দার্জিলিং: বিমল গুরুঙ্গদের নিয়ে সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের মধ্যে সংঘাতের পরিস্থিতির মধ্যেই মোর্চা প্রধানের খোঁজে ফের সিকিমে অভিযান চালাতে চায় রাজ্য পুলিশ। এই মর্মে ফের চিঠি দেওয়া হচ্ছে সিকিম পুলিশকে। এদিকে, সিকিম সীমানা ঘেষা দার্জিলিঙের লেবং ও দাওয়াপানিতে পুলিশের তল্লাশি। উদ্ধার ধারাল অস্ত্র-বিস্ফোরক। গ্রেফতার মোর্চা সমর্থক। আটক ৩।
সিকিমে গিয়েও রাজ্য পুলিশের হাতছাড়া হয়েছেন বিমল গুরুংরা। গুরংদের পালানোর সুযোগ করে দেওয়া থেকে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশকে বাধা-অসহযোগিতা--সিকিম প্রশাসনের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ উঠেছে।
এমনকি কালিম্পংয়ের পুলিশ সুপার এবং তাঁর টিমের বিরুদ্ধে সিকিমে ঢুকে এক মোর্চা সমর্থককে খুনের অভিযোগে মামলাও রুজু করে পুলিশ! কিন্তু, পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের দাবি, তারা সিকিম পুলিশকে চিঠি দিয়েই অভিযানে গিয়েছিল। তা সত্ত্বেও সহযোগিতা তো দূরের কথা, উল্টে বাধার মুখে পড়তে হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে দুই প্রতিবেশি রাজ্যের মধ্যে কার্যত সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। রাজ্য পুলিশের অনুমান, মোর্চার একাধিক নেতা সিকিমেই আত্মগোপন করে রয়েছে। আরও কেউ যাতে পালিয়ে সিকিম চলে যেতে না পারে, তার জন্য দার্জিলিং-সিকিম সীমাকে নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে ফেলেছে রাজ্য পুলিশ।
এই চাপানউতোরের মধ্যেই ফের একবার সিকিম পুলিশকে চিঠি দেয় পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ। সূত্রের খবর, সম্প্রতি সিকিমের নামচিতে সাবিত্রী রাই নামে এক মোর্চা নেত্রীকে গ্রেফতার করে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ। কিন্তু, সেখানকার আদালত মোর্চা নেত্রীকে অন্তর্বর্তী জামিন দেয়। সোমবার সেই অন্তর্বর্তী জামিনের শুনানি ছিল আদালতে। এই উপলক্ষ্যে ফের সিকিমে যায় রাজ্য পুলিশ। দক্ষিণ সিকিমের পুলিশ সুপারকে সেটাই চিঠি দিয়ে জানায় তারা।
সূত্রের খবর, চিঠির প্রাপ্তিও স্বীকার করেন দক্ষিণ সিকিমের পুলিশ সুপার প্রতাপ প্রধান। যদিও, এদিনও মোর্চা নেত্রীর জামিন বহাল রেখেছে সিকিমের আদালত। কিন্তু, মোর্চা নেত্রীকে হাতে না পেলেও, পুলিশের দৃঢ় ধারণা এখনও সিকিমেই লুকিয়ে রয়েছেন বিমল গুরুং, প্রকাশ গুরুঙের মতো ইউএপিএ-তে অভিযুক্তরা। সেজন্য ফের অভিযান চালাতে সহযোগিতা চেয়ে দক্ষিণ সিকিমের পুলিশ সুপারকে চিঠি দেওয়া হবে বলে সিআইডি সূত্রে খবর।



ফাইল ছবি


তদন্তকারীদের অনুমান, সিকিম প্রশাসনকে এখন কার্যত ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছেন বিমল গুরুং। যা নিয়ে সিকিম সরকারকে একহাত নিয়েছেন পর্যটনমন্ত্রী। এর আগে মোর্চার গোর্খাল্যান্ডের দাবিকে সমর্থন করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছিলেন সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী পবন চামলিং। লিখেছিলেন, গোর্খাদের দেশভক্তির ইতিহাস অত্যন্ত গৌরবোজ্জ্বল। দার্জিলিংয়ের বাসিন্দাদের দাবি পূরণ হলে তাদের সেই দেশভক্তির দীর্ঘ প্রত্যাশিত প্রতিদান দেওয়া সম্ভব হবে। পৃথক গোর্খাল্যান্ড তৈরি হলেই স্থায়ীভাবে শান্তি ও সমৃদ্ধি আনা সম্ভব হবে। আর পাহাড়ে অশান্তি কমলে তাতে সিকিমেরও লাভ হবে।
যা নিয়ে প্রকাশ্যে ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই চাপানউতোরের মধ্যেই এবার বিমল গুরুংয়ের গ্রেফতারি নিয়ে সিকিম পুলিশের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার! ইউএপিএ-তে অভিযুক্তদের আড়াল করার অভিযোগ। শেষ অবধি বিমল গুরুংকে নিয়ে দুই পড়শির সংঘাত কোন দিকে গড়ায়, সেদিকেই সবার নজর।
এদিকে, সিকিম সীমানা ঘেষা দার্জিলিঙের লেবং ও দাওয়াপানিতে তল্লাশি চালিয়ে বিস্ফোরক উদ্ধার করল পুলিশ! এরমধ্যে জিলেটিন স্টিক রয়েছে। উদ্ধার হয়েছে বেশকিছু ধারাল অস্ত্রও!
রবিবার রাতভর লেবংয়ের এই দুই বাড়িতে তল্লাশি চালায় পুলিশ। তখনই মেলে এই বিস্ফোরক। তদন্তকারীদের অনুমান, এই দুই বাড়িতে বসেই তৈরি হত বোমা। এবং এখানে বসেই তৈরি হয়েছে পাহাড়ে একাধিক বিস্ফোরণের ব্লু-প্রিন্ট।
ঘটনায় ৩ জনকে আটক করেছে পুলিশ। লেবং থেকে ৭ কিমি দূরে দাওয়াপানিতেও তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ। এক মোর্চা সমর্থকের বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে জিলেটিন স্টিক। অভিযুক্ত মোর্চা সমর্থককে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ। তদন্তকারীদের অনুমান, পাহাড়ে একের পর এক বিস্ফোরণের সঙ্গে এই বিস্ফোরক উদ্ধারের যোগসূত্র রয়েছে।


সিকিম সীমানা ঘেষা দার্জিলিঙের লেবং ও দাওয়াপানিতে পুলিশের তল্লাশি। যাকে পাহাড়ে নাশকতার নেপথ্যে মডিউল বলে উল্লেখ করেছেন দার্জিলিঙের পুলিশ সুপার অখিলেশ চতুর্বেদী। শুধু তাই নয়, একের পর এক বিস্ফোরণ, গ্রেনেড হামলা--- এসবের নেপথ্যে কোনও প্রাক্তন সেনা অফিসারের হাত রয়েছে কি না, তাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
পাইনের ফাঁকে ফাঁকে এখন বারুদের গন্ধ! আশঙ্কার কালো মেঘে মুখ ঢাকা কাঞ্চনজঙ্ঘা! অচেনা হলেও তিনমাস ধরে এটাই এখন পাহাড়ের ছবি। আর ছবির মতো সুন্দর দার্জিলিঙ জুড়ে এখন নাশকতার ষড়যন্ত্র।