বিটন চক্রবর্তী, পূর্ব মেদিনীপুর: ইয়াসের প্রভাবে বুধবার সকাল থেকে ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছিল পূর্ব মেদিনীপুরের হলদি নদী। রাস্তা পেরিয়ে একের পর এক গ্রাম ভাসিয়ে দিয়েছে হলদির জল। নদীর জলে ভেসে গেছে হলদিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকা। 


নদী উত্তাল হতেই, কেউ কেউ দড়ি দিয়ে আস্ত দোকান বেঁধে রাখার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু পরে যে পরিস্থিতি এতটা খারাপ হবে তা কি কেউ বোধহয় কেউ-ই আন্দাজ করতে পারেননি। 


কোথাও নদীর জলস্তর এমন উচ্চতায় পৌঁছেছে যে, তালগাছের শুধু মাথাটা দেখা গেছে।  হলদির জলে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন ২১ ও ২২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। কোমর সমান জলে ক্ষতি হয়েছে বহু কাঁচা বাড়ির। উদ্ধারকাজে নামে এনডিআরএফ।


শুধু হলদিয়া নয়, হলদি নদীর জলে ভেসে গিয়েছে নন্দীগ্রামের একাধিক গ্রামও। উপকূলরক্ষী বাহিনী হোভারক্রাফটে করে সেখানকার বাসিন্দাদে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যায়। 


নয়াচরে রেসকিউ সেন্টারে, যেখানে অনেককে আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল, সেখানেও জল ঢুকে পড়ে।  এদিন নিজের এলাকার বিপর্যস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ান চণ্ডীপুরের তৃণমূল বিধায়ক সোহম চক্রবর্তী। এক হাঁটু জলে নেমে বিপর্যস্ত মানুষের কাছে পৌঁছে যান তিনি। সবাই নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার জন্য আর্জি জানান স্থানীয় বিধায়ক। 


র্ণিঝড়ের সবথেকে বেশি প্রভাব পড়েছে পূর্ব মেদিনীপুর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায়। বাংলা-ওড়িশা সীমানায় উদয়পুর সমুদ্র সৈকত। ভেঙে পড়ে ওয়াচ টাওয়ার। উড়ে যায় আশপাশের দোকানের টিনের ছাউনি। ভেঙে পড়েছে সমুদ্র তীরবর্তী বহু দোকান। বোল্ডারের বড় বড় পাথর উড়ে এসে পড়েছে রাস্তায়। ভেঙে গিয়েছে নৌকা। তার টুকরো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে সৈকত জুড়ে। 


মন্দারমণিতে প্রভাব দেখাতে শুরু করে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। আশপাশের হোটেলগুলোতে জল ঢুকে যায়। রাস্তা টপকে গ্রামগুলোতেও জল ঢুকতে শুরু করেছে। প্রবল ঝোড়ো হাওয়ায় উড়ে গিয়েছে বেশ কয়েকটি বাড়ির চাল। বহু বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত। 


ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের তাণ্ডবে লন্ডভন্ড হয় তাজপুর। হাওয়ার দাপটে গোড়া থেকে উপড়ে গিয়েছে অসংখ্য ঝাউগাছ। সমুদ্র তীরবর্তী রাস্তা দিয়ে বইছে জল। আশপাশের একাধিক গ্রামে বাড়িঘর, দোকান ভেসে গিয়েছে। শেষ সম্বল আর গবাদি পশুদের নিয়ে উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিয়েছেন বহু গ্রামবাসী। 


ঝোড়ো হাওয়ার দাপটে দিঘার কাছে রামনগর ২ নম্বর ব্লকের সতিলাপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ১১৬-র বি জাতীয় সড়কে গাছ উপড়ে বিপত্তি। দ্রুত এলাকায় পৌঁছে গাছ কেটে রাস্তা পরিষ্কারের কাজ শুরু করে এনডিআরএফ।