সুমন ঘড়াই, ঋত্বিক মণ্ডল ও সুনীত হালদার, কলকাতা: আমফান থেকে শিক্ষা নিয়ে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের মোকাবিলায় তৈরি হচ্ছে প্রশাসন। দুর্যোগের আঁচ পড়লে, দ্রুত কলকাতা শহরকে সচল করে তোলার চ্যালেঞ্জ পুলিশের সামনে। তাই প্রস্তুত ২০টি বিপর্যয় মোকাবিলা দল। সতর্ক রিভার ট্রাফিক পুলিশও। আগামী বুধবার উপান্নের বিশেষ কন্ট্রোল রুমে থাকতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
দিনটা ছিল ২০ মে, ২০২০। সেদিনও লকডাউনে বন্দি কলকাতা-সহ উপকূলবর্তী জেলাগুলিতে তাণ্ডব চালিয়েছিল ঘূর্ণিঝড় আমফান। এবার ইয়াসের আগমনের খবরে ফিরে আসছে সেই আতঙ্ক। দুঃস্বপ্নের বর্ষপূর্তিতে আবারও একটা দুর্যোগের আশঙ্কা। ধেয়ে আসছে ইয়াস। অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে তাই আগেভাগেই তৈরি কলকাতা পুলিশ। সূত্রের খবর, কলকাতা পুলিশের ২০টি বিপর্যয় মোকাবিলা দলকে তৈরি রাখা হয়েছে। প্রত্যেক দলে থাকছেন পাঁচজন করে সদস্য। ডিসি কমব্যাটের অধীনে তাঁরা কাজ করবেন। তৈরি রাখা হয়েছে গাছ কাটার অত্যাধুনিক যন্ত্র। সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে রিভার ট্রাফিক পুলিশকেও। গঙ্গাবক্ষে নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে। গঙ্গায় অপেক্ষমান জলযানগুলিতে একাধিক নোঙর ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি কলকাতা পুরসভার সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছে কলকাতা পুলিশ।
এ বিষয়ে বিপর্যয় মোকাবিলা মন্ত্রী জাভেদ খান জানিয়েছেন, ‘ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় আগাম সতর্কতা নিয়েছি। জেলাগুলিকে অ্যালার্ট করেছি। ইতিমধ্যেই বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর ও স্বাস্থ্য দফতরের ছুটি বাতিল হয়েছে। শেল্টার হোম, সাইক্লোন সেন্টারের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। স্কুল-কলেজগুলিকে তৈরি রাখা হয়েছে। মানুষজনকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত এখনও নেওয়া হয়নি। প্রস্তুতি আছে, পরিস্থিতির উপর নজর রাখছি।’
ইতিমধ্যেই দক্ষিণবঙ্গের উপকূলবর্তী জেলায় সতর্কতামূলক প্রচার চালাচ্ছে প্রশাসন। সতর্ক উপকূলরক্ষী বাহিনী। মৎস্যজীবীদের সমুদ্র থেকে ফেরানো হচ্ছে।
ইয়াস-সতর্কতায় শনিবার পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ ও আন্দামানের প্রশাসনিক কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেট সচিব রাজীব গৌবা। সূত্রের খবর, কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় ইয়াস মোকাবিলায় নামানো হচ্ছে এনডিআরএফ-এর ৬৫টি টিম। এনডিআরএফ-এর আরও ২০টি দলকে তৈরি রাখা হচ্ছে। নজরদারি ও উদ্ধারকাজে তৈরি বায়ুসেনার হেলিকপ্টার। এছাড়াও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, কোভিড বিধি মেনে দুর্গত মানুষদের রাখতে ব্যবস্থা নিতে হবে। পর্যাপ্ত পানীয় জল, ওষুধ, শুকনো খাবার, ত্রিপল, মাস্ক, স্যানিটাইজার মজুত রাখতে বলা হয়েছে। এর পাশাপাশি ভাঙা গাছ দ্রুত সরিয়ে ফেলা, বিদ্যুৎ পরিষেবা বন্ধ হলে তা দ্রুত ঠিক করার মতো বিষয়গুলি নিয়ে রাজ্য সরকারকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপর নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র।
এদিকে, নবান্ন সূত্রে খবর, উপান্ন ভবনে বিশেষ কন্ট্রোল রুম খোলা হচ্ছে। ঝড় যেদিন রাজ্যে আছড়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা, সেইদিন অর্থাৎ আগামী বুধবার রাতে মুখ্যমন্ত্রী থাকতে পারেন উপান্নে। সেই মতো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এদিনই লুধিয়ানা থেকে হাওড়ায় এসে পৌঁছয় এনডিআরএফ-এর দল।