বাঁকুড়া: করোনাকালে ৮ মাস বন্ধ থাকার পর প্রথম রাজনৈতিক জনসভায় বিজেপিকে তীব্র আক্রমণ করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাঁকুড়ার শুনুকপাহাড়ির ওই সভায় একযোগে আক্রমণ করলেন বামেদেরও। জানালেন, সিপিএমের হার্মাদরা আজ বিজেপির হার্মাদে পরিণত।


শুনুকপাহাড়ি হাটের মাঠে জনসভার আয়োজন করা হয়। সেখানে তৃণমূলনেত্রী বলেন, ‘বাঁকুড়ায় একসময় সিপিএম অত্যাচার করত। বহু মানুষ ঘরছাড়া ছিল। জঙ্গলমহলের মানুষ ভয়ে বেরোতে পারত না। বাঁকুড়া কী সেই ভয়ের দিনগুলো ভুলে গিয়েছে?’


মমতার দাবি করেন, ‘বাঁকুড়া এখন শান্তিতে আছে। সিপিএমের হার্মাদরা আজ বিজেপির হার্মাদ। রঙটা শুধু পরিবর্তন হয়েছে, বাকিটা এক আছে।’


বছর ঘুরলেই বিধানসভা ভোট। করোনা আবহে মার্চ থেকে বন্ধ ছিল সভা-সমাবেশ। প্রায় ৮ মাস পর, বাঁকুড়াতেই প্রথম রাজনৈতিক সভা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।


সেখান থেকেই একযোগে বিজেপি থেকে বাম-- সব বিরোধীদের একসুরে আক্রমণ করেন। বলেন, ‘আপনার সব ওরা লুটে নেবে। কোনও কোনও পুলিশকে টাকা দেওয়া হচ্ছে।


তৃণমূলনেত্রী বলেন, সিপিএম লোভী, বিজেপি ভোগী, তৃণমূল ত্যাগী। বাঁকুড়ায় একটা আসনও পাবে না বিরোধীরা। বিজেপির পায়ে পড়েছে সিপিএম, লজ্জাও নেই!’


এদিন বিজেপির দিকে খোলা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন তৃণমূলনেত্রী। বলেন, ক্ষমতা থাকে তো জেলে ভরো। তিনি বলেন, ‘সারদা-নারদা থেকে বাঁচতে বিজেপির পায়ে তৃণমূল। ক্ষমতা থাকলে জেলে ভরো, জেলে থেকে জেতাব।’


কেন্দ্রের সমালোচনাও করেন মমতা। বলেন, ৪০ শতাংশ বেকার বাড়িয়েছে এই কেন্দ্রীয় সরকার। কয়লা খনি বেচছে, ডিএ বন্ধ করে দিয়েছে। ১০০ দিনের টাকা সুদে খাটাচ্ছে, তিনমাস পর দিচ্ছে।


মমতার দাবি, রাজ্যে আগামীদিন বিরোধী-শূন্য হবে। তিনি বলেন, আগামী দিনে রাজ্যে বিজেপি-সিপিএম-কংগ্রেস হবে নির্মূল। বিজেপি মিথ্যার ডাস্টবিন হয়ে গিয়েছে। বিজেপি ৩৬৫ দিন মানুষকে বোকা বানায়।


এখানেই থেমে থাকেননি তিনি। কেন্দ্রের কৃষি নীতির সমালোচনা করে বলেন, ‘চাষীদের আলু-পেঁয়াজ লুঠ করছে। বিজেপি দেশের সবথেকে বড় অভিশাপ। বিজেপিকে জব্দ করতে হবে।


উল্টোদিকে, তৃণমূল সরকার মানবিক সরকার বলেও মনে করিয়ে দেন। বলেন, আমাদের সরকার মানবিক সরকার, সামাজিক সরকার। তৃণমূল দেশকে টুকরো করতে দেবে না।


তৃণমূলনেত্রী মনে করিয়ে দেন, দলে কারও ভুল চোখে পড়লে তিনি তাঁকে সরে যেতে নির্দেশ দেন। বলেন, ‘ ব্যক্তিগত ভুল থাকতে পারে। রিপোর্টকার্ডে ভুল থাকলে বলি দল থেকে সরে যেতে।’


তিনি জানান, দলে কে কার সঙ্গে সম্পর্ক রাখছে, সব তিনি নজরে রাখছেন। বলেন, দলে থেকে কারা যোগাযোগ করছেন সব নজর রাখছি। সরকারের মতই দলটাকেও গুরুত্ব দিয়ে দেখব। এটা ভাববেন না দিদি জানে না, দিদি জানে।


তিনি যোগ করেন, ‘ ধান্দাবাজদের একটা গোষ্ঠী আছে। তাদের সংখ্যা খুবই কম। রাতের অন্ধকারে কে কার বাড়ি যাচ্ছে খেয়াল রাখুন।’


সাম্প্রতিক বাঁকুড়া সফরে এসে তফশিলি গৃহে মধ্যাহ্নভোজন করেন অমিত শাহ। এদিন সেই নিয়ে তীব্র কটাক্ষ করেন তিনি। বলেন, তফশিলি বাড়িতে রান্না করে নিয়ে এসে খেয়েছেন অমিত শাহ। ‘পাঁচতারা হোটেল থেকে এসেছে খাবার।’


মমতা জানান, ‘বাঁকুড়ায় চারটি মাল্টি স্পেশালিটি হাসপাতাল হয়েছে। ৩৫-৪০ কোটি টাকা ভাড়ায় ৩০০ ট্রেনে পরিযায়ীদের ফিরিয়েছি।’ তাঁর প্রতিশ্রুতি, ‘অনুর্বর জমি উর্বর করে ২৫ লক্ষ যুবক-যুবতীদের চাকরি দেব।’