নদিয়া:  প্রথমে ধর্ষণ। তারপর লাগাতার হুমকি, ব্ল্যাকমেলের অভিযোগ। শেষমেশ, বাইকে করে ধাওয়া। দুষ্কৃতীদের হাত থেকে বাঁচতে নদীতে ঝাঁপ দিলেন রানাঘাটের গৃহবধূ।
ঘটনার সূত্রপাত গত ৬ মার্চ। স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে খবর, সে দিন ক্লাস থ্রিতে পড়া মেয়েকে স্কুলে দিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন নদিয়ার রানাঘাটের বছর সাতাশের গৃহবধূ। ভর দুপুরেই তাঁর জীবনে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার।
অভিযোগ, মহাপ্রভুপাড়ার নিরিবিলি রাস্তা দিয়ে যখন ফিরছিলেন, তখন তিন যুবক, তাঁর মুখ চেপে ধরে, মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে নিয়ে গিয়ে গণধর্ষণ করে।
গৃহবধূর দাবি, তিন যুবকের মধ্যে একজনকে তিনি চিনে ফেলেন। সে তাঁর প্রতিবেশী, গৌরব নাথ ওরফে পাপাই। অভিযোগ, গণধর্ষণের পর থেকেই ওই প্রতিবেশী যুবক হুমকি দিতে শুরু করে। কাউকে কিছু বললে কখনও তাঁর স্বামী ও মেয়েকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি।
কখনও আবার, অত্যাচারের ছবি সোশাল মিডিয়ায় আপলোড করে দেওয়ার হুমকি। এ ভাবে ভয় দেখিয়ে গৃহবধূর থেকে ওই যুবক ১০ হাজার টাকা আদায় করে নেয় বলেও অভিযোগ।
নির্যাতিতার দাবি, রিভলবার ঠেকিয়ে ধর্ষণ করেছিল। হুমকি দিত। প্রথমে বাড়িতে বলিনি। ১০ হাজার টাকা দেওয়ার পরেও টাকা চাইতে থাকে। গৃহবধূর দাবি, ক্রমেই টাকার চাহিদা বাড়ছিল। বাড়ছিল হুমকিও। শেষমেশ আর সহ্য করতে না পেরে সবকিছু স্বামীকে জানান ওই গৃহবধূ।
১২ মে রানাঘাট থানায় অভিযোগ দায়ের হয়। ওই দিনই অন্যতম অভিযুক্ত গৌরব নামে যুবককে পুলিশ গ্রেফতার করে। নির্যাতিতার বলেন, বাড়িতে বলি। থানায় অভিযোগ করা হয়। গৌরবকে পুলিশ অ্যারেস্ট করে। সে এখন জেলে।
প্রতিবেশী যুবক গৌরব এখন জেলে। কিন্তু বাকি দুই অভিযুক্ত তো অধরা। অভিযোগ তারাও একই ভাবে হুমকি দিতে থাকে। টাকা চেয়ে ব্ল্যাকমেল করার চেষ্টা করে। পরিস্থিতি চরমে ওঠে সোমবার।
মেয়েকে স্কুলে দিয়ে সেদিন ব্যাঙ্কে যাচ্ছিলেন গৃহবধূ। অভিযোগ মাঝরাস্তায় তিনটি বাইকে করে সাত জন দুষ্কৃতী তাঁর পিছু নেয়। প্রত্যেকেরই মাথায় ছিল হেলমেট। দুষ্কৃতীদের হাত থেকে বাঁচতে প্রাণপণে ছুটতে শুরু করেন গৃহবধূ। ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের উপরে উঠে ব্রিজ থেকে দেন মরণঝাঁপ।
নির্যাতিতা গৃহবধূ বলেন, গতকাল আমাকে ধাওয়া করে। আমি ঝাঁপ দিই। ওদের হাতে মরব কেন, আমি নিজেই মরব। তাই ঝাঁপ দিই। সেই সময় চূর্ণী নদীতে যাঁরা স্নান করছিলেন তাঁরাই গৃহবধূকে উদ্ধার করেন। নিয়ে যান রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে। কোনও ক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন।
গৃহবধূ ও তাঁর পরিবার এখনও আতঙ্কে। তাদের একটাই প্রশ্ন, পুলিশ কবে দোষীদের গ্রেফতার করবে? কবে তাঁদের ভয় দেখানো বন্ধ হবে? বাঁচার জন্য ফের মরার চেষ্টা করতে হবে না তো?