কলকাতা ও নয়াদিল্লি: আলোচনা চাইলে বন্‍‍ধ প্রত্যাহার করতে হবে, সরে আসতে হবে হিংসাত্মক আন্দোলনের পথ থেকে। বার্তা দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মমতা এদিন মোর্চার উদ্দেশ্যে বলেন, রাজনৈতিক দল হলে গণতান্ত্রিক পথে আসুক। আগে বনধ তুলুক। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হোক। আমাদের কথা বলতে আপত্তি নেই।

বার্তাটা স্পষ্ট, বনধের রাজনীতি এবং হিংসাত্মক আন্দোলন বন্ধ করলেই আলোচনায় বসবে রাজ্য সরকার। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা উড়িয়ে পাল্টা মোর্চার তরফে সহ সাধারণ সম্পাদক বিনয় তামাঙ্গ বলেন, রাজ্য নয়, কথা হবে কেন্দ্রের সঙ্গে ।

কিন্তু মোদী সরকার কি মোর্চার সঙ্গে আলোচনায় বসবে?

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক সূত্রে খবর, রাজ্য সরকার না চাইলে মোর্চা নেতৃত্বের সঙ্গে কোনও বৈঠক করবে না কেন্দ্রীয় সরকার। রাজ্য চাইলে তবেই ত্রিপাক্ষিক বৈঠক।

পাহাড় পরিস্থিতি নিয়ে এদিন ফোনে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর কথা হয়। সূত্রের খবর, রাজনাথ বলেন, বাংলা আবশ্যিক নয়, মোর্চার দাবি মেনে এই মর্মে নির্দেশিকা জারি করুক রাজ্য সরকার।যার প্রেক্ষিতে পাল্টা মুখ্যমন্ত্রী সাফ জানিয়ে দেন, বাংলাকে তো আবশ্যিকই করা হয়নি! তাহলে ‘বাংলা আবশ্যিক নয়’, এই মর্মে নির্দেশিকার কী প্রয়োজন?’

এদিকে, শনিবার মোর্চার জঙ্গি আন্দোলনের আঁচ পৌঁছেছে ডুয়ার্সেও। গরুবাথানে পুড়েছে বিদুৎ বণ্টন সংস্থার গাড়ি। পুলিশের দুটি গাড়ি জ্বালানো হয়েছে জলপাইগুড়ির জলঢাকা থানার সামনে।

অন্যদিকে, কাল সকাল দশটায় চকবাজারে জমায়েতের ডাক দিয়েছেন বিমল গুরুঙ্গ।

রাজ্য সরকার অবশ্য বুঝিয়ে দিয়েছে, আন্দোলনের নামে গুন্ডামি চললে তা কড়া হাতে দমন করা হবে। এদিন পাহাড়ের ১৫টি উন্নয়ন পর্ষদের প্রতিনিধি এবং পুলিশ প্রাসনের শীর্ষ কর্তাদের নিয়ে নবান্নে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। লেপচা উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
ওই কমিটিই পাহাড়ে শান্তি ফেরানোর প্রক্রিয়া চালাবে। পাশাপাশি চলবে উন্নয়নের কর্মসূচিও।
মোর্চার এই হিংসাত্মক আন্দোলনে তাঁদের যে সমর্থন নেই, নবান্নে পাশে বসে তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন লেপচা উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান আর এস তামসাং।

চলতি অশান্তির জেরে আদতে যে পাহাড়েরই ক্ষতি হচ্ছে, তাও বুঝিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, সব কিছু জ্বালিয়ে দিচ্ছে। দোকান, স্কুল, কলেজ বন্ধ। এরকম চললে রেশন কী করে পাঠাব? জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে আগুন, বিদ্যুত লাগবে না? হাসপাতালে আগুন, চিকিৎসা কী করে হবে? পর্যটন শিল্প ভেঙে পড়েছে। টানা বনধ করছে, কী ভাবে রেশন পাঠাব? ৮ তারিখ বিনা কারণে হামলা। ওরা যা খুশি করছে

রাজ্য সরকার যখন পাহাড়ের ১৫টি উন্নয়ন পর্ষদের নেতৃত্বকে শান্তি প্রতিষ্ঠায় নামাচ্ছে, তখন তার মোকাবিলায় গোর্খাল্যান্ড আবেগকেই উস্কে দিচ্ছে মোর্চা। বিবৃতি দিয়ে তারা জানিয়েছে, পাহাড়, তরাই ও ডুয়ার্সের তৃণমূল নেতৃত্ব এবং বিভিন্ন উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান ও পদাধিকারীদের কাছে অনুরোধ করা হচ্ছে, আপনারা যে সব পদে রয়েছেন, শনিবারের ঘটনার প্রতিবাদে সেই সব পদ থেকে অবিলম্বে ইস্তফা দিন। এটা কোনও রাজনীতি নয়, এটা গোর্খাল্যান্ডের জন্য অন্তিম যুদ্ধ।

মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য এ দিনও স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, কোনও ভাবেই তিনি বাংলা ভাগ হতে দেবেন না।