সমীরণ পাল, উত্তর ২৪ পরগনা: কারও ঘর ডুবেছে। কারও আত্মীয়ের খোঁজ নেই। কেউ দোকানের জিনিসপত্রগুলো বাঁচানোর প্রাণপন চেষ্টা করে যাচ্ছেন। উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালির বিভিন্ন এলাকায় মানুষের চূড়ান্ত অসহায়তার দৃশ্য উঠে এল।
সাইক্লোন ইয়াস আর ভরা কটাল, বাস্তবিকই একরাশ হতাশা আর দুর্ভাবনা বয়ে আনল সন্দেশখালির মানুষের জন্য। জলের তলায় চলে গেছে একের পর এক গ্রাম।
এক বুক জল ঠেলে, আটকে পড়া গ্রামবাসীদের উদ্ধার করলেন এনডিআরএফ জওয়ানরা। অ্যাডভেঞ্চারের খোঁজে যাঁরা সুন্দরবনে যান, তাঁরা কলাগাছি - বিদ্যাধরী - রায়মঙ্গলের এই ভয়াল রূপ দেখে হয়ত ভীত হতেন। কোথাও ফুঁসতে থাকা নদী বাঁধের মাটি খাচ্ছে। কোথাও মাটি আলগা হয়ে হুড়মুড়িয়ে গ্রামে ঢুকছে নদীর জল।
কলকাতা থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে সন্দেশখালি। নদী দিয়ে ঘেরা সন্দেশখালি ১ ও ২ নম্বর ব্লক মিলিয়ে আতাপুর, তুষখালি, জেলিয়াখালি, ধামাখালি, ন্যাজাট-সহ বিভিন্ন গ্রামের অধিংকাশ বাসিন্দাদেকেই ইতিমধ্যেই সরানো হয়েছে নিরাপদ আশ্রয়ে।
ধামাখালি-সরবেড়িয়া রাস্তার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে কলাগাছি-বিদ্যাধরীর জলস্রোত। জলের স্রোত এতই তীব্র যে একটু এদিক-ওদিক হলেই ভেসে যাওয়ার আশঙ্কা।
তার মধ্যেই গ্রামে আটকে পড়া বাসিন্দাদের এক এক করে বাসিন্দাদের উদ্ধার করে এনডিআরএফ। উদ্ধার করতে লম্বা একটি দড়ি গাছের সঙ্গে বেধে সেটা ধরেই এক এক করে বাসিন্দাদের গ্রামের ভিতর থেকে বের করে আনেন জওয়ানরা।
ধামাখালিতে এনডিআরএফ নেমে গ্রামবাসীদের উদ্ধার করে। এক বাসিন্দা জানান, খুবই খারাপ অবস্থা। বহু লোক বাড়িতে আটকে। ঘরে ৬-৭ ফুট উঁচু জল।
বিদ্যাধরীর জলে ঘর ডুবেছে এক মহিলার। এনডিআরএফ-এর কর্মীরা কোনওক্রমে তাঁকে উদ্ধার করেছেন। কিন্তু, বৃদ্ধ বাবা আর বোন তখনও ঘরে আটকে।
চাষের জমি চলে গেছে জলের তলায়। মাছের ভেড়ি তলিয়ে গেছে জলের তলায়। বাজার-হাট - সব এখন জলের তলায়। আমফানের ক্ষত শুকতে না শুকতেই আবার একটা ধাক্কা। ননদীর ধারে দুর্ভাবনা নিয়েই জীবনযুদ্ধ চলছে এই মানুষগুলোর।