কলকাতা: কাঁথিতে চমক বিজেপির। বামেদের পিছনে ফেলে দ্বিতীয় স্থানে উত্থান। এক বছরে তাদের ভোট বাড়ল ২২ শতাংশ। জামানত জব্দ বাম ও কংগ্রেসের।
২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে, দক্ষিণ কাঁথিতে বিজেপির প্রাপ্ত ভোট ছিল মাত্র ৮.৭৬%। কিন্তু এক বছর ঘোরার আগেই, ভোট শতাংশ ৩০.৯৭ শতাংশে নিয়ে গেল বিজেপি! একেবারে দ্বিতীয় স্থানে! আর এই পরিসংখ্যানকে সামনে রেখেই তৃণমূলের দিকে হুঁশিয়ারি ছুড়ে দিচ্ছে পদ্ম শিবির। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের ‘হুঙ্কার’, টিএমসি সাবধান। বিজেপি এসে গিয়েছে।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, বাম শিবিরে ভাঙন ধরিয়েই নিজেদের শক্তিবৃদ্ধি করেছে বিজেপি। ফলাফলেও তা স্পষ্ট প্রতিফলিত হয়েছে। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে দক্ষিণ কাঁথি কেন্দ্রে বাম-কংগ্রেস জোট প্রার্থীর ঝুলিতে গিয়েছিল ৩৪.২২ শতাংশ ভোট। আর এবার সেখানে সিপিআই প্রার্থী পেয়েছেন ১০.২১%। অর্থাত ধরে নেওয়া যায়, বামেদের ভোট কমেছে প্রায় ২৪ শতাংশ।
অন্যদিকে, বিজেপির-র ভোট বেড়েছে প্রায় ২২ শতাংশ। আর তৃণমূলের দুই শতাংশের কিছু বেশি! অর্থাত, পরিষ্কার বামেদের সিংহভাগ ভোটই চলে গিয়েছে বিজেপির দিকে!

বামেদের ক্ষয়ের জেরেই যে পদ্ম শিবিরের মাটি শক্ত হচ্ছে, তা মেনে নিচ্ছে সিপিএম নেতৃত্বের একাংশ। পূর্ব মেদিনীপুর সিপিএম জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন সিহি বলেন, সব বাম ভোট বিজেপিতে চলে গিয়েছে।
এই প্রবণতা অনেক আগেই শুরু হয়েছে রাজ্যে। পরিসংখ্যান বলছে, বামেরা যত কমছে, ততই বাড়ছে বিজেপি। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে তমলুক কেন্দ্রে বামেরা পেয়েছিল ৩৫.৪৮% ভোট। ২০১৬ সালের নভেম্বরের উপ নির্বাচনে এটাই নেমে এসেছে ২২.৬৬ শতাংশে। অন্যদিকে, ২০১৪ সালে তমলুকে বিজেপি পেয়েছিল মাত্র ৬.৪৩ শতাংশ ভোট। গত বছর উপনির্বাচনে সেটাই বেড়ে হয়েছিল ১৫.২০ শতাংশ!

নন্দীগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপি দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছিল। তমলুকের সঙ্গে হওয়া কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্রেও ছিল বিজেপির উত্থানের একই ছবি। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে, কোচবিহার কেন্দ্রে বামেরা পেয়েছিল ৩৩.২৬% ভোট। গত বছরের উপ নির্বাচনে এটাই নেমে এসেছিল ৬.৫৪ শতাংশে!
অন্যদিকে, ২০১৪ সালে কোচবিহারে বিজেপি পেয়েছিল ১৬.৪৮ শতাংশ ভোট। গত বছর উপনির্বাচনে সেটাই বেড়ে হয় ২৮.৫৩ শতাংশ! কোচবিহারে বামেদের পেছনে ফেলে দ্বিতীয়স্থানে উঠে এসেছিল বিজেপি।
দক্ষিণ কাঁথিতেও সেই বিজেপি বাড়ল, বামেরা আরও কমল! এপ্রসঙ্গে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, কে সেকেন্ড, কে থার্ড, তাতে আমাদের কী এসে যায়। মানুষ আমাদের বেশি সমর্থন করেছে। বাম কবে রাম হবে, আর রাম কবে বাম হবে? তেঁতুল কবে টক হল, এসব দেখার দরকার নেই।

বাম কমছে, বিজেপি বাড়ছে, কংগ্রেস কার্যত অপ্রাসঙ্গিক। এই ফলাফলের মধ্যে ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতির বাড়বাড়ন্তের গন্ধ পাচ্ছে কংগ্রেস। প্রদেশ সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, বাংলায় মেরুকরণের রাজনীতি শুরু হয়ে গিয়েছে, প্রমাণিত হল।
বিজেপির বাড়বাড়ন্তের নেপথ্যে কি তাহলে রামনবমী উপলক্ষ্যে জায়গায় জায়গায় বিশাল মিছিল? উত্তরপ্রদেশ এফেক্ট কি এ রাজ্যেও পড়তে চলেছে তাহলে? কোথাও কী ধর্মীয় মেরুকরণের ডিভিডেন্ট পেতে চলেছে বিজেপি? এই প্রশ্নগুলি রাজনৈতিক মহলে ঘোরাফেরা করছে।

কারণ, পরিসংখ্যান বলছে ২০১৪ সালে দেশজুড়ে প্রবল মোদি হাওয়াতেও দক্ষিণ কাঁথিতে যেখানে মাত্র ১৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ ভোট পেয়েছিল বিজেপি। এবার তার চেয়েও বেশি অর্থাৎ ৩০ দশমিক ৯৭ শতাংশ ভোট পেয়েছে তারা।
পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, উপ নির্বাচনের ফল থেকে একটা ইঙ্গিত স্পষ্ট, ২০১৮-র পঞ্চায়েত ভোটে মূল লড়াই তৃণমূল বনাম বিজেপি। এরমধ্যে যদি ভাঙন রোধ করতে না পারে আলিমুদ্দিন, তাহলে সমূহ বিপদ তাদের পক্ষে। কারণ, তারা ভাঙছে বলেই, বিজেপি গড়ছে।