দার্জিলিং ও কলকাতা: পাহাড়ে অশান্তি শুরুর আগে অসম, নেপাল, এমনকী জম্মু-কাশ্মীরেও একাধিকবার ফোন করেছেন মোর্চা শীর্ষনেতৃত্ব। তদন্তে এমনই তথ্য উঠে এসেছে বলে গোয়েন্দা সূত্রে দাবি।
পাহাড়ের অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতিতে কাদের ষড়যন্ত্র রয়েছে কিনা দেখতে আলাদা আলাদাভাবে তদন্ত শুরু করে রাজ্য গোয়েন্দা পুলিশ এবং সিআইডি। সম্প্রতি সেই তদন্তের রিপোর্ট জমা পড়েছে নবান্নে।
প্রশাসন সূত্রে খবর, সেখানেই দাবি করা হয়েছে, পাহাড়ে অশান্তির আগে থেকে মোর্চা নেতারা অসম, নেপাল এবং জম্মু-কাশ্মীরে লাগাতার ফোন করেছেন। ৮ জুন পাহাড়ে রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকের দিন পাহাড় প্রথম অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। গোয়েন্দা সূত্রে দাবি, তদন্তে নেমে দেখা গিয়েছে, এই ঘটনার ঠিক এক মাস আগে অর্থাৎ ৭ মে মোর্চার সাধারণ সম্পাদক বিনয় তামাং নেপালে একজনকে ফোন করেন। দু’জনের মধ্যে ১৯৬ সেকেন্ড কথা হয়।
এরপর পাহাড়ে পুরভোটের ফল ঘোষণার দিন অর্থাৎ ১৭ মে ফের অসমে ফোন করেন বিনয় তামাং। সেদিনও মিনিটখানেক বলেন তিনি। মোর্চা সভাপতি বিমল গুরংও মে মাসে একাধিকবার অসমে ফোন করেছেন বলে গোয়েন্দা সূত্রে দাবি।
পাহাড় উত্তপ্ত হওয়ার ঠিক আগে মোর্চা শীর্ষনেতৃত্বের এই ঘন ঘন অসমে ফোন গোয়েন্দাদের মাথা ব্যথা বাড়িয়েছে। তাঁদের অনুমান, অসমের জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গেও মোর্চা নেতৃত্বের যোগাযোগ রয়েছে। সেখান থেকেই তাঁদের কাছে অস্ত্রশস্ত্র এসেছে।
এই অনুমানের একটি বিশেষ কারণও রয়েছে। গোয়েন্দা সূত্রে দাবি, ২০১৪ সালে অসম সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে জঙ্গি সংগঠনের দুই সদস্যকে অস্ত্র সহ গ্রেফতার করা হয়। জেরার মুখে ধৃত গণেশ ছেত্রী দাবি করে, সে কার্শিয়ংয়ে বিজয় টুলুং বলে এক ব্যক্তির কাছে অস্ত্র পাঠাচ্ছিল।
সঙ্গে সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশকে বিষয়টি জানায় অসম পুলিশ। খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়, এই বিজয় টুলুং হলেন জিটিএ-র সদস্য সঞ্জয় টুলুংয়ের দাদা। আর এই ঘটনার পর থেকেই সঞ্জয় টুলুং পলাতক।
এই প্রেক্ষিতে গোয়েন্দাদের অনুমান, পাহাড়ে মোর্চার সাম্প্রতিক বিক্ষোভেও অসমের জঙ্গি সংগঠনের হাত রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য আগেও এই দাবি করেছেন। তিনি বলেছিলেন, উত্তর-পূর্বের জঙ্গি সংগঠনের যোগ রয়েছে। এরা রাজনৈতিক দল নয়। বিদেশি যোগ রয়েছে। পুলিশের কাছে তথ্য আছে। একদিনে এসব হয় না। একদিনে এত বোমা হয় না। বহুদিনের ষড়যন্ত্রের ফল। অনেক দিন ধরে অস্ত্র মজুত হচ্ছিল।
শুধু অবশ্য অসম বা নেপাল নয়। পাহাড়ের মোর্চা নেতৃত্বের কাছ থেকে ফোন গিয়েছে জম্মু-কাশ্মীরেও। গোয়েন্দা সূত্রে দাবি, ৮ জুন পাহাড় উত্তপ্ত হয়ে ওঠার দু’দিন আগে অর্থাৎ ৬ জুন ও ৭ জুন রোশন গিরি জম্মু-কাশ্মীরে ফোন করেন। কাদের সঙ্গে, কী নিয়ে তাঁর কথা হয়েছে, সেটাই এখন জানার চেষ্টা করছেন গোয়েন্দারা।
রাজ্য সরকার অবশ্য সম্প্রতি হাইকোর্টে হলফনামা পেশ করে দাবি করেছে, পাশের দেশ থেকে মাওবাদীদের অনুপ্রবেশ ঘটছে। পাহাড়ে যে সরকারি উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা রয়েছেন, তাঁদের এবং সরকারি অফিসগুলোকে নিশানা করার পরিকল্পনা রয়েছে। যদিও, মোর্চার বক্তব্য, কেউ কোনও ফোন করেনি। অযথা অভিযোগ করা হচ্ছে।