ডায়মন্ডহারবার: ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা। বহু মানুষ ঘর ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছেন ত্রাণশিবিরে। ডায়মন্ড হারবারের ২টি ত্রাণশিবির ঘুরে দেখলেন সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
উল্লেখ্য, ইয়াসের ধাক্কায় লন্ডভন্ড পূর্ব মেদিনীপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগণার বিস্তৃণ এলাকা। উত্তর ২৪ পরগণাতেও প্রভাব পড়েছে ভয়াবহ। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকাগুলি আকাশপথে পরিদর্শনে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার সাগর, হিঙ্গলগঞ্জ দিঘা পরিদর্শনে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সাগর ও দিঘাতে প্রশাসনিক বৈঠকও করবেন তিনি।
ইয়াস আছড়ে পড়ার আগেই গতকালই দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাগরদ্বীপে তীব্র জলোচ্ছ্বাস দেখা যায়। সমুদ্র বাঁধ ভেঙে একের পর এক গ্রাম এখন জলের তলায় চলে যায়। মণি নদীর জল ঢুকে পড়ে রায়দিঘিতে। কাকদ্বীপের গোবর্ধনপুরও জলমগ্ন হয়ে যায়। নদী ও সমুদ্রপাড়ের বাসিন্দাদের নিয়ে যাওয়া হয় ফ্লাড সেন্টারে।
ঘূর্ণিঝড় আসার আগে গতকালই নদীবাঁধ বসে বিপত্তি দেখা যায় দক্ষিণ ২৪ পরগনায় গোসাবায়। বাঁধ মেরামতিতে হাত লাগান এলাকার বাসিন্দারা। ক্যানিংয়ে মাতলা নদীর জল ঢুকে প্লাবিত হয়েছিল গ্রাম।
এদিন ইয়াস আছড়ে পড়ার পর বাসন্তীর বিদ্যাধরী নদীতে জলস্তর বাড়ায় মনসাখালি গ্রাম পঞ্চায়েতের বেশ কয়েকটি গ্রাম জলমগ্ন হয়ে পড়ে। পঞ্চায়েতের উদ্যোগে গ্রামবাসীদের নিয়ে চলে নদী বাঁধে মাটি ফেলার কাজ। 
গোসাবায় বিদ্যাধরী নদীর বাঁধ ভেঙে রাঙাবেলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের একাধিক গ্রাম জলমগ্ন হয়ে পড়ে। কয়েকশো গ্রামবাসী আটকে পড়েন। উদ্ধারকাজে নামেন গোসাবার বিডিও। গ্রামে গ্রামে গিয়ে মাইকে প্রচার করে ত্রাণ শিবিরে যাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। 
ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের তাণ্ডবে গোসাবার বহু গ্রাম প্লাবিত হয়ে পড়ে। বহু জায়গায় কোমর-সমান জল জমে যায়।  অন্যদিকে, জলোচ্ছ্বাসের জেরে গোসাবার গোমর নদীতে জলস্তর বাড়ায় বেশ কিছু জায়গায় নদী বাঁধে ধস নেমেছে। জলমগ্ন গোসাবা পাখিরালয়ের একাংশ। দয়াপুর খেয়াঘাট সংলগ্ন নদী বাঁধে মাটিবোঝাই বস্তা ফেলার কাজ চলে। হাত লাগান গ্রামবাসীরা। 
প্লাবিত হয়ে পড়ে ডায়মন্ড হারবার পুর এলাকা। ১ নম্বর ওয়ার্ডে কোমর-সমান জল। উদ্ধারকাজে নামেন মহকুমাশাসক নিজেই। হাতানিয়া-দোয়ানিয়া নদীর বাঁধ ভেঙে প্লাবিত নামখানার একাংশ ও দ্বারিকনগর গ্রাম। বিপর্যয়ের কবলে প্রায় ৩ হাজার পরিবার। 
রায়দিঘির কৈলাসপুর গ্রামে মৃদঙ্গভাঙা নদীতে বাঁধে ফাটল দেখা যায়। বাঁধ সারানোর কাজ শুরু করেন গ্রামবাসীরা। 
এর পাশাপাশি, রায়দিঘির মণি ও ঠাকুরাইন নদীর বাঁধ উপছে জল ঢোকে একাধিক গ্রামে। জলমগ্ন এলাকা ঘুরে দেখেন রায়দিঘির তৃণমূল বিধায়ক অলোক জলদাতা। 
দক্ষিণ ২৪ পরগনার ফ্রেজারগঞ্জে উত্তাল হয়ে ওঠে সমুদ্র। হু হু করে আশপাশের গ্রামগুলোতে জল ঢুকতে শুরু করে। জলের তোড়ে উল্টে যায় পে লোডারের মতো ভারী যন্ত্রও। আশপাশের বাড়িগুলো জলমগ্ন হয়ে পড়ে। বেশ কয়েকটি পরিবার আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে। গবাদি পশুদের নিয়ে বাড়ি ছাড়েন তাঁরা। জলের তোড়ে রাস্তার বহু জায়গায় ফাটল দেখা দিয়েছে।  
ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাব। প্রবল সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসের কারণে গঙ্গাসাগরে কপিলমুনির আশ্রমে বুক-সমান জল জমে যায়। বাঁধ ভেঙে প্লাবিত সাগরের বঙ্কিমনগর।
ঘূর্ণিঝড় ইয়াস আসার আগেই গঙ্গাসাগরে মুড়িগঙ্গা নদীর বাঁধের একাংশ ভেঙে প্লাবিত শীলপাড়া-সহ বেশ কয়েকটি গ্রাম। প্রায় ৫০০-৬০০ বাড়ি জলমগ্ন। 
এদিন ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের তাণ্ডবে লন্ডভন্ড ওড়িশার বালেশ্বর। সকাল সোয়া ৯টা নাগাদ ল্যান্ড ফল হয় ধামড়ার কাছে। প্রায় ৪ ঘণ্টা ধরে চলে ল্যান্ড ফল প্রক্রিয়া। দুপুর ১টা ৯ মিনিটে এই প্রক্রিয়া শেষ হয়।  সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ ল্যান্ড ফলের সময় কলকাতায় ঝড়ের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার।ঘূর্ণিঝড়ের সবথেকে বেশি প্রভাব পড়েছে পূর্ব মেদিনীপুর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায়। দিঘায় সকাল সাড়ে ৯ টায় ইয়াসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৮৮ কিলোমিটার। ওই সময়ে ফ্রেজারগঞ্জে ঝড়ের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৬৮ কিলোমিটার।আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, আগামী ৯ ঘণ্টা ধরে ধীরে ধীরে শক্তিক্ষয় করে কমবে ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা। ইয়াসের প্রভাবে আগামীকাল রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চল ও উত্তরবঙ্গের কয়েকটি জেলায় ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি করা হয়েছে।