শিলিগুড়ি: ফের একবার চরমে রাজ্য-রাজ্যপাল সংঘাত। এক মাসের পাহাড় সফরের জন্য রবিবারই দার্জিলিংয়ের উদ্দেশে রওনা হন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। অবশ্য দার্জিলিংয়ে ওঠার আগে শিলিগুড়িতে বসে স্বাস্থ্য থেকে কৃষক, একাধিক বিষয়ে রাজ্যকে আক্রমণ করেন তিনি।


কিছুদিন আগেই সংসদের ভিতরে ও বাইরে মোদি সরকারের নতুন কৃষি আইন নিয়ে প্রবল বিরোধিতা করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রের ‘কিষাণ সম্মান নিধি প্রকল্প’ এ রাজ্যে কেন চালু হল না, তা নিয়ে ফের প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন রাজ্যপাল। জগদীপ ধনকড় বলেছেন, ‘কৃষকদের পথে বসিয়েছে রাজ্য সরকার। কেন্দ্র ১২ হাজার টাকা করে সরাসরি কৃষকদের অ্যাকাউন্টে দিচ্ছে। দশ মাস পর মুখ্যমন্ত্রী চিঠি দিয়েছেন। সেখানে বলছেন আমাকে টাকা পাঠাও। সরকার কি মিডলম্যান হিসেবে কাজ করবে? এখানে কেন সরকারকে পাঠানো হবে? সরকারের কাছে জানতেও চেয়েছিলাম। কিন্তু উত্তর পাইনি।'

কিষাণ সম্মান নিধি প্রকল্প-র পাশাপাশি মোদি সরকারের ‘আয়ুষ্মান ভারত’ও বঙ্গে তৃণমূল সরকার কেন চালু করেনি তা নিয়েও প্রশ্ন ছুড়ে দেন রাজ্যপাল। তাঁর অভিযোগ, ‘পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্যব্যবস্থা একেবারে ভেঙে পড়েছে। ‘আয়ুষ্মান ভারত’ গ্রহণ করল না। করোনায় প্রচুর মানুষ মারা যাচ্ছেন। হাসপাতালের অবস্থা খুব খারাপ। অহেতুক কেন্দ্রের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়েছে। সব রাজ্য গ্রহণ করেছে। শুধু বাংলা করেনি।'

রাজ্যপালের অভিযোগের পালটা বলতে ছাড়েনি রাজ্যের শাসক দলও। ‘আয়ুষ্মান ভারত’ প্রকল্প গ্রহণ করলেই কী করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে? প্রশ্ন তুলেছে তৃণমূল। দমদমের সাংসদ সৌগত রায় বলেছেন, ‘পশ্চিমবঙ্গ আয়ুষ্মান ভারত গ্রহণ করেনি। কারণ এখানে অনেক ভাল প্রকল্প আছে। স্বাস্থ্যসাথী। যারা আয়ুষ্মান নিয়েছে তাদের কি কোভিড নিয়ন্ত্রণে? গুজরাত, মহারাষ্ট্র, তেলঙ্গানা, ইউপি। পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বর্তমান পরিস্থিতিতে যতটা ভাল হওয়া সম্ভব, ততটাই হয়েছে। চিকিত্সঙকরা অসম্ভব ভাল কাজ করছেন।'



বিজেপি অবশ্য রাজ্যপালের মন্তব্যকে সমর্থন করেছে। গেরুয়া শিবিরের রাজ্য সহ সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা আগেও বলেছিলাম। রাজ্যের পরিকাঠামো নেই। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। রাজ্য সরকার শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করছে।' যদিও রাজ্য-রাজ্যপাল সংঘাতে না ঢুকে রাজ্য-কেন্দ্র উভয় পক্ষেরই সমালোচনায় সরব হয়েছে কংগ্রেস। রাজ্যসভার কংগ্রেস সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘যেসব পরিকল্পনা নেওয়া উচিত ছিল, তা নেওয়া হয়নি। এটা রাজ্যপাল ঠিকই বলছেন। তবে আমি রাজ্যপালকে জিজ্ঞেস করতে চাই, এই পরিস্থিতি কি শুধু বাংলায়? মধ্যপ্রদেশ, বিহারে কি এই পরিস্থিতি নেই? কেন্দ্র তো স্বীকার করেছে আয়ুষ্মান ভারত সফল করতে পারেননি।

নানা ইস্যুতে শুরু থেকেই কখনও নবান্নের সঙ্গে, কখনও রাজ্যের শাসকদলের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়েছেন রাজ্যপাল। এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে এদিন নিজের ফোন থেকে রাজ্যের এক মন্ত্রীর রাজ্যপালের সম্পর্কে বলা একটি অডিও ক্লিপিংস শোনান জগদীপ ধনকড়। যেখানে শোনা যায় কেউ একজন বলছেন, ‘উনি পাগল, যা পারে বলুন। আমরা মানুষের জন্য কাজ করি। রাস্তায় নেমে কাজ করি।' যা শুনিয়ে রাজ্যপালের গলায় হতাশার সুর। জগদীপ ধনকড় জোড়েন, ‘এই হচ্ছে অবস্থা। এই হচ্ছে রেসপেক্ট। একজন জনপ্রতিনিধি যদি এই ভাষায় কথা বলে, তাহলে কী করে হবে?'

সবমিলিয়ে সংঘাতের চড়া সুরেই শুরু হল রাজ্যপালের এক মাসের পাহাড় সফর।