দার্জিলিং: মোর্চার জঙ্গি আন্দোলনের পর থমথমে পাহাড়। একদিকে যেমন সাদা কুয়াশায় মুখ ঢেকেছে কাঞ্চনজঙ্ঘা, অন্যদিকে তেমন পর্যটকদের মনে আশঙ্কার কালো মেঘ! বেড়ানোর আনন্দ, বদলে গিয়েছে আতঙ্কে। বৃহস্পতিবারের জঙ্গি আন্দোলনের পর শুক্রবার ১২ ঘণ্টার বন্‍ধ। স্বস্তি-শান্তির খোঁজে পাহাড়ে এসে অশান্তির সম্মুখীন হাজার হাজার পর্যটক।
এদিন সকাল থেকেই তাই পাহাড়ের মুখ ভার। কিন্তু পর্যটকদের ভরসা যোগাতে সকাল সকাল ম্যালে হাজির মুখ্যমন্ত্রী! ঘড়িতে তখন সকাল সাড়ে ৭টা। রিচমন্ড হিল থেকে হাঁটতে হাঁটতে ম্যালে পৌঁছন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পর্যটকরা যে আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন, বুঝতে অসুবিধা হয়নি মুখ্যমন্ত্রীর। তাই নিজে থেকেই দিলেন অভয়বাণী। পর্যটকদের কাছে এসে বললেন, ভয়ের কিছু নেই।
মোর্চার ডাকা বনধে পাহাড়কে সচল রাখার ব্লুপ্রিন্ট এদিন সকালেই রিচমন্ড হিলে বসেই ঠিক করে নেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, ডিজির সঙ্গে সেরে নেন এক প্রস্থ আলোচনা।
এরপরই পর্যটকদের শঙ্কা দূর করতে পাহাড়ে বেরিয়ে পড়েন মুখ্যমন্ত্রী। গাড়িতে চড়ে ঘোরেন দার্জিলিঙের আনাচ-কানাচে। নিজে মাইকিংও করেন তিনি। পর্যটকদের উদ্দেশ্যে বলেন, চিন্তার কোনও কারণ নেই, ডোন্ট ওরি। বেশিরভাগ পর্যটকের মধ্যেই যখন পাহাড় ছাড়ার হিড়িক, তখন ভিন্ন ছবিও দেখা গেল। মমতাকে একজন বলছে দিদি উই ওয়ান্ট টু স্টে। উত্তরে মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের অনুরোধ করেন, প্লিজ স্টে।
পর্যটনের এই ভরা মরসুমে মোর্চার আন্দোলনে, আদতে যে পাহাড়বাসীরই ক্ষতি এদিন তা বুঝিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, ইন্টারন্যাশনাল জায়গা থেকে কত লোক আসে। প্রচুর ট্যুরিস্ট এসেছে এবার। এই ঘটনা ঘটিয়ে মানুষকে বিপদে ফেলা। এটা দেউলিয়াপনা। মানুষ ভীষণ রেগে আছে। বুঝতে পারিনি, কেন এটা করল। লক্ষ্মী না থাকলে ব্যবসা চলবে কোথা থেকে?
যদিও পর্যটকদের গায়ে যাতে কোনও আঁচ না পড়ে, সেজন্য উদ্যোগী রাজ্য সরকার। পর্যটকদের কলকাতায় ফেরাতে, শুক্রবার ও শনিবার, সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ২ ঘণ্টা অন্তর ফ্রিতে বিশেষ বাসের বন্দোবস্ত করেছে এনবিএসটিসি। শিলিগুড়ির তেনজিং নোরগে বাস স্ট্যান্ড থেকে মিলছে কলকাতায় ফেরার বাস।
শুধু তাই নয় পর্যটকদের দার্জিলিং থেকে শিলিগুড়ি আনতে ৯টি বাস ও ২৮টি গাড়িরও বন্দোবস্ত করা হয়েছে। দার্জিলিং বাস স্ট্যান্ডে খোলা হয়েছে হেল্প ডেস্কও। যে সব পর্যটক ফিরতে চাইছেন, তাঁদের নাম নথিভুক্ত করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি রাজ্য সরকারের অনুরোধে এদিন সকাল ৬টা থেকে খুলে দেওয়া হয় বাগডোগরা বিমানবন্দর। পর্যটকদের কলকাতায় ফেরাতে শনিবার দুপুর ৩টে ৪০ ও সন্ধে ৬টা ৪৫-এ বাগডোগরা থেকে বিশেষ বিমানের ব্যবস্থা করা হয়।
পর্যটকদের এখন একটাই কামনা, নিরাপদে যত দ্রুত সম্ভব বাড়িতে ফেরা! তবেই হবে আতঙ্ক-মুক্তি।