দার্জিলিং: গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার এই আন্দোলনের জেরেই পাহাড়ে ফের দেখা দিয়েছে, অশান্তির কালো মেঘ।কাল থেকে মোর্চার সরকারি অফিস বনধের ডাক। খোলা থাকবে অফিস। জানালেন জেলাশাসক। অনুপস্থিতিতে কাটা যাবে বেতন, বিজ্ঞপ্তি জারি সরকারের। আন্দোলন দমনে বিবাদ বাড়বে, হুঁশিয়ারি মোর্চার।
সোমবার থেকে শুরু হতে চলা বনধের আওতায় রয়েছে সব সরকারি অফিস ও ব্যাঙ্ক। গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ বলেন, ৪৪ ধারার নোটিস দিয়ে ভানুভবনে জিটিএ-র অফিস বন্ধ করে দিল সরকার। তো আমিও ভাবলাম, সব সরকারি অফিস বন্ধ করে দেব।
রাজ্য সরকার অবশ্য বনধ রুখতে কড়া অবস্থান নিয়েছে। তারা জানিয়েছে, সমস্ত রকম বনধ বেআইনি। হিংসাত্মক উস্কানি কঠোর হাতে দমন করা হবে। বনধের নামে আইন ভাঙলে নেওয়া হবে কড়া ব্যবস্থা। যদিও রবিবার পাতলেবাসের বাড়িতে দলীয় বৈঠকের পর ফের রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন মোর্চা সভাপতি। বলেন, (বনধ রুখতে) পুলিশ কী করবে? ওরা মানুষ, আমরাও মানুষ। বনধ হবে। লাঠি চালালে, আন্দোলন আরও তীব্র হবে। এরই নাম আন্দোলন। গুলি চলেগা, আদমি মারেগা। আন্দোলন অর তীব্র হোগা।
পাল্টা গুরুংকে নিশানা করেছে তৃণমূল। রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, অসাংবিধানিক কথা বলছেন। বেআইনি কথা বলছেন। স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা, ওনার লক্ষ্মণরেখা মাথায় রাখা উচিত। আইনের ঊর্ধ্বে প্রমাণের চেষ্টা। এটা দুর্ভাগ্যজনক।
হোটেল, পরিবহণ, দোকান-পাটকে বনধের আওতার বাইরে রাখলেও, পর্যটকদের উদ্দেশ্যে এদিন কার্যত ফতোয়া দিয়েছেন গুরুং! বলেছেন, আমি আবেদন করছি, পাহাড়ের পরিস্থিতি খারাপ হয়েছে। আরও খারাপ হবে। কাল বনধ আছে। ঝামেলা হবে। পর্যটকদের তাই বলছি চলে যান।
পাশে থাকার বার্তা দিয়ে, রাজ্য সরকারও সাফ জানিয়ে দিয়েছে, পর্যটনের ভরা মরসুমে পাহাড়বাসীর আর্থিক ক্ষতি বরদাস্ত করা হবে না। সরকারের বক্তব্য, পাহাড়ে যারা অশান্তি ছড়াচ্ছে, তারা পাহাড়ের ভাল চায় না। মোর্চার বনধে দোকানপাট, ব্যবসা স্বাভাবিক রাখার আবেদন জানানো হয়েছে।
গৌতম দেব বলেন, পর্যটকদের নেমে আসতে বলার অধিকার নেই গুরুঙের। কোথাও ঘোরা মানুষের মৌলিক অধিকার। সরকারের আশ্বাস, সব ধরনের পরিষেবা যাতে সচল থাকে, সে জন্য সবরকম ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ইতিমধ্যেই এক বয়স্ক মহিলা-সহ ৫ মোর্চা কর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ধৃতদের বিরুদ্ধে হিংসা ছড়ানো, সরকারি সম্পত্তি নষ্ট, পুলিশের ওপর আক্রমণ-সহ একাধিক জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু হয়েছে। পুলিশ সূত্রে দাবি, সেদিনের হিংসার সঙ্গে এঁরা সরাসরি যুক্ত ছিলেন। রবিবার ধৃত পাঁচ মোর্চা কর্মীকে ২ দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠিয়েছে দার্জিলিং আদালত।
বনধের আগে এই গ্রেফতারি নিয়ে, প্রশাসনের উদ্দেশে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিমল গুরুং। বলেছেন, ৫ জন গ্রেফতারে কী আছে! কাল তো হাজার হাজার গ্রেফতার হবে! এখানকার জেল ভরে যাবে। অন্য জেলে নিয়ে যাবে। আন্দোলন না হলে কী করে হবে! আন্দোলন হবে না জেল হবে না, তাই কি হয়!
সরকারের অবস্থানও স্পষ্ট। তারা জানিয়েছে বনধের নামে কোনও বিশৃঙ্খলা বরদাস্ত করা হবে না! দার্জিলিঙের জেলাশাসক জয়শী দাশগুপ্ত জানিয়েছেন, বনধে সব সরকারি অফিস খোলা থাকবে। কোনও সাধারণ মানুষ কিম্বা সরকরি কর্মীদের কাজে যোগ দিতে বাধা দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বৃহস্পতিবার মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষ হতেই অশান্ত হয়ে উঠেছিল পাহাড়। মোর্চার মিছিলে সেদিন সামনের সারিতে দেখা গিয়েছিল মহিলাদের। বনধেও তাই বাড়তি সতর্ক প্রশাসন। ইতিমধ্যেই পাহাড়ে পৌঁছেছে সশস্ত্র মহিলা পুলিশের বাহিনী। প্রশাসনিক ভবনগুলিকেও কড়া নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয়েছে।
পুলিশি তৎপরতার পাশাপাশি পাহাড়ের বিভিন্ন জায়গায় সাঁজোয়া গাড়িরও টহল চলছে। দার্জিলিং শহরে ঢোকা ও বেরোনোর সব রাস্তায় চলছে কড়া নজরদারি। যে সব এলাকায় পর্যটকদের। সংখ্যা বেশি, সেখানেও সতর্ক দৃষ্টি রয়েছে প্রশাসনের।
মোর্চার বনধের মোকাবিলায় রাজ্য সশস্ত্র পুলিশের পাশাপাশি থাকছে ইন্ডিয়ান রিজার্ভ ব্যাটালিয়ন ও কাউন্টার ইনসার্জেন্সি ফোর্স। পর্যাপ্ত পরিমাণে রাখা হচ্ছে রবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস। ইট ও বোতল বৃষ্টি ঠেকাতে, হেলমেট ও ঢালের সংখ্যা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন।
সরকারি অফিসগুলিতে যাতে মোর্চার বনধের কোনওরকম প্রভাব না পড়ে, সে জন্যও পদক্ষেপ নিয়েছে প্রশাসন। অর্থ দফতরের তরফে নিদেশিকা জারি করে এদিন জানানো হয়েছে, যতদিন বনধ চলবে, ততদিন দার্জিলিং ও কালিম্পং জেলায় সব সরকারি অফিসে কর্মীদের হাজিরা বাধ্যতামূলক। কেউ অনুপস্থিত থাকলে, যেমন বেতন কাটা যাবে, তেমনই ছেদ পড়বে কর্মজীবনে। তবে বিশেষ পাঁচটি ক্ষেত্রে ছাড় মিলবে বলে জানিয়েছে সরকার।