কলকাতা: বর্ষার পরেও ডেঙ্গি-প্রকোপ। চরিত্র বদলে আরও ভয়ানক ডেঙ্গিবাহিত মশার লার্ভা। বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। উদ্বেগে চিকিৎসকরা। আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনাকেই দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা।
দক্ষিণ দমদমের ডেঙ্গির প্রকোপ দেখে অনেকেই বলেছিলেন, লাগোয়া এই পুর এলাকা কলকাতার টেনশনের কারণ হতে পারে! বাস্তবে হলও ঠিক তাই! শহরের বিস্তীর্ণ এলাকায় এখন ডেঙ্গির দাপাদাপি!
গড়ফা, সেলিমপুর, ঢাকুরিয়া, নবনগর, রানিকুঠি, নেতাজিনগর এবং বেহালার বেশ কিছু এলাকায় পুজোর সময় থেকে বেড়েছে ডেঙ্গির প্রকোপ!
তারই শিকার সেলিমপুরের বাসিন্দা কিশোরী অস্মিতা ভট্টশালী। পুজোর সময় তার ডেঙ্গি ধরা পড়ে। দ্রুত কমে গিয়েছিল প্লেটলেট। ক’দিন হল সে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছে। সে বলে, পুজোয় বেরোতে পারিনি। অস্মিতার থেকে বয়সে কিছুটা ছোট, দরগা রোডের ফারহা শামিম। সে এখনও হাসপাতালে। আক্রান্তের বাবা বলেন, কোথা থেকে হয়েছে জানিনা পুরসভাকে বলব ব্যবস্তা নিতে।


একই অবস্থা যাদবপুরের অংশুমান ভৌমিকের। তাঁরও এনএস-১ পজিটিভ এসেছিল। এখন কিছুটা সুস্থ, কিন্তু আতঙ্কটা যাচ্ছে না!টেনশন কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে অজানা জ্বর। যাদবপুরের বাসিন্দা সুগত পাল বলেন, গায়ে ব্যথা, অফিস যেতে পারছিলাম না। উপসর্গ ডেঙ্গির মতো। কিন্তু নেগেটিভ রেজাল্ট এল।
পরিস্থিতি যে উদ্বেগজনক, তা কার্যত মেনে নিয়েছেন স্থানীয় ৯৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর দেবব্রত মজুমদার। বলেন, জ্বর হচ্ছে, সবই ডেঙ্গির মতো। কিন্তু টেস্টে ডেঙ্গি প্রমাণ হচ্ছে না। কেন এরকম হচ্ছে, অতীন দাকে দেখতে বলেছি।
শনিবারই নেতাজিনগরের সরকারি আবাসনের বাসিন্দা রজনী বন্দ্যোপাধ্যায়ের মৃত্যু হয়। ডেথ সার্টিফিকেটে মৃত্যুর কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘ডেঙ্গি হেমারেজিক শক উইথ মাল্টি অরগ্যান ফেলিওর’। মৃতের স্কুলপড়ুয়া মেয়েও হাসপাতালে ভর্তি। এ বিষয়ে মেয়রের প্রতিক্রিয়া, ডেঙ্গিতে মৃত্যুর বিষয়ে তাঁর এখনও কিছু জানা নেই। খোঁজখবর নিয়ে সবিস্তারে জানাবেন।
শুধু কলকাতার বিস্তীর্ণ এলাকাই নয়, ডেঙ্গি দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বিধাননগর পুর এলাকাতেও। গত সপ্তাহে বাগুইআটির জোড়ামন্দিরে এক মহিলার মৃত্যু হয়েছে।
কেন্দ্রীয় সরকারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এখনও পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে ৫৭১ জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন। চিকিৎসকদের চিন্তা বাড়িয়েছে ডেঙ্গির চরিত্র বদল।
চিকিৎসক প্রভাস প্রসূন গিরি বলেন, হঠাৎ করে অবস্থার অবনতি হচ্ছে। সাধারণত জ্বর কমে যাওয়ার পর প্লেটলেট কমে যায়। এখন জ্বরের দ্বিতীয় দিন থেকেই প্লেটলেট কমছে। দ্রুত অবস্থার অবনতি হচ্ছে।
রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী জানিয়েছেন, এ বছর পশ্চিমবঙ্গে ডেঙ্গি-২ এবং ডেঙ্গি-৪, এই দু’টি প্রজাতির উপস্থিতি বেশি করে নজরে আসছে। এক্ষেত্রে দ্রুত শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। ফলে বহু ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, রোগীদের ডেঙ্গি চিহ্নিত হওয়ার ৪ দিনের মধ্যেই দ্রুত শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে।
কিন্তু কেন এত মারাত্মক রূপ ধারণ করছে এই মারণ রোগ? নেপথ্যে আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনাকেই দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। সাধারণত, বর্ষার পর থেকে ডেঙ্গির প্রকোপ কমার কথা, কিন্তু এখন তেমনটা হচ্ছে না। বর্ষাকালের চরিত্র বদল হওয়ায় উল্টে ছড়াচ্ছে ডেঙ্গি!
চিকিৎসক অরূপ আচার্য বলেন, এই সময়ে ডেঙ্গি কমে যাওয়ার কথা, কিন্তু প্রচুর হচ্ছে। তবে শুধু ডেঙ্গি নয়, আরও বিপদের কথা শুনিয়েছেন চিকিৎসকরা! চিকিৎসক সৌরভ কোলের দাবি, খালি ডেঙ্গি নয়। কলকাতায় চিকুনগুনিয়া হচ্ছে। উপসর্গ ডেঙ্গির মতো। আমার কাছে রোগী এসেছিল, দিল্লি থেকে এসেছিল। ওখানে প্রচুর হচ্ছে।
ডেঙ্গি থেকে বাঁচতে বাড়ির আশেপাশে জল জমতে না দেওয়ার পাশাপাশি মশারি ও মশা রোধক ক্রিম ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিত্‍সকরা৷ তাঁদের মতে, রোগের উপসর্গগুলি সম্পর্ক সচেতন থাকতে হবে। তাহলেই ডেঙ্গি প্রতিরোধ করা সহজ হবে।