কলকাতা: কোভিশিল্ডের পর শুক্রবার রাজ্যে আসছে কোভ্যাকসিন। হায়দরাবাদের ভারত বায়োটেক এবং আইসিএমআর কোভ্যাকসিন তৈরি করেছে।


স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, ভ্যাকসিনগুলিকে বাগবাজারের স্টোরে মজুত রাখা হবে। তবে কবে, কোথায় কখন ভ্যাকসিনগুলি দেওয়া হবে, সেই বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। স্বাস্থ্য মন্ত্রক ও স্বাস্থ্য দফতর আলোচনা করে সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।


এদিকে, বৃহস্পতিবার রাজ্যে ভ্যাকসিন নেন ৭ হাজার ৬৯২ জন। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, এদিন, ৪ জনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। ভ্যাকসিন নেওয়ার পর ডায়মন্ড হারবারে ১ জন অসুস্থ হয়ে পড়েন। দুর্গাপুরে ৩ স্বাস্থ্যকর্মীর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।


অসুস্থ ৩ জনকে দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালের সিসিইউ-তে ভর্তি করা হয়েছে। এক অসুস্থর ছেলে জানিয়েছেন, মায়ের বুক ধড়ফর করছে। দুর্গাপুর পুরসভা স্বাস্থ্য পারিষদ রাখি তেওয়ারি বলেন, অসুস্থরা সকলে পুরসভার স্বাস্থ্যকর্মী। অসুস্থ হওয়ার ঘটনায় যে তাঁরা ভীত, সেই কথাও স্বীকার করেন তিনি।


যদিও, স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, কারও অসুস্থতাই গুরুতর নয়। প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে, উৎকণ্ঠার কারণেই তাঁরা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। পশ্চিম বর্ধমানের সহকারী স্বাস্থ্য আধিকারিক কেকা মুখোপাধ্যায় বলেন, কেউ কেউ প্যানিকের জন্য হয়তো নিতে চাইছেন না, কাউন্সেলিং করা হবে। কোনও কিছুই আটকে থাকবে না।


স্বাস্থ্য দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, শুক্রবার প্রথম পর্যায়ের চতুর্থ দফার টিকাকরণ। বৃহস্পতিবার কলকাতা থেকে বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হচ্ছে কোভিশিল্ড। তার আগে বুধবার দ্বিতীয় দফায় পুণে থেকে আসে করোনার ভ্যাকসিন।


টিকা সুরক্ষিত রাখার জন্য এদিন সকাল থেকেই বাগবাজারে স্বাস্থ্য দফতরের কেন্দ্রীয় স্টোরে প্রস্তুতি ছিল তুঙ্গে। বিকেল পৌনে তিনটে নাগাদ গো-এয়ারের ফ্লাইটে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছয় কোভিশিল্ড।


রানওয়ের পাশে তৈরি ছিল স্বাস্থ্য দফতরের দুটি ভ্যাকসিনভ্যান। দ্রুততার সঙ্গে কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন বিমান থেকে গাড়িতে আনলোড করা হয়।


তারপর পুলিশের তিনটি পাইলট কারের পাহারায় তা নিয়ে যাওয়া হয় স্বাস্থ্য দফতরের বাগবাজার স্টোরে। বিকেল ৪টে বেজে ৫ মিনিটে বাগবাজার পৌঁছে যায় ভ্যাকসিনের গাড়ি।


১৬ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে ভ্যাকসিন অভিযান। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, ১২ জানুয়ারি প্রথম দফায় রাজ্যে এসেছিল কোভিশিল্ডের ৬ লক্ষ ৮৯ হাজার ডোজ।


দ্বিতীয় দফায় রাজ্যে এসেছে কোভিশিল্ডের ৬ লক্ষ ৯৯ হাজার ডোজ। অর্থাত, এবার ভ্যাকসিনের ১০ হাজার ডোজ রাজ্যে বেশি এসেছে।


টিকাকরণ অভিযানের প্রথম পর্বে চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, সাফাইকর্মীর মতো সামনের সারিতে থাকা করোনা যোদ্ধাদের ভ্যাকসিনেশন চলছে। শনি, সোম ও মঙ্গলবারের পর ফের টিকাকরণ হবে শুক্রবার। পুণের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে, দ্বিতীয় দফায় রাজ্যে এসে পৌঁছল কোভিশিল্ডের প্রায় সাত লক্ষ ডোজ।


স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, প্রথম পর্যায়ের প্রথম দফায় যাঁদের ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে, ২৮ দিনের মাথায় তাঁরা যাতে দ্বিতীয় ডোজ পান তা সুনিশ্চিত করা হবে।


রাজ্যের হাতে মজুত কোভিশিল্ড স্টক থেকেই তা সুনিশ্চিত করা হবে সেই অঙ্ক মাথায় রেখেই জেলায় জেলায় ভ্যাকসিন বণ্টন করবে সরকার।


স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, গত শনিবার প্রথম দফার ভ্যাকসিন নেওয়ার পর বেশ কয়েক জনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে বুধবার বৈঠক করে বিশেষজ্ঞ কমিটি।


বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, কাদের শরীরে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়েছে, তাঁদেরকে পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। কী রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, শরীরে তার কী প্রভাব, বিস্তারিত রিপোর্ট তৈরি করা হবে। ভ্যাকসিন নেওয়ার পর সামান্য অসুস্থতাও যাতে নথিভুক্ত হয়, সে বিষয়ে জোর দিতে হবে।


স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে আরও খবর, একটি কেন্দ্র থেকে দিনে একশোজনকে ভ্যাকসিনের লক্ষ্যমাত্রা সব সময় পূরণ হচ্ছে না। তাই নির্ধারিত দিন না হওয়া সত্ত্বেও বুধবার ওই সব কেন্দ্রে থেকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়।