রোজভ্যালি থেকে সুদীপ লাভবান হয়েছেন বলে সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিটের ছত্রে ছত্রে দাবি করেছে সিবিআই। কিন্তু, সোমবার তৃণমূল সাংসদের জামিনের বিরোধিতা করতে গিয়ে ওড়িশা হাইকোর্টে আরও চাঞ্চল্যকর এক দাবি করলেন সিবিআইয়ের আইনজীবী কে রাঘবচারুলু। তিনি বলেন, তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুপারিশে রোজভ্যালি কর্ণধার গৌতম কুণ্ডুর ছেলে সেন্ট জেভিয়ার্সে ভর্তি হয়। তারপর সেন্ট জেভিয়ার্সকে ১ কোটি টাকা অনুদান দেন গৌতম কুণ্ডু। কিন্তু, এই টাকা পরে সেন্ট জেভিয়ার্সের অ্যাকাউন্ট ঘুরে আসে তৃণমূলের পার্টি ফান্ডে।
যদিও, এপ্রসঙ্গে সেন্ট জেভিয়ার্স কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা কিছু বলতে চায়নি। তবে, তৃণমূল এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। তৃণমূল নেতা ও আইনজীবী বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, তাঁদের দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতেই সিবিআই এ ধরনের দাবি করেছে।
সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের আইনজীবীরা এদিন তৃণমূল সাংসদের অসুস্থতার কথা উল্লেখ করে জামিন আদায়ের চেষ্টা করেন। এর আগে সুদীপের দেখা করতে এসে মুখ্যমন্ত্রীও অসুস্থতার কথা বলেছিলেন।
কিন্তু, অসুস্থতা নিয়ে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দেন সিবিআইয়ের আইনজীবী। ভুবনেশ্বরের অ্যাপোলো হাসপাতালে সুদীপের চিকিৎসা সংক্রান্ত রিপোর্ট পেশ করে কে রাঘবচারুলু সওয়াল করেন,
এখনও পর্যন্ত অ্যাপোলো হাসপাতালে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের চিকিৎসার জন্য ১৪ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। তবে তাঁর কোনও বড় রোগের চিকিৎসা হচ্ছে এমন নয়। তৃণমূল সাংসদ হাসপাতালের স্যুইটে রয়েছেন।
১৪ লক্ষ টাকার মধ্যে শুধু ঘরভাড়া বাবদই দেওয়া হয়েছে ১১ লক্ষ টাকা। আর বাকি ৩ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে ফিজিওথেরাপি, ম্যাসাজ এবং কিছু ওষুধের জন্য। তা-ও সেগুলি গ্যাসের ওষুধ, পেনকিলার।
সবশেষে সিবিআইয়ের আইনজীবী দাবি করেন, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় হাসপাতালযাপন উপভোগ করছেন।
যদিও, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী তথা তৃণমূল বিধায়ক নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি,২০১৪ থেকে ২০১৬-র মধ্যে কলকাতা ও দিল্লি মিলিয়ে সুদীপকে অন্তত ৬ বার হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। ২০১৪-তে তাঁর প্যানক্রিয়াটাইটিস ধরা পড়ে। ২০১৬-তে একবার সংসদ চলাকালীন অসুস্থ হয়ে পড়েন সুদীপ। সে সময় তাঁকে এইমস-এ ভর্তি করা হয়। তখন হৃদযন্ত্রেও সমস্যা ধরা পড়ে। গ্রেফতারের পর থেকে সুদীপের ১৬ কেজি ওজন কমে গিয়েছে।
সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে মুখ্যমন্ত্রীর দেখতে আসাকেও এদিন জামিনের বিরোধিতায় হাতিয়ার করে সিবিআই।
সিবিআইয়ের আইনজীবী এদিন এই দাবিও করেন, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় একসময় সংসদের ফিনান্স কমিটির সদস্য ছিলেন। আর সেবি, আরবিআইয়ের কার্যকলাপের ওপর নজর রাখে এই কমিটি। রোজভ্যালির ওপর নজরদারির ক্ষেত্রেও সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় কোনও প্রভাব খাটিয়েছেন কিনা, তা খতিয়ে দেখতে হবে।
সিবিআইয়ের আইনজীবী এদিন বিচারপতিকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের প্রায় ৫০টি ছবি দেখান, যেখানে রোজভ্যালি কর্ণধার গৌতম কুণ্ডু এবং তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে একসঙ্গে দেখা গিয়েছে।
সওয়াল জবাব শোনার পর অবশ্য বিচারপতি নির্দেশ স্থগিত রেখেছেন।