কলকাতা: প্রকৃতির বুকে আরও একটা দুর্যোগের ঘনঘটা। আবহাওয়া দফতর সূত্রে খবর, বুধবার বেলা ১২টা নাগাদ ওড়িশার বালেশ্বরের কাছে স্থলভাগে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস-এর আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা। 


তার আগে এখন শুধুই আতঙ্কের প্রহর গোনা। এই পরিস্থিতিতে তার আগে আজ বেশ কয়েকটি জেলায় বন্যার সতর্কবার্তা জারি করল সরকার। 


পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, মুর্শিদাবাদ, হুগলি, পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়ায় জারি হয়েছে সতর্কবার্তা। নবান্ন থেকে সংশ্লিষ্ট জেলাশাসকদের সবরকম প্রস্তুতি সেরে রাখতে বলা হয়েছে। 


আশঙ্কা, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে প্রবল বৃষ্টিতে বাড়তে পারে জলস্তর।  সূত্রের খবর, সেরকম পরিস্থিতি হলে জল ছাড়তে পারে ডিভিসি-ও।  সেইকারণে জারি হল বন্যা সতর্কতা।


অতীতের থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার আরও বেশি করে প্রস্তুত প্রশাসন। জোয়ারের জন্য মঙ্গলবার সকাল থেকে  জল বাড়ছে হুগলি নদীতে। আমফান থেকে শিক্ষা নিয়ে বিপর্যয় এবং প্রাণহানি এড়াতে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিল রিষড়া পুরসভা। এদিন পুরসভার উদ্যোগে নদী পাড়ের দেড়শো পরিবারকে ত্রাণ শিবিরে পাঠানো হয়। 


ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে হুগলি জেলায়। ঝড় মোকাবিলায় কোনওরকম ফাঁক রাখছে না হুগলি জেলা প্রশাসন। ধনেখালিতে শতাধিক স্কুলে ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। পান্ডুয়ায় কাঁচা বাড়ির বাসিন্দাদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ফ্লাড সেন্টারে।


ঘূর্ণিঝড় নিয়ে আতঙ্কে বীরভূমবাসী। একদিকে বয়ে গেছে অজয় নদ...অন্যদিকে হিংলো নদী! নদীবাঁধের পাশেই বীরভূমের দুবরাজপুরের এই দেবীপুরচরে প্রায় ৭৫ পরিবারের বসবাস। বিপদ এড়াতে প্রশাসনের তরফে দেবীপুরচর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৈরি রিলিফ সেন্টারে আনা হয় তাঁদের। 


ভয়-আতঙ্কের একই ছবি পূর্ব বর্ধমানেও। ভাগিরথীর একদিকে কাটোয়া অন্যদিকে নদিয়ার কালীগঞ্জ থানার বিভিন্ন এলাকা। মঙ্গলবার সকাল থেকেই কাটোয়া থানার তরফে লঞ্চে টহলদারি চলে। বিপদজনক এলাকা থেকে সরে আসার জন্য মাইকে প্রচার চালানো হয়। 


যেকোনও ধরণের বিপদ এড়াতে মঙ্গলবার থেকেই কাটোয়া- বল্লভপাড়া ও কাটোয়া-শাঁখাই-এর চারটি ফেরিঘাট বন্ধ রাখা হয়েছে। অন্যদিকে পশ্চিম বর্ধমানের দামোদর ও অজয়ের তীরবর্তী কাঁকসা, পাণ্ডবেশ্বর, অন্ডালের কাঁচা বাড়িতে থাকা মানুষদের স্থানীয় স্কুলে সরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হয়। 


মঙ্গলবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপের মুড়িগঙ্গা নদীর বাঁধ পরিদর্শন করেন স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক মন্টুরাম পাখিরা। বর্তমানে এই বাঁধের অবস্থা খুব ভাল নয়। জায়গায় জায়গায় সরে যাচ্ছে মাটি। ইয়াসের দাপটে এই বাঁধ ভেঙে গেলে কাকদ্বীপের একটা বড় অংশ ভেসে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।


এই পরিস্থিতিতে এদিন সেচ দফতর-সহ প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে নিয়ে এলাকায় যান মন্টুরাম পাখিরা। বিপদ এড়াতে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেন আধিকারিকদের। এরপর মধুসূদনপুরে একটি আশ্রয় শিবির ঘুরে দেখেন তৃণমূল বিধায়ক। কথা বলেন আশ্রয় নেওয়া গ্রামবাসীদের সঙ্গে।