ঋত্বিক প্রধান, দিঘা: এক একটা ঢেউয়ের সঙ্গে পাড়ে আছড়ে পড়ছে মাছের দল। তবে জীবিত নয়, মৃত। দেখতে এক্কেবারে মাছের মতো হলেও, বিশেষজ্ঞদের ভাষায় এরা পাফার ফিশ। স্থানীয়রা আবার চেনেন সামুদ্রিক ব্যাঙ নামে। পূর্ব মেদিনীপুরের দীঘার সমুদ্র সৈকতে এই মৃত পাফার ফিশ দেখতে ভিড় করেছেন পর্যটকরা।
কিন্তু কীভাবে এই বিপুল পরিমাণ পাফার ফিশের মৃত্যু হল? দিঘা সায়েন্স সেন্টারের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ‘একমাসও হয়নি পূর্ব মেদিনীপুরে তাণ্ডব চালিয়ে গেছে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস, এমনকী খাবারের খোঁজে স্থলভাগের কাছাকাছি চলে আসাতেও এই পাফার ফিশগুলির মৃত্যু হতে পারে। বর্তমানে সমুদ্রে বিপুল পরিমাণে মাছ ধরা হচ্ছে। জালে আটকে গিয়ে মৃত্যুর পাশাপাশি সামুদ্রিক দূষণও এর পিছনে অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
দিঘা সায়েন্স সেন্টারের আধিকারিক নিরঞ্জন গুপ্ত জানিয়েছেন, ‘স্থানীয় ভাষায় বলা হচ্ছে সামুদ্রিক ব্যাঙ। আদতে এরা পাফার ফিশ। দূষণ, জাহাজ থেকে তেল লিক থেকে মারা যেতে পারে। প্রচুর পরিমাণে মরতে শুরু করলে ইকোসিস্টেমে প্রভাব পড়বে।’
ঘূর্ণিঝড়ের জেরে প্রবল জলোচ্ছ্বাসে তছনছ দিঘা। ভেঙে পড়েছে সমুদ্র সৈকত সংলগ্ন দোকানপাট। বিপর্যস্ত চাঁদপুরের পর্যটনকেন্দ্রও। মার্বেল বাঁধানো বসার জায়গা থেকে দোকানপাট, হোটেলের পাঁচিল থেকে সাজানো বাগান, কোনও কিছুই আর আস্ত নেই। সুন্দর সৈকত এখন ধ্বংসস্তূপ! ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের তাণ্ডবে লন্ডভন্ড পর্যটনপ্রিয় বাঙালির পছন্দের দিঘা। মন্দারমনি, শংকরপুরেও একই ছবি। দিঘার সৌন্দর্যায়নে প্রকল্পে গোড়ায় গলদ ছিল। কেন হয়নি দিঘার মেরিন ড্রাইভের ব্রিজ? ইয়াসের তাণ্ডবে সৈকত শহর লণ্ডভণ্ড হয়ে যাওয়ার পর ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী। কোটি টাকা খরচের পরেও কেন একটা দুর্যোগেই সব ভেঙে যাবে, প্রশ্ন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
করোনার জেরে ব্যবসায় মন্দা ছিলই, তার ওপর ইয়াসের তাণ্ডবে প্রবল ক্ষতির মুখে দিঘার হোটেল ব্যবসায়ীরা। তাঁদের দাবি, ছন্দে ফিরতে লাগবে অন্তত এক বছর। সরকারের কাছে কর ছাড়ের আবেদন জানানো হবে, জানাল দিঘা ও মন্দারমণির হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন।
ইয়াসের তাণ্ডবের পর একমাস পেরোতে চললেও দিঘা উপকূলজুড়ে এখনও ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে বড় বড় গাছ। তাতে একদিকে যেমন নতুন গাছ লাগানোর কাজ বাধা পাচ্ছে, সেই সঙ্গে বিপুল বনজ সম্পদ অপচয়ের আশঙ্কা করছেন পরিবেশপ্রেমীরা। ঝড়ে পড়ে যাওয়া গাছ উপকূল থেকে দ্রুত সরানোর আশ্বাস দিয়েছে বন দফতর।