মনোজ বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুর: করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে বেসামাল সারা দেশ। তৃতীয় ঢেউও কিছুদিনের মধ্যেই আছড়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। কিন্তু এই সঙ্কটজনক অবস্থায় ১১মাস ধরে বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে স্বাস্থ্যকেন্দ্র! এমনই ঘটনা দেখা গিয়েছে পশ্চিম বর্ধমানের দুর্গাপুরে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সন্ধে নামলেই সেখানে বসছে মদের ঠেক।
যে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে, সেটি দুর্গাপুর পুরসভার অন্তর্গত। করোনা অতিমারীর সময়ে চিকিৎসা পরিষেবা ও টিকাকরণের ক্ষেত্রে চরম সমস্যার মুখে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এই পরিস্থিতিতে খুব শীঘ্রই পরিষেবা চালু করার আশ্বাস দিয়েছে দুর্গাপুর পুরসভা।
স্টেডিয়াম, স্কুল, ক্লাব। করোনা অতিমারী পরিস্থিতিতে এই সব জায়গাকেও চিকিত্সা-সহায়ক কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। কোথাও তৈরি হচ্ছে সেফ হোম, আবার কোথাও ভ্যাকসিনেশন সেন্টার। অথচ এই সঙ্কটকালে বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে দুর্গাপুরের একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র! এক-দু’মাস নয়, ১১ মাস ধরে এভাবেই তালাবন্ধ অবস্থায় রয়েছে পশ্চিম বর্ধমানের দুর্গাপুর পুরসভার ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের বীরভানপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্র। যে কোনও সমস্যায় ৬-৭ কিলোমিটার দূরে অন্য একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেতে হয় স্থানীয় বাসিন্দাদের। শুধু তাই নয়, এলাকাবাসীর দাবি, সম্প্রতি সন্ধে নামলেই এখানে বসছে মদের ঠেক, দুষ্কৃতীদের আড্ডা।
বীরভানপুরের বাসিন্দা শ্যামল আচার্য জানিয়েছেন, ‘আশেপাশের অনেকগুলি এলাকা, আশেপাশের ওয়ার্ডগুলির বাসিন্দারাও বিভিন্ন দিক থেকে, চিকিৎসা সংক্রান্ত সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। শুধু মৌখিকভাবেই নয়, বারবার চিঠি দিয়ে দুর্গাপুর নগর নিগম ও দুর্গাপুর মহকুমা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। এই স্বাস্থ্যকেন্দ্র খোলার কথা বলা হয়েছে স্থানীয় কাউন্সিলার শিপুল সাহাকেও। কিন্তু কোনও উদ্যোগ দেখা যায়নি।’
বীরভানপুরের অন্য এক বাসিন্দা কল্পনা বসাক জানিয়েছেন, ‘গোদের ওপর বিষফোড়ার মতো এখন টানা এগারো মাস বন্ধ হয়ে থাকার জন্য দুর্গাপুর নগর নিগমের এই স্বাস্থ্যকেন্দ্র এখন দুষ্কৃতীদের আড্ডা হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
এই পরিস্থিতিতে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছে দুর্গাপুর পুরসভা। মেয়র পারিষদ স্বাস্থ্য রাখি তিওয়ারি জানিয়েছেন, ‘এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিত্সকের করোনায় মৃত্যু হয়েছে। অনেকে ভয়ে আসছেন না। শীঘ্রই ফের স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি চালু করা হবে।’
সূত্রে জানা গিয়েছে, মাঝে মাঝে চতুর্থ শ্রেণির এক কর্মী এসে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির তালা খুলে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে ফের তালা বন্ধ করে দিয়ে চলে যান। স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি এতদিন ধরে বন্ধ থাকায় প্রবল সমস্যার মুখে এখানকার প্রায় ৫ থেকে ৬ হাজার মানুষ। অথৈ জলে পড়ে যাওয়া এখানকার বাসিন্দাদের প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলে দেওয়া হয়েছে, যদি কারও প্রয়োজন হয়, তাহলে তাঁরা ডাক্তার দেখাতে ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের শ্যামপুর এলাকায় থাকা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চলে যেতে পারেন। কিন্তু সেখানেও সমস্যা রয়েছে। কারণ করোনার ভ্যাকসিন দেওয়ার কাজ চলায় সাধারণ রোগের চিকিৎসা খুব একটা হচ্ছে না সেখানে।
বীরভানপুরের বাসিন্দারা বলছেন, তাঁদের এলাকায় থাকা এই স্বাস্থ্যকেন্দ্র ছেড়ে কেন তাঁরা ৬ থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে অন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাবেন? এই অতিমারীর আবহে এটা কার্যত অসম্ভব। বিশেষ করে প্রবীণ নাগরিকদের পক্ষে দূরে ডাক্তার দেখাতে যাওয়া কঠিন।
অন্যদিকে, কোনও এক অজ্ঞাত কারণে ওয়ার্ডের বীরভানপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন শিশুদের টিকাকরণের কাজও বন্ধ হয়ে রয়েছে গোটা এলাকায়। পুরসভা শীঘ্রই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি খোলার আশ্বাস দিলেও, এতদিন কেন সেই ব্যবস্থা করা হল না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।