কমলকৃষ্ণ দে, বর্ধমান: করোনা আক্রান্ত শিশুদের মধ্যে পোস্ট-কোভিড কমপ্লিকেশন ভাবাচ্ছে চিকিৎসকদের। বড়দের যেমন ফুসফুস আক্রান্ত হচ্ছে, তেমনি শিশুদের আক্রান্ত হচ্ছে হৃদযন্ত্র। এমনটাই মত বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ তথা কোভিডের নোডাল অফিসার কৌস্তভ নায়েকের। 


শিশুদের কোভিড আক্রান্তের সাথে সাথে এবার কোভিড-পরবর্তী কমপ্লিকেশন-- মাল্টিসিস্টেম ইনফ্লেমেটরি সিনড্রোম অফ চিলড্রেন বা এমআইএস-সি চিন্তার ভাঁজ বর্ধমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের শিশু বিভাগে।


চিকিৎসকদের আশঙ্কা, কোভিড আক্রান্তের পর এমআইএস-সি তে শিশুদের ফুসফুস নয়, গুরুতর ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে হৃদপিণ্ড। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না শুরু করতে পারলে হৃদযন্ত্র বিকল হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে শিশুর।


গত দুমাসে এই সমস্যা নিয়ে এখনও পর্যন্ত ৩০ জন শিশু বর্ধমান হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছে। সঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু হওয়ায় এখনও পর্যন্ত অধিকাংশ শিশুই বেঁচে গিয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ১ জনের। 


তবে এতে আত্মতুষ্টির কোনও জায়গা নেই বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। কেননা, এই সমস্যা নিয়ে আক্রান্ত শিশুর চিকিৎসা করাতে সামান্য দেরি হলেই তা চিকিৎসকদের আয়ত্বে বাইরে চলে যাচ্ছে। 


শুধু জ্বর বা সর্দিকাশী নয়, একাধিক উপসর্গ দেখা দিচ্ছে শিশুদের মধ্য়ে। চোখ, মুখ,জিভ লাল হলে বা হাত, পা ও গায়ের চামড়া উঠলে, ২ দিনের বেশি অতিরিক্ত পরিমাণে পায়খানা হলেই দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।


পোস্ট কোভিড কমপ্লিকেশনের সব থেকে বড়ো সমস্যা হচ্ছে এক্ষেত্রে আরটি-পিসিআর পরীক্ষায় কোভিড ধরা পড়ছে না। সেক্ষেত্রে একমাত্র ভরসা অ্যান্টিবডি টেস্ট। তেমনটাই জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা।


বর্ধমান হাসপাতালের সুপার প্রবীর সেনগুপ্ত জানিয়েছেন, কয়েকমাস আগেই বর্ধমান হাসপাতালের শিশুবিভাগে করোনা ওয়ার্ড খোলা হয়।


পাশাপাশি খোলা হয় শিশুদের জন্য সারি ওয়ার্ডও। দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় করোনা ও সারি ওয়ার্ড পুরোপুরি ভর্তি থাকলে তা এখন স্থিমিত। 


তবে নতুন করে ভাবাচ্ছে এমআইএস-সি। এরজন্য ইতিমধ্যেই বাড়ানো হয়েছে বেড সংখ্যা, অক্সিজেন ও ভেন্টিলেটর। বাড়ানো হয়েছে ল্যাব টেকনিশিয়ান ও অ্যাটেনডেন্টের সংখ্যাও। সচল রাখা হচ্ছে জরুরি ওষুধ পরিষেবা। তবে সঠিক সময়ে চিকিৎসার ফলে এমআইএস-সি তে আক্রান্ত শিশুদের সুস্থতার হার স্বস্তি দিচ্ছে।


বর্ধমান হাসপাতালের কোভিড নোডাল অফিসার তথা শিশু বিভাগের বিভাগীয় প্রধান কৌস্তভ নায়েক জানিয়েছেন,বর্তমানে কোভিডে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা কমলেও পোস্ট কোভিডে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বেশ উদ্বেগের।


সব থেকে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল এই পোস্ট কোভিডে শিশুদের ফুসফুস নয় আক্রান্ত হচ্ছে হৃদযন্ত্র। তবে সঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু হলে বেশীরভাগ শিশুই সুস্থ হয়ে উঠছে।


বর্ধমান হাসপাতালে কোভিড উপসর্গ থাকলে তাকে প্রথমে সারি ওয়ার্ডে রেখে তার করোনা পরীক্ষা করানো হচ্ছে। করোনা পজিটিভ হলে তাকে কোভিড ওয়ার্ডে  না হলে তাকে জেনারেল ওয়ার্ডে রাখা হচ্ছে।


এমনকি সদ্যজাত শিশুর ক্ষেত্রে এসএনসিইউ-এ ৫টি বেড রাখা হয়েছে করোনা আক্রান্তদের জন্য। বর্তমানে শিশুদের করোনা নয় করোনা পরবর্তী কমপ্লিকেশনই বেশি ভাবিয়ে তুলছে। 


কেননা তা সহজে বোঝা যাচ্ছে না। এবং তা সরাসরি হৃদপিণ্ডের ক্ষতি করে দিচ্ছে। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, সামান্য জ্বর,কাশি ও নাক দিয়ে জলপড়া উপসর্গ দেখা যাচ্ছে।


২-৩ দিনের মধ্যে তা সেরেও যাচ্ছে। তার দিন সাতেক পর থেকেই শুরু হচ্ছে উপসর্গ। যা আরটি-পিসিআর টেস্ট করলে নেগেটিভ হচ্ছে। কিন্তু অ্যান্টিবডি টেস্ট করালে ধরা পড়ছে।


চিকিৎসায় দেরি হলে শিশুর প্রভূত ক্ষতি হচ্ছে। যদিও এর  চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল তবুও বর্ধমান হাসপাতালে এই চিকিৎসা হচ্ছে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। এই চিকিৎসার ফলে সুস্থতার হার স্বস্তি দিচ্ছে চিকিৎসকদের।