ঋত্বিক প্রধান, তাজপুর: ইয়াস কেড়ে নিয়েছে সব কিছু। আপাতত বাঁধের ওপর ত্রিপল টাঙিয়ে কোনওমতে দিন গুজরান। পেটের টানে ফের সমুদ্রে পাড়ি জমানোর ভাবনা তাজপুরের মত্স্যজীবীদের। দ্রুত দুয়ারে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার আশ্বাস মৎস্যমন্ত্রীর।


ঘূর্ণিঝড়ের ঝাপটায় ভেঙে গিয়েছে নৌকা। নষ্ট হয়ে গিয়েছে মাছ ধরার জাল, বাকি সরঞ্জাম। খড়কুটোর মতো ভেসে গিয়েছে ঘর, গৃহস্থালী। ২৬ মে, ইয়াসের তাণ্ডবে লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছিল তাজপুরের সমুদ্র তীরবর্তী জলধা গ্রাম। নৌকা ভেঙে, জাল ছিঁড়ে উপার্জনের রাস্তাটাই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। সব হারিয়ে আপাতত সমুদ্র বাঁধের উঁচু জায়গায় ত্রিপল টাঙিয়ে কোনওমতে মাথা গোঁজার চেষ্টা চালাচ্ছেন গ্রামের কয়েকশো মত্স্যজীবী। ভরসা বলতে ত্রাণ। অভিযোগ, সেই ত্রাণেও এখন ভাঁটার টান। তাই ফের সমুদ্রে নামার ভাবনা। তার আগে মাছের আড়তদারের কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা ধার নিয়ে নৌকা, জাল, মাছ ধরার সরঞ্জাম মেরামতির কাজ চলছে।


তাজপুরের জলধার মৎসজীবী বাসুদেব বেরা বলেন, বাড়িঘর জোয়ারের জলে ভেঙে গেছে। তাই বাঁধের ওপর ত্রিপল খাটিয়ে রয়েছি। না হলে দোকানে শুচ্ছি। ছেলেমেয়েদের মুখে খাবার তুলে দিতে মাছ ধরেই রোজগার করতে হবে। তাই আড়তদারদের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে জাল, নৌকা সারাচ্ছি। সামনের সপ্তাহে সমুদ্রে যাব। আরেক মৎস্যজীবী ভবতারিণী করের কথায়, সরকারি তরফে সাহায্যের আবেদন করেছি। সে টাকা হাতে আসেনি। তাই রোজগারের জন্য টাকা ধার নিয়েছি। মাছ ধরে টাকা শোধ করব।


বর্ষা এসে গেছে। এটাই মাছ ধরার মরশুম। বিপর্যয় কাটিয়ে এই সময়েই ফের ছন্দে ফেরার চেষ্টা করছেন মত্স্যজীবীরা। পাশে থাকার বার্তা দিয়েছে প্রশাসন। মত্স্যমন্ত্রী অখিল গিরি বলেন, দুয়ারে ত্রাণ প্রকল্পের মাধ্যমে সবাইকে ক্ষতি তালিকাভুক্ত করতে বলেছি। সেই তালিকা মিলিয়ে ক্ষতি পর্যালোচনে করে ত্রাণের টাকা তুলে দেওয়া হবে। সেই টাকা একমাস বাকি। তার আগে বর্ষা ঢুকে যাওয়ায় ওরা পেটের টানে সমুদ্রে নামছে।  সাগরের ঢেউয়ে টালমাটাল নৌকা সামলে আগেও ফিরেছেন ডাঙায়। সেই ডাঙা থেকে জীবন-জীবিকার টানে ফের সমুদ্রে ভাসার অপেক্ষায় তাজপুরের মত্স্যজীবীরা।