প্রদ্যোৎ সরকার, কৃষ্ণনগর: এবার নদিয়ায় ভুয়ো সিআইডি অফিসারের মিলল খোঁজ। উঠল চাকরি দেওয়ার নামে লক্ষ লক্ষ টাকার প্রতারণার অভিযোগ। আটক অভিযুক্তের গাড়ির চালক।
অভিযুক্ত ভুয়ো সিআইডি অফিসারের নাম রাধারানি বিশ্বাস। তাঁর বিরুদ্ধে নদিয়ার কোতোয়ালি থানায় চাকরি দেওয়ার নামে লক্ষ লক্ষ টাকা নেওয়ায় অভিযোগ দায়ের জানিয়েছেন বেশ কয়েকজন যুবক-যুবতী।
গৌরব চট্টোপাধ্যায় নামের এক অভিযোগকারী বলেন, ওই মহিলা আমাকে স্বাস্থ্য দফতরের কাজ দেওয়ার প্রস্তাব দেয়। আমি সেই প্রস্তাবে রাজি হলে উনি আমার কাছে ৫ লক্ষ টাকা দাবি করেন। সেই টাকা দেওয়ার পর আমার মেডিকেল টেস্ট হয় কিন্তু এখনও পর্যন্ত চাকরি হয়নি।
শুধু চাকরির নামে প্রতারণার অভিযোগ নয়, দেবাঞ্জন দেব যেমন ভুয়ো আইএএস অফিসার পরিচয় দিয়ে ঘুরতেন, তেমনি এই রাধারানি বিশ্বাসও নিজেকে সিআইডি অফিসার বলে পরিচয় দিতেন বলে অভিযোগ।
এখানেই শেষ নয়। দেবাঞ্জনকে যেমন নেতা-মন্ত্রী-সাংসদদের পাশে পাশে দেখা যেত, তেমনি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নেতা-মন্ত্রীদের পাশে গলায় উত্তরীয় পরে দেখা গেছে রাধারানিকে।
ভুয়ো সিআইডি অফিসার হিসেবে পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নেতা-মন্ত্রীদের পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতেও দেখা যেত রাধারানিকে। কসবার ভুয়ো ভ্যাকসিনেশনকাণ্ডের মূল অভিযুক্ত দেবাঞ্জন দেবের সঙ্গে এই ঘটনাপ্রবাহ অক্ষরে অক্ষরে মিলে গিয়েছে।
লকডাউনের সময়ে দুস্থদের ত্রাণ বিলির অনুষ্ঠানে নেতা-মন্ত্রীদের একেবারে মাঝে ছিলেন অভিযুক্ত মহিলা। তেমনই একটি ছবিতে দেখা গিয়েছে, তাঁর বাঁদিকে দাঁড়িয়ে কারামন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস। আর ডানদিকে নদিয়ার যুব তৃণমূল সভাপতি জয়ন্ত সাহা।
একটি অনুষ্ঠানের ছবি নিজের ফেসবুকেও পোস্ট করেছিলেন তৃণমূলের যুব নেতা। সেখানে রাধারানিকে দিদি সম্বোধন করে ধন্যবাদও জানিয়েছেন।
যদিও কারামন্ত্রীর দাবি, তৃণমূলের ছাত্র ও যুব সংগঠনের তরফে ত্রাণ বিলির অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে নিমন্ত্রিত ছিলেন তিনি। হাজার হাজার লোক এসেছিলেন। তাই কে কার সঙ্গে ছবি তুলেছে, তা তাঁর জানা নেই।
আরেকটি ছবিতে দেখা গিয়েছে, রাধারানি বিশ্বাসের ডানদিকে দাঁড়িয়ে রয়েছেন কৃষ্ণনগর টাউন তৃণমূলের সভাপতি শিবনাথ চৌধুরী। যদিও রাধারানির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ মানতে নারাজ তৃণমূলের এই নেতা। তিনি বলেন, আমরা এসব জানিও না, কোথা থেকে টাকা নিয়েছেন, ২০২০ সালে তো প্রচুর লোককে খাইয়েছিলেন, তখন অভিযোগ তোলেননি কেন? টাকা যে নিয়েছে প্রমাণ দিন। প্রমাণ তো দিতে হবে। এফআইআর তো আমিও করতে পারি।
তবে উল্টো সুর শোনা যাচ্ছে তাঁরই দলের আরেক নেতার গলায়। কৃষ্ণনগর তৃণমূল কংগ্রেস নেতা বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী বলেন, ওই মহিলা পুলিশের পোশাক পরে এলাকায় ঘুরতেন এবং নিজেকে সিআইডি অফিসার বলে পরিচয় দিতেন৷ স্থানীয় যুবক যুবতীদের এর মাধ্যমে প্রভাবিত করে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছেন৷
অভিযোগ, কৃষ্ণনগরের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাঁঠালপোতায় এই বাড়ি তৈরি করছেন অভিযুক্ত রাধারানি বিশ্বাস। রয়েছে প্রচুর জমি-জমাও। তবে বর্তমানে একটি ভাড়াবাড়িতে থাকেন রাধারানি।
সমস্ত অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে তাঁর মেয়ের দাবি, মা-কে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানো হচ্ছে। গতকাল সন্ধেয় অভিযুক্তের বাড়িতে হানা দেয় পুলিশ। আটক করা হয়েছে তাঁর গাড়ির চালককে।