দার্জিলিং: কালিম্পং থেকে মিরিকে অব্যাহত মোর্চার তাণ্ডব। কোথাও সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর, কোথাও আগুন। পাহাড়ে মোর্চার জঙ্গি বিক্ষোভ ঠেকাতে এবার ত্রিফলা কৌশল প্রশাসনের। এসবের মধ্যেই চূড়ান্ত লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হতে হুমকি দিল মোর্চা।
দার্জিলিংয়ের পাহাড় চুড়োয় আবার অশান্তির আগুন। কাঠগড়ায় সেই গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। বৃহস্পতিবার রাতে গয়াবাড়ি স্টেশনে ঢুকে আগুন ধরিয়ে দেয় মোর্চা সমর্থকরা।
রাত একটা নাগাদ মোর্চা সমর্থকরা চড়াও হয় রিমবিক লোধা জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। সেখানেও চারদিক থেকে আগুন ধরিয়ে দেয় তারা। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভিতরে কয়েকজন কর্মীও ছিলেন। কোনওমতে তাঁদের বের করে আনা হয়। পুরোপুরি ভস্মীভূত হয়ে যায় স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি।
রাত কেটে ভোর! কিন্তু বন্ধ হয়নি মোর্চার তাণ্ডব। শুক্রবার পুড়িয়ে দেওয়া হয় কালিম্পংয়ে লোয়ার গংয়ের পঞ্চায়েত অফিস। ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় কামি ডেভলপমেন্ট বোর্ড।
মিরিকেও পুড়িয়ে ছাই করে দেওয়া হয় পঞ্চায়েত অফিস। বৃহস্পতিবারই মোর্চার তাণ্ডব নিয়ে কড়া বার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, কয়েকজন গুণ্ডামি করছে। শুধু আমি খাব, অন্য কেউ নয়, এটা হতে পারে না।
কিন্তু, এরপরও মোর্চার তাণ্ডব থামার কোনও লক্ষণ নেই। সরকারি সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি অব্যাহত। তাৎপর্যপূর্ণভাবে শুক্রবার মোর্চার বনধ সংক্রান্ত একটি মামলায় কলকাতা হাইকোর্ট রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে, ৯ জুন থেকে আরম্ভ হওয়া মোর্চার বনধে কত টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা দু’সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট আকারে পেশ করতে।
পাহাড়ের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেখানে পাঠানো হয়েছে আরও সাতজন আইপিএস-কে। ইতিমধ্যে পাহাড়ে পৌঁছে গেছেন বিবেক সহায় ও রণবীর কুমার। পাহাড়ে আসছে আরও ৪ কোম্পানি আধাসেনাও।
এদিকে মোর্চাও বসে নেই। শুক্রবার ত্রিপাক্ষিক চুক্তির দাবি জানিয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করেন মোর্চার তিন বিধায়ক। অন্যদিকে, দার্জিলঙে মোর্চা প্রধান বিমল গুরুঙ্গের হুঁশিয়ারি, চূড়ান্ত লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হোন। তিনি বলেন, আমি মানুষকে আহ্বান করছি, চূড়ান্ত লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হোন। সময় এসেছে ডু অর ডাই লড়াইয়ের জন্য। গোর্খাল্যান্ডের স্বপ্ন সত্যি করতে হলে এই লড়াই করতে হবে।
জিটিএ চুক্তির প্রসঙ্গ টেনে তৃণমূল সরকারকে খোঁচা দিয়েছে মোর্চার শরিক বিজেপি-ও। মোর্চার গোর্খাল্যান্ডের দাবিকে সমর্থন করতে এগিয়ে এসেছে জিএনএলএফ এবং হড়কাবাহাদুর ছেত্রীর দলও। পৃথক গোর্খাল্যান্ড গঠনের জন্য প্রক্রিয়া শুরু করতে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহকে চিঠিও দিয়েছেন হড়কাবাহাদুর। জন আন্দোলন পার্টি নেতা বলেন, পাহাড়ে যা চলছে, তৃণমূল ও মোর্চার ইগো ফাইট। আলোচনার টেবিলে সমাধান করতে হবে। গোর্খাল্যান্ডের দাবি আমরাও সমর্থন করি। জিটিএ ছাড়তে হবে।
পাল্টা মোর্চাকে হুঁশিয়ারি দিয়েছে তৃণমূল। সব মিলিয়ে এখন তপ্ত পাহাড়।