৃহস্পতিবার এবং ৫ সেপ্টেম্বর অর্থাৎ সোমবারও বাধ্যতামূলকভাবে দফতরে উপস্থিত থাকতে হবে।
অর্থ দফতরের নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, কোনও সরকারি কর্মচারি ধর্মঘট এবং তার আগে ও পরে দু’দিন অর্থাৎ মোট তিনদিন গরহাজির থাকলে তাঁকে শোকজ করা হবে।
সন্তোষজনক উত্তর মিললে তবেই ছুটি মঞ্জুর করা হবে। নাহলে সেই কর্মচারীর একদিনের বেতন কাটা যাবে। কর্মজীবন থেকেও একদিন বাদ পড়বে। মুখ্যমন্ত্রীও এদিন সাফ বুঝিয়ে দিয়েছেন, তিনি ধর্মঘটের নামে ছুটির পক্ষপাতী একেবারেই নন।
কয়েকটি ক্ষেত্রে অবশ্য ছাড় রয়েছে। কী সেগুলি? সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মচারী হাসপাতালে ভর্তি থাকলে।
ওই দিন অনুপস্থিত সরকারি কর্মচারীর পরিবারের কারও মৃত্যু হলে। সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মচারী আগে থেকেই গুরুতর অসুস্থ থাকলে। আগে থেকেই কারও মাতৃত্বকালীন বা সন্তান প্রতিপালনের জন্য ছুটি নেওয়া থাকলে।
২০১১ সালে তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে যখনই কোনও ধর্মঘট হয়েছে, তখনই সরকারি কর্মীদের দফতরে আসা বাধ্যতামূলক বলে নির্দেশিকা জারি হয়েছে। কখনও ধর্মঘটের দিন অফিসে আসায় মিলেছে বাড়তি ছুটিও।
গতবছর ২ সেপ্টেম্বরের ধর্মঘটে যে সরকারি কর্মীরা অফিসে এসেছিলেন, তাঁদের বিশেষ ক্যাসুয়াল লিভ দিয়েছিল নবান্ন। এবার অবশ্য নজিরবিহীনভাবে ধর্মঘটের আগে ও পরেও হাজিরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
শুধু সরকারি কর্মচারীই নয়, বনধ নিয়ে এদিন বিরোধীদের উদ্দেশ্যেও 'হুঁশিয়ারি' দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
মমতার কড়া বার্তা, ধর্মঘটের নামে গুণ্ডামি হলে সরকার যে কড়া ব্যবস্থার পথে হাঁটবে। এদিন বিধানসভায় তিনি বলেন, কেউ যেন গুণ্ডামি করে নিজেদের সম্পত্তি না ভাবে।
ধর্মঘটের দিন দোকান বা গাড়ি ভাঙচুর হলে সরকার ক্ষতিপূরণ দেবে বলেও সোমবার আশ্বাস দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেছেন, দোকান খোলা রাখুন। দোকান, গাড়ি ভাঙচুর হলে সরকার ক্ষতিপূরণ দেবে।
প্রসঙ্গত, তিনি যে ধর্মঘটের বিরোধী, ক’দিন আগে দলের মঞ্চ থেকে সেটা পরিষ্কার করে দিয়েছিলেন।
মমতা বলেছিলেন, আমি বনধ সমর্থন করি না। এটা শ্রমিকদের ইস্যু। কিছু ইস্যু আমি সাপোর্ট করি। কিন্তু, বলার একটা জায়গা আছে।
ক’দিন আগে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের মঞ্চ থেকেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলায় শোনা গিয়েছিল, কোনও বনধ বাংলায় আমরা করতে দেব না। মাথানত করব না। দোকানদারদের কাছে অনুরোধ, খোলা রাখবেন। কোনও দোকানে হাত পড়লে সরকার ক্ষতিপূরণ দেবে। গাড়ি ভাঙচুর করলে সরকার ক্ষতিপূরণ দেবে। যে ভাঙচুর করবে তাঁর বিরদ্ধে কড়া ব্যবস্থা।
এবার প্রশাসনের মাথা হিসেবেও বার্তা দিলেন তিনি।