উত্তর ২৪ পরগনা: কলেজে ভর্তি হতে না পেরে উত্তর ২৪ পরগনার পানিহাটিতে আত্মঘাতী ছাত্রী। ভর্তির জন্য চাওয়া হয়েছিল টাকা, দাবি পরিবারের।
মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত মানুষের শিক্ষা সমাপ্ত হয় না। এই বিখ্যাত উক্তিটি মার্কিন জেনারেল রবার্ট ই লি’র! পানিহাটির বছর আঠারোর চৈতালি এই উক্তি জানতেন কি না, জানা নেই, তবে তাঁর জীবনের ক্ষেত্রে উক্তিটি সম্পূর্ণভাবে প্রযোজ্য।
কারণ, চরম শিক্ষা নিয়েই জীবন শেষ করতে হল তাঁকে! কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে টাকা নিয়ে সিট বিক্রির ভুরি ভুরি অভিযোগের মধ্যেই ঘটন এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। কলেজে ভর্তির আগেই রহস্যমৃত্যু হল উত্তর ২৪ পরগনার পানিহাটির চৈতালি পাত্রর! পরিবারের দাবি, ঘুরপথে ভর্তির জন্য যে টাকা দাবি করা হয়েছিল, তা জোগাড় করা সম্ভব নয় বুঝে আত্মঘাতী হয়েছেন তিনি!
উচ্চ মাধ্যমিকে ফার্স্ট ডিভিশনে পাশ করেছিলেন চৈতালি। ইচ্ছে ছিল বাংলা অনার্স পড়ার। সে জন্য বিভিন্ন কলেজ থেকে ফর্মও তুলেছিলেন। ২৩ জুন, সিটি কলেজে প্রথম মেধা তালিকা দেখে, হতাশ হয়ে পড়েন চৈতালি। মৃত ছাত্রীর মা সাধনা পাত্র বলেন, ওর চেয়ে কম নম্বর পেয়ে প্রথম লিস্টে অনেকের নাম ছিল। তা দেখে আরও ভেঙে পড়েছিল।
পরিবারের দাবি, গত ২৩ জুন, সিটি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র শুভ সামন্ত চৈতালিকে ফোন করেন। ভর্তি করিয়ে দেওয়ার কথা বলে, তরুণীকে বাস স্ট্যান্ডে ডাকেন। ওই দিন কম্পিউটারের ক্লাস ছিল চৈতালির। কিন্তু কলেজে ভর্তির সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যাবে, এই আশঙ্কায়, ক্লাস ছেড়ে ছুটে যান বাসস্ট্যান্ডে।
অভিযোগ, শুভ বলেন, ২৬ জুনের মধ্যে ১৭ হাজার টাকা দিলে সিটি কলেজে ভর্তি হয়ে যাবে। কিন্তু সময়ের মধ্যে ওই টাকা না দিলে, অঙ্কটা আরও বেড়ে যাবে! এরপর বাড়িতে চলে আসেন চৈতালি। পেশায় ইলেকট্রিক মিস্ত্রি বাবাকে গোটা বিষয়টি জানান।
পরিবার সূত্রে দাবি, বাবা বলেন, অভাবের সংসারে, তাঁর পক্ষে এত টাকা (১৭ হাজার) দেওয়া সম্ভব নয়। এরপর ওই রাতেই বিষ খান চৈতালী। আশঙ্কাজনক অবস্থায় মানিকতলার একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয় চৈতালিকে। পয়লা জুলাই বাড়ি ফেরেন তিনি। কিন্তু রাতে ফের অবস্থার অবনতি হয়। কামারহাটির সাগর দত্ত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মৃত্যু হয় চৈতালির।
ঘটনার পর থেকেই বেপাত্তা পানিহাটির ফাঁড়িবাগানের বাসিন্দা শুভ সামন্ত। তার বাবা বলেন, হুমকির জেরে তাঁর ছেলে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। শুভর পরিবারের আরও দাবি, তাঁর সঙ্গে ছাত্র সংসদের কোনও যোগ নেই। ভর্তির বিষয়ে চৈতালির পরিবারই টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল।
সিটি কলেজের দাবি, এর সঙ্গে তাদের কোনও সম্পর্ক নেই। মৃত ছাত্রীর পরিবার পুলিশে কোনও অভিযোগ দায়ের করেনি। খড়দা থানার তরফে জানানো হয়েছে, লিখিত অভিযোগ পেলেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।