জলপাইগুড়ি ও দার্জিলিং: মোর্চার ‘কালা দিবস’ পালন ঘিরে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার সবরকম উপাদানই মজুত ছিল। কিন্তু পুলিশ-মোর্চা দু’পক্ষই সংযম দেখানোয়, রবিবার বড়সড় অশান্তি এড়ানো সম্ভব হল।
গুলিতে ৩ দলীয় সমর্থকের মৃত্যুর প্রতিবাদে শনিবারই কর্মসূচি ঘোষণা করে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। দেহ নিয়ে চকবাজার থেকে সিংমারি পর্যন্ত মিছিলের ডাক দিয়েছিল তারা। সেকথা মাথায় রেখে এদিন, সকাল থেকেই চকবাজারে সেনা টহল শুরু হয়। গোটা চকবাজারকে ঘিরে ফেলে পুলিশ, র‌্যাফ, সিআরপিএফ-এর বিশাল বাহিনী।
সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ, জজবাজার থেকে চকবাজারের দিকে একটি মৌন মিছিল আসতে দেখা যায়। সামিল হন পাহাড়ের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষজন। মিছিলে মহিলাদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো!
স্থানীয় ব্যবসায়ী মোস্তাক ওসমানি বলেন, আমরা গোর্খা মুসলিম। এই হিংসা হত না, যদি না পুলিশি দমন পীড়ন হত। আমরা মনে করি গোর্খ্যান্যাল্ড হওয়া উচিত।
এরপর পাহাড়ে বসবাসকারী অন্য সম্প্রদায়ের মানুষও চকবাজারে আরেকটি মিছিল বের করেন। বেলা সাড়ে ১২টায় তিনটি দেহ নিয়ে চকবাজারে হাজির হয় মোর্চার মূল মিছিল! তাদের মিছিলের সঙ্গে অন্য সম্প্রদায়ের মিছিল দুটিও মিশে যায়।
পুলিশ যেমন মোর্চার এই প্রতিবাদ মিছিলে বাধা দেয়নি। মোর্চাও তেমনই উর্দিধারীদের ওপর চড়াও হয়নি। তবে তাদের স্লোগানে ছিল চড়া সুর। এভাবেই কেটে যায় প্রায় আড়াই ঘণ্টা। এরপর মিছিল নিয়ে সিংমারির দিকে চলে যায় মোর্চা। দলীয় সমর্থকদের মৃত্যু নিয়ে রাজ্য সরকারকে এদিনও নিশানা করেছে তারা।
গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা বিধায়ক অমর রাই বলেন, ৩ সমর্থকের জীবন গিয়েছে। তারপরেও মুখ্যমন্ত্রী বলছেন মোর্চাই মেরেছে। একথা তিনি কী করে বলছেন জানি না।
তবে, দার্জিলিঙে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটলেও রবিবার কালিম্পং বাজারে সরকারি গ্রন্থাগারে আগুন লাগানো হয়। কালিম্পংয়েরই পেডং বাজারে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে পুলিশের গাড়ি। অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে গরুবাথানের দুটি পঞ্চায়েত অফিসে।
এদিন ১২ ঘণ্টার ডুয়ার্স বনধের ডাক দিয়েছিল মোর্চা নেতৃত্ব। যদিও মালবাজার, ধূপগুড়ি, বিন্নাগুড়ি, গয়েরকাটা-সহ একাধিক জায়গায় জনজীবন ছিল স্বাভাবিক। জলপাইগুড়ি শহর থেকে ডুয়ার্সে যে সব যানবাহন যায়, এদিন সেসবও চলেছে। তবে, বানারহাট ও চামুর্চি এলাকায় দোকানপাট বন্ধ ছিল।
বনধের সমর্থনে কিছু জায়গায় রাস্তা অবরোধ করে মোর্চা। নাগরাকাটার সিপচুতেও বিক্ষোভ দেখানোর পরিকল্পনা ছিল মোর্চার। ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে, আন্দোলন চলাকালীন এই সিপচুতেই ৩ জন মোর্চা সমর্থকের মৃত্যু হয়েছিল। এই জায়গা বরাবরই মোর্চার ঘাঁটি বলে পরিচিত। কিন্তু এদিন সকাল থেকে বিশাল বাহিনী নিয়ে সিপচুতে ঘাঁটি গেড়েছিল পুলিশ। তাই পাহাড় থেকে আর নামতে পারেননি মোর্চা সমর্থকরা। এই পরিস্থিতিতে, মোর্চাকে হুঁশিয়ারি দিয়েছে আদিবাসী বিকাশ পরিষদ।
আলিপুরদুয়ার শহরও স্বাভাবিক ছিল মোর্চার বনধে। তবে কালচিনি, জয়গাঁ, মাদারিহাট, বীরপাড়া-সহ কয়েকটি জায়গায় বনধের আংশিক প্রভাব পড়েছিল। রাস্তায় দেখা মেলেনি বেসরকারি যানবাহনের। সরকারি বাস চললেও তা ছিল হাতেগোনা। জয়গাঁ, দলসিংহপাড়া সহ একাধিক জায়গায় রাস্তায় বসে বিক্ষোভ দেখান মোর্চা সমর্থকরা।
গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে, রাজধানীতেও সুর চড়িয়েছে মোর্চা। রবিবার দিল্লির যন্তর মন্তরেও পোস্টার, প্লাকার্ড নিয়ে বিক্ষোভ দেখান মোর্চা সমর্থকরা। ওঠে পুলিশি নির্যাতনের অভিযোগ। যদিও রাজ্য প্রশাসনের দাবি, পুলিশ গুলি চালায়নি।